৩০ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:২৯

মহাসড়কে অনুমোদনহীন গাড়ি : বাড়ছে দুর্ঘটনা

ফিটনেস ও রুট পারমিট ছাড়াই অনুমোদনহীন গাড়ি চলছে মহাসড়কে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিয়ে এসব গাড়ি চলাচল করলেও সবাই নির্বিকার। আর এ কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা ঘটলেই টনক নড়ে প্রশাসনের।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার কারণ এসব গাড়ি। গাড়ি যারা চালাচ্ছে মহাসড়কে তাদের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাও নেই; যে কারণে মহাসড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে তারা খেই হারিয়ে ফেলে। এ কারণে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। গতকালও প্রভাবশালী এক মালিক নেতার গাড়ি এনা পরিবহনের বেপরোয়া গতিতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন।
গত সোমবার মানিকগঞ্জের ঘিওরে যে গাড়িটি পুলিশ কনস্টেবল আতাব আলীর পরিবারকে চাপা দেয় ওই গাড়িটির অনুমোদন ছিল না হাইওয়েতে চলাচলের। কিন্তু ওই গাড়িটি হাইওয়েতে যাত্রী বহন করে আসছিল দিনের পর দিন। ওই ঘটনায় আতাব আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার একমাত্র সন্তান ফাতেমা আক্তার (৬) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আতাব আলীর স্ত্রী শামীমার অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘিওর থানার এএসআই আমীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, এনএনবি পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১১-৮২৬০ ওই বাসটি চলাচলের অনুমতি রয়েছে ঢাকা শহরে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলার কোনো অনুমতি নেই। বাসটি উল্টোপথে গিয়ে আতাব আলীর মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়।
গতকাল ঢাকা-সিলেট রোডে পৃথক দু’টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। বি-বাড়িয়ার সরাইল ও নরসিংদীর শিবপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সরাইল উপজেলায় এনা পরিবহনের একটি বাস খাদে পড়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বৈশ্বামুড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাসের ২০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।
নরসিংদীর শিবপুরে এনা পরিবহনের যাত্রীবাহী আরেকটি বাসের চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই উত্তেজিত জনতা সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বাস ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পরে এনা পরিবহনের বাসটি আটক করে হাইওয়ে পুলিশ। পরিবহন সূত্র জানায়, এনা পরিবহনের মালিকের নাম খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। এ পরিবহন এর আগেও অগণিত দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে প্রমাণ নেই।

এক দিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অন্য দিকে লাইসেন্সবিহীন চালকদের কারণেই এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান। একের পর এক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে পরিবহন শ্রমিক নেতা আলী রেজা নয়া দিগন্তকে বলেন, চালকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পরিবহন শ্রমিকদের সবাই চোখ রাঙিয়ে নির্দেশ দেন। কিন্তু কেউ ভালোবেসে বলেন না তাদের কী করা উচিত। তাদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। আলী রেজা বলেন, তারা বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছেন। দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে যা উঠে এসেছে, তা হলো শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা। তাদের কোনো বেতনকাঠামো নেই, শ্রম ঘণ্টা নির্ধারণ নেই, ঈদে বোনাস নেই; যে কারণে তারা সব সময় হতাশাগ্রস্ত থাকেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। মিডিয়ায় এলে এগুলো আমরা জানতে পারি। নিহতের সংখ্যা বেড়ে গেলে মিডিয়ার দৃষ্টিটা একটু বেশি পড়ে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/344594