৩১ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৯

নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকা প্রয়োজন : ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকা উচিত মন্তব্য করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলিস্টার ব্রুট বলেছেন, জাতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সব দলের নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলের কাছে এ মনোভাবই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, ২০১২ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ব্রিটেনের অবস্থান পরিষ্কার। সব রাজনৈতিক দল অংশ নিলেই নির্বাচন অর্থবহ হবে। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই সরকারের বৈধতা পোক্ত হবে। বৃহত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে সরকারের বৈধতা নির্ধারণ আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে তিন দিনের সফর শেষে গতকাল ব্রিটিশ হাইকমিশন কাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রুট এসব কথা বলেন। সফরকালে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেছেন। এ ছাড়া রাজধানীতে ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত স্বাস্থ্যবিষয়ক দুইটি প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিভক্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের জন্য ভালো সময় যাচ্ছে না। যুদ্ধের সম্ভাবনা কমিয়ে বিশ্বকে আরো নিরাপদ করে গড়ে তোলাই নিরাপত্তা পরিষদের কাজ। সিরিয়া বা মিয়ানমারের দিকে তাকালে দেখা যায়, পরিস্থিতি কতটা জটিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর শান্তির জন্য যে আকুতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হয়েছিলÑ তার অনেকটাই আমরা বিস্মৃত হতে বসেছি। তিনি বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন আমাদের পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছে। এতে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িতদের সম্পর্কে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক সরাসরি তথ্যউপাত্ত দেয়া হয়েছে। এ অপরাধগুলো বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। বিশ্বকে এখন নির্ধারণ করতে হবে তারা কী করবে।

আলিস্টার ব্রুট বলেন, কোনো প্রক্রিয়ায় রাখাইনে সহিংসতার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা যাবেÑ সে সম্পর্কে এ মুহূর্তে পরিষ্কার ধারণা নেই। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ধরনের অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে নিরাপত্তা পরিষদের রেফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের সম্মুখীন করা বেশ কঠিন। তবে সব দেশ এটিকে সমর্থন দেবে না। তিনি বলেন, বার্মার নিজস্ব তদন্ত চলছে, যার ফলাফল দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আর, একই সাথে বার্মাকে মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে আমলে নিতে হবে।
রাখাইন সহিংসতা রোধে নিষ্ক্রিয়তার জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি কতটা দায়ীÑ প্রশ্ন করা হলে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে সহিংসতার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। ব্রিটেন মনে করে এ নৃশংসতার বিরুদ্ধে সু চির আরো সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। এখন জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনের ব্যাপারে সু চির প্রতিক্রিয়া জানতে আমরা অপেক্ষা করছি।

রাখাইন সঙ্কটের সহজ কোনো সমাধান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন। তবে তার আগ পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। উদ্বাস্তুদের সহায়তায় ব্রিটেন এ পর্যন্ত দুই কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ব্রিটেন সক্রিয় রয়েছে।
আলিস্টার ব্রুট বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এ অঞ্চলের দেশগুলো সমান চোখে দেখে না। কেবল প্রত্যাবাসন চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে এ সঙ্কটের সমাধান সম্ভব না। এ জন্য আরো সমঝোতা ও আলোচনা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আইনে জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন গ্রহণযোগ্য নয়। তাই রোহিঙ্গাদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/344928