২৮ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:১০

নাফ নদের ওপারে জড়ো তিন সহস্রাধিক রোহিঙ্গা

নির্যাতনের মুখেও জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে আবারো নতুন করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করছেন রোহিঙ্গারা। ফলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে সীমান্তের নাফ নদের ওপারে নাইক্ষ্যংদিয়া নামক চরে গত দুই দিন ধরে তাঁবু করে অবস্থান করছেন। রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছার পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে সীমান্তরক্ষী ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট নাফ নদ অতিক্রম করে টেকনাফ সীমান্তে হঠাৎ রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা প্রবেশের চেষ্টা করলে বিজিবি প্রতিহত করে তা ফেরত পাঠিয়েছিল। ওই নৌকায় ১২ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। এতে তিনজন নারী, দুইজন পুরুষ এবং সাতজন শিশু-কিশোর ছিল বলে স্থানীয় বিজিবি সূত্র জানায়।
গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে সরকারি বাহিনীর দমন নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের পরও কিছু রোহিঙ্গা মাটি কামড়ে নিজ জন্মভূমি রাখাইনে থেকে যায়। পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হলে তারা বেঁচে থাকার তাগিদে ব্যবসাবাণিজ্য ও আয়-রোজগারেরও চেষ্টা করেন। কিন্তু গত এক মাস ধরে এসব ব্যবসায়ীর ওপর মানসিক নিপীড়ন চালাচ্ছে প্রশাসন। বিশেষ করে বুচিডং, রাচিডং ও মংডু শহর এলাকায় কোনো রোহিঙ্গাকে কোনো ধরনের ব্যবসা করতে দিচ্ছে না। ব্যবসা ও আয়-রোজগারের জন্য অনৈতিক এনভিসি নিতে চাপ প্রয়োগ করছে রাখাইন প্রশাসন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আবারো রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসবে এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই থাকা ১১ লাখ ১৬ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে সেখানকার অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসবে।
রোহিঙ্গাদের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে যেসব রোহিঙ্গা এখনো রয়ে গেছে তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে চাপ প্রয়োগ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে নাফ নদের মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা নাইক্ষ্যংদিয়া নামক চরে দু’দিন ধরে তাঁবু করে অবস্থান করছে বলেও জানা যায়।
রোহিঙ্গা সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাহাড়ের পশ্চিম ও পূর্ব তীরের বিভিন্ন গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ের পূর্ব পাড়ের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা আলিয়ং, গুদামপাড়া, জংশং, পুইমালী ও সিন্দিপ্রাং এলাকায় যেসব রোহিঙ্গা বসতি রয়েছে সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ওপর নতুন করে নির্যাতন চালাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানকার রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকিসহ তাদের বাড়ির গবাদিপশু ও গোলার ধান লুট করে নিয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওইসব রোহিঙ্গাকে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে বলে জানা যায়।
মিয়ানমার সেনাদের এমন আচরণে সেখানকার বসবাসরত রোহিঙ্গারা তাদের ওপর আবারো সেনা ও মগদের পরিকল্পিত বর্বর পাশবিক নির্যাতনের আশঙ্কা করছেন।
গত বছর সঙ্ঘাতের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গার মাধ্যমে রাখাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, নতুন করে শুরু হওয়া নির্যাতন ও হুমকির মুখে ইতোমধ্যে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে আপতত নাইক্ষ্যংদিয়া নামক চরে জড়ো হয়েছেন। গত দুই দিনে নাইক্ষ্যংদিয়ায় জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাও বাড়ছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ দিকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে নাফ নদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সীমান্তে বিজিবির টহল ও নজরদারি আরো বাড়ানো হয়েছে।
অপর দিকে মিয়ানমারের সীমান্ত শহর মংডুতে রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খুলতে দিচ্ছে না প্রশাসন। বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাসদস্যরা প্রতিনিয়ত হেনস্থা করছে ব্যবসায়ীদের। রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নামীয় অভিবাসন কার্ড না নেয়ায় চাপ সৃষ্টি করছে কর্তৃপক্ষ।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/344109