৩০ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:২৫

বিতর্কিত ইভিএম আসছে ॥ রাখা হচ্ছে না সেনা মোতায়েনের বিধান

# অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষিত
নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার ৩৫তম বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। আলোচনা শেষে ইসির অধিকাংশ সদস্য একমত হলে আজই চূড়ান্ত হবে খসড়া। তারপর আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এ খসড়াটি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধানটি সংযুক্ত করতেই তড়িঘড়ি করে ইসি আরপিও সংশোধনী খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। অথচ এ সংশোধনীতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের বিধানটি থাকছে না বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। এতে করে রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেছিল। আলোচনায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিধানটি আরপিওতে সংযুক্ত করার কথা বলেছিল। এমন কী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আরপিওতে সেনা মোতায়েনের বিধানটি সংযুক্ত করার বিরোধীতা করলেও তারা দন্ডবিধির বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মতামত দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করছে না বলে সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ইভিএম সংযুক্ত করার জন্যই আরপিও সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। অথচ কয়েকদিন আগেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, সময় স্বল্পতার কারণে আরপিও সংশোধনী কাজ থেকে পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন। এ ঘোষণা দেয়ার মাস খানেকের মধ্যেই ইসি আরপিও সংশোধনী চূড়ান্ত করতে তাড়াহুড়ো শুরু করে দিয়েছে। আর এতে ইভিএম সংযুক্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ইসিতে দ্বি-মত রয়েছে বলেও জানা গেছে। ইসি এতটাই তাড়াহুড়ো করছে যে, আইনে ইভিএম এর বিধান সংযুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই আগেই প্রায় চার হাজার কোটি টাকার দেড় লাখ মেশিন কেনার প্রস্তাব দিয়েছে ইসি। এ প্রস্তাবের আগে সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হয়নি। অথচ এই ইভিএম এর মাধ্যমে ডিজিটাল ‘কারচুপি’ করা সম্ভব বলে অভিযোগ উঠেছিল অনেক আগেই। আর এ জন্য এটিএম শামসুল হুদা কমিশন উদ্যোগ নিয়েও সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। তারপর রকিব কমিশনও এ সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বর্তমান কেএম নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ইভিএম ব্যবহারের বিরোধীতা করেছে। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের দু’একটি দল ইভিএম এর পক্ষে মতামত দিয়েছিল। তখন সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে ইভিএম চাপিয়ে দেয়া হবে না।’ কিন্তু এখন হঠাৎ করেই ইভিএম এর জন্য ইসি তোড়জোড় শুরু করেছে।

এদিকে আজকে আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত হলে আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিং এর জন্য। পরে কেবিনেটে অনুমোদন দিয়ে সংসদে যাবে আইনের খসড়াটি। এর আগেই এক তৃতীয়াংশ তথা ১শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইসি সচিব। গত মঙ্গলবার ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে ইসি দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। নির্বাচনের আগে আইন পাস, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো কমিশনের সক্ষমতা থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আইন পাস হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে কমিশন। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি হবে না। আর জাতীয় নির্বাচনের পরই সারা দেশের সব উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানেও ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম এক এগারোর সময়কার এটিএম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি মেশিন কেনা হয়। ব্যবহার করতে গিয়ে ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কেনা হয়। এগুলোও পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। শামসুল হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১ নং ওয়ার্ডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে।

পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় হুদা কমিশনের স্থলে বিধির নিয়মে নতুন কমিশন হিসেবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ী রকিব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায় ইসি। পরে কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণের আগে ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে, নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যায়। আর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেএম নূরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

http://www.dailysangram.com/post/343486