২৯ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ৮:৫৭

মানবাধিকার লঙ্ঘন জবাবদিহিতায় আনা হবে : মিয়ানমার প্রশ্নে ইইউ

মিয়ানমারে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র এ কথা জানান। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্যানুসন্ধান দলের সাথে ইইউর নির্বাহীরা চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে বৈঠক করবেন।
মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর জাতিসঙ্ঘ তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন সোমবার জেনেভা থেকে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই রাখাইনে অভিযান চালায়। দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে মনে করছে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্যানুসন্ধান দল। আইন প্রয়োগের নামে ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি এখনো খুবই ভয়াবহ। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন সময়োপযোগী হয়েছে। মিয়ানমার সম্পর্কে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না তা জোটভুক্ত দেশগুলোর সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে ইইউ।
রাখাইনে নৃশংসতা চালানোর অভিযোগে এর আগে মিয়ানমারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ইইউ। তবে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিং অংকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়নি। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে পারেÑ এমন আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে আগের পদক্ষেপগুলো নিয়েছিল ইইউ।
চীনের দ্বিমত : অন্য দিকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাখাইন সঙ্কট নিরসন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে চীন।

গতকাল রাজধানী বেইজিংয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও জাতিগত প্রেক্ষাপট খুবই জটিল। একপক্ষীয় সমালোচনা বা চাপ প্রয়োগ এই সঙ্কট নিরসনে সহায়ক হবে বলে চীন মনে করে না।
তিনি বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সংলাপ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ পরিস্থিতিতে সংলাপের মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশকে রাখাইন ইস্যু সমাধানে উৎসাহিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।
চীন বরাবরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে জোরালোভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। গত বছর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নৃশংসতার পর বিশ্ব জনমত ব্যাপকভাবে মিয়ানমারের বিপক্ষে চলে যায়। এর পরও রাশিয়া ও চীন জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রস্তাবকে আটকে দিচ্ছে। চীন ও রাশিয়া ভেটো ক্ষমতায় অধিকারী হওয়ায় তাদের অনাপত্তি ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাস করা সম্ভব নয়। দেশ দুইটির অনেক বিনিয়োগ রয়েছে মিয়ারমারে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে চীন ও রাশিয়ার কাছে মিয়ানমারের গুরুত্ব অনেক।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/344347