২৯ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ৮:৫৫

আর্থিক মহা কেলেঙ্কারির কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না সরকার

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি থেকে শুরু করে কয়লা লোপাটের মতো আর্থিক মহা কেলেঙ্কারির তদন্তে গঠিত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। ২০১০ সালে ঘটা শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি দোষীদের সনাক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে কিন্তু সে প্রতিবেদন আজও প্রকাশ করেনি সরকার। প্রকাশ করা হয়নি রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গঠিত সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদন। সম্প্রতি আলোচিত দুর্নীতির ঘটনা কয়লা গায়েব তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবেনা বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েও তা প্রকাশ করছেন না সরকার। থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার শঙ্কা ও জনরোষের ভয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হওয়ায় একের পর এক আর্থিক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সরকারের নিজেদের লোক জড়িত থাকার সন্দেহ জনগণের মনে দানা বাঁধছে।

জানা গেছে, দেশের শেয়ারবাজারে দুবার মহা ধসের ঘটনা ঘটেছে। আর এ দুবারই ঘটেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। একটি হলো ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম যখন ক্ষমতায় আসে। আর দ্বিতীয়টিও বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার এক বছর পর ২০১০ সালে। শেয়ারকারসাজির মাধ্যমে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। টাকা হারানোর যন্ত্রণা সইতে না পেরে অনেক বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করে। সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আর ঋণগ্রস্ত হয়ে এখনো অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন অনেক বিনিয়োগকারী। বিনিয়োগকারী ও সাধারণ মানুষের অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও পুঁজি হারানোর ভয়ের কারণে আজও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি শেয়ারবাজার।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়াতে থাকে এবং ২০০৯ এর মাঝামাঝি সময়ে ঐ বছরের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ে। ২০১০ সাল জুড়েই মার্কেট অস্থিতিশীল ছিল, ১৩ ডিসেম্বরে শেয়ার বাজারের সূচক ২৮৫ পয়েন্ট কমে ৮,৫০০ তে দাড়ায়। আবার ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি ধস নামে এবং একদিনেই আরো ৫৫১ পয়েন্ট কমে শেয়ার বাজারের ৫৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দর পতনের ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ লুটপাট ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচারের দাবিতে ফুঁসে ওঠে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীসহ সর্বস্তরের জনগণ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চলতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘটনার সাথে জড়িত দোষীদের শাস্তির সুপারিশ করে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত শেয়ারবাজার-বিষয়ক তদন্ত কমিটি ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, শেয়ারবাজারে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িত থাকলেও তাঁরা মূলত ব্যবসায়ী। বাজারকেন্দ্রিক বড় অঙ্ক হাতিয়ে নিতেই তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করেছেন। প্রতিবেদননে বলা হয়, অভিনব কৌশল, নতুন উদ্ভাবনী ও লোভের ফাঁদ তৈরি করে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে যোগসাজশে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সারা দেশে বাজারের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। রোড শো ও গণমাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে শেয়ারের দৈনন্দিন কেনাবেচাকে লোভনীয় করা হয়েছে। এসইসির শীর্ষ কর্মকর্তা, ডিএসই/সিএসইর সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশিষ্টজনদের এই প্লেসমেন্ট শেয়ার দিয়ে শুধু সিন্ডিকেট শক্তিশালী করা হয়নি, সমাজের উচ্চস্তরকে দুর্নীতির জীবাণু দ্বারা সংক্রমিতও করানো হয়েছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া এই দুষ্টচক্র ভেদ করে পুঁজিবাজারে সুস্থতা আনা সম্ভব হবে না।

আইপিওর আগে প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্ট বিক্রি, প্লেসমেন্টের কার্ব বাজার, প্রেফারেন্স শেয়ার, সরাসরি তালিকাভুক্তি, রিপিট আইপিও, কোম্পানি সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন, ঋণকে শেয়ারে রূপান্তর, বুক বিল্ডিং ইত্যাকার দেশের শেয়ারবাজারের জন্য নতুন ও অভিনব সব প্রস্তাব এনে প্রাথমিক বাজারকে অতি মূল্যায়িত করে এক দফা অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। আর সেকেন্ডারি বাজারে এই অতি মূল্যায়ন ধরে যোগসাজশ ও গোষ্ঠীবদ্ধ লেনদেন করে আরেক দফা মূল্য বাড়ানো হয়েছে। আর সর্বশেষ সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিসহ কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংকে সংরক্ষিত অমনিবাস হিসাব থেকে বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে বাজারে পতন ঘটানো হয়েছে।
শেয়ার কেলেঙ্কারির এসব কৌশলের নেপথ্যে ও সামনের সারিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন বিএসইসির সাবেক সদস্য সাহাবুব আলম, সরকারি দলের বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল, এবং ছিয়ানব্বই সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান এবং ইয়াকুব আলী খোন্দকার, গোলাম মোস্তফা, রকিবুর রহমানের নিকটাত্মীয় আরিফুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন। এর বাইরে আছে বেশ কয়েকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। এবারের পুঁজিবাজার ধস ছিয়ানব্বই সালের ধসের মতো নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এবং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত।

এরপর অর্থমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে স্টক মার্কেট পতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতির ফাঁকা বুলি দেন। একই সংবাদ সম্মেলনে পুনঃ তদন্ত না করে প্রকৃত দোষীদের নাম প্রকাশ না করা বা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা অর্থমন্ত্রী বললেও এখন পর্যন্ত কোন পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তথাপি পরবর্তীতে হাইকোর্ট পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে একই বছরের ১৯ এপ্রিল রায় দেয়। পরবর্তীতে তা জনগণের সামনে খন্ডিত আকারে প্রকাশ পায়। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময় একইভাবে শেয়ার বাজারে দস্যুতার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তার কোনো বিচার হয়নি।
গতবছর বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির আলোচিত দুই মামলা বাতিল করা হয়েছে। এ দুই মামলায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর হোল্ডিংস, ব্যক্তি হিসেবে এ এস এফ রহমান, সালমান এফ রহমান ছাড়াও এ বি সিদ্দিকুর রহমান ও ডি এইচ খান (মৃত) আসামী ছিলেন। সালমান এফ রহমান বর্তমানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

এরপর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চুরি। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন (৮ কোটি ১০ লাখ) ডলার বাংলাদেশী টাকায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ফিলিপাইনের হ্যাকাররা। এ ঘটনায় শুধু দেশে নয় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সরকার এ মহা দুর্নীতির খবর ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। ঘটনার এক মাস পর ফিলিপাইনের সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে দেশের মানুষ জানতে পারে এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা।

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তথ্য ফাঁসে বাংলাদেশ ব্যাংকে তোলপাড় শুরু হয়। এফবিআই বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার রিজার্ভ চুরিতে ব্যাংকটির ভেতরকার ব্যক্তিদের যোগসাজশ ছিল। এবং এফবিআইয়ের এজেন্টদের দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ তারা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এফবিআইয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গত ১৫ মার্চ ২০১৬ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তার তদন্তে ঘটনায় জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই কয়েকজনের নাম উঠে আসে। তিনি অবশ্য বলেছেন, এ ঘটনায় কারা সত্যিকারভাবে জড়িত তা চিহ্নিত করার দায় সিআইডি’র। আমাদের ইনভেস্টিগেশন তো কোনো ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন না। এটা প্রশাসনিক। তদন্ত কমিটি গত ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই সময়ই জানান, বাজেটের কারণে তিনি ব্যস্ত। বাজেটের পর প্রতিবেদন দেয়া হবে। গত ২১ জুলাই অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। গত ৩০ মে ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তা পড়ে দেখে প্রকাশ করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী মুহিত। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, বাজেট প্রস্তাব পেশের ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে। কিন্তু দীর্ঘসময় পরও ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। জনগণের সম্পদ চুরি হয়ে গেলো অথচ ঘটনার সাথে কারা জড়িত আজও জানতে পারেনি দেশের জনগণ।

চুরির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় করা মামলাটিতে সরাসরি কাউকে আসামী করা হয়নি। সিআইডি দেশের আদালতে প্রতিবেদন দিতে না পারলেও সম্প্রতি ফিলিপিন্সের আদালতে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সিআইডির দুই কর্মকর্তা ফিলিপিন্সের আদালতে সায় দিয়ে এসেছেন। এদিকে হ্যাকিং করে রিজার্ভ চুরির দুই বছর পার হলেও এখনো এই ঘটনায় ব্যাংকের ভেতরে কারা জড়িত তা বের করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। এ বিষয়ে সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। দোষীদের চিহ্নিত করতে এই দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধীদের ছাড় পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও এখন সামনে আসছে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন ২৫ বারের মতো পিছিয়েছে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পুনরায় পিছিয়ে আজ বুধবার (২৯ আগস্ট) ধার্য করেছে আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম এ কে এম মাঈন উদ্দিন সিদ্দিকী এ নতুন তারিখ ধার্য করেন।

এদিকে সম্প্রতি সংঘটিত সবচেয়ে আলোচিত দুর্নীতির ঘটনা হলো দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা ‘গায়েবের’ ঘটনা। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বিপুল পরিমাণ কয়লার হদিস না পাওয়ার কথা জানা যায়। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত খনি থেকে উত্তোলিত দেড় কোটি টন কয়লার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টনের মতো কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ করা হবে না বলে গত রোববার সচিবালয়ে সাংবদিকদের জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, আমরা তদন্তের দুটি রিপোর্ট পেয়ে গেছি ইতিমধ্যে। কারা কারা জড়িত এবং কীভাবে হয়েছে বা কীভাবে করতে যাচ্ছে সে রিপোর্ট জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি কোরো রকম দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। এরপর তিনি সাফ জানিয়ে দেন কয়লা চুরির ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ করা হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার শঙ্কা ও জনরোষের ভয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। কেননা সরকার মনে করছেন নিজের দলের নেতাদের নাম আসলে সরকার পরিচালনায় বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। তারা বলেন, বর্তমানে সুশাসনের বড় অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে জাল-জালিয়াতির প্রবণতা বেড়ে গেছে। যারা জালিয়াতি করছে, তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হওয়ায় একের পর এক আর্থিক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় নিজেদের লোক জড়িত থাকার সন্দেহ জনমনে ক্রমেই দানা বাঁধছে।
এ ব্যাপারে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা লোপাটের সাথে শুধুমাত্র কর্মকর্তারা জড়িত নয়, এর সাথে মন্ত্রী-এমপি ও উপদেষ্টারাও জড়িত। তাদেরও বিচার করতে হবে। কয়লা লোপাটের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গণআদালতে তাদের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা লুণ্ঠনের ঘটনা নতুন নয়। সারাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যে লুটপাট চলছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা লুণ্ঠন তারই একটি অংশ। শুধু কয়লা লুণ্ঠন হয়নি, ব্যাংক থেকে টাকা লুণ্ঠন, দেশের বিভিন্ন স্বার্থ চুক্তির মাধ্যমে বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে কমিশন বাণিজ্য চলছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়।

http://www.dailysangram.com/post/343353