২৭ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:৩২

সেই বাস ছিল ভাঙ্গারি হিসেবে নিলামে কেনা!

বডি আর রংচং লাগিয়ে মহাসড়কে চলছিল ৫ বছর ধরে

নাটোরের বনপাড়ায় লেগুনার সঙ্গে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত বাসটি ছিল নিলামে স্ক্র্যাপ (ভাঙ্গারি) হিসেবে বিক্রি করা অচল বাস। ভাঙ্গারি মাল হিসেবে বাসটি কিনে কিছু মেরামত আর রংচং করে সেটি মহাসড়কে নামানো হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে রুট পারমিট ও ফিটনেসের কাগজপত্র ছাড়াই বাসটি মহাসড়কে চলাচল করছিল। এর মালিক বগুড়ার মঞ্জু সরকার। তিনি এখন বগুড়ায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। রবিবার দিনভর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতাদের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৬৬৯) একসময় বিআরটিসির মালিকানাধীন ছিল। কয়েক বছর আগে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বাসটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর স্ক্র্যাপ (ভাঙ্গারি) মাল হিসেবে সেটি নিলামে তোলা হয়। মঞ্জু সরকার সেটি কিনে নেন। এরপর তিনি গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি না করে সেই অচল বাসে নতুন করে বডি লাগিয়ে নেন। এরপর করা হয় রং। চ্যালেঞ্জার নামে পাঁচ বছর আগে রুট পারমিট ও ফিটনেস ছাড়াই বগুড়া-কুষ্টিয়া রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে বাসটি।

বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) মফিজ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিলামে কেনা বাস কোনো রুটে চলাচল করার সুযোগ নাই। কারণ একটি বাস সড়কে চলাচল করার অনুপযোগী হওয়ার পরই সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নিলামে দেওয়া হয়। নিলাম ক্রেতা বাসটি ভেঙে ওজন দরে বিক্রি করার কথা।’ তিনি জানান, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর গাড়ি ছিল। প্রায় পাঁচ বছর আগে সেটি নিলাম করা হয়। নিলাম করার বিষয়টি অন্য প্রশাসনের আওতায় হওয়ার কারণে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তাঁদের জানা নেই। তবে মফিজ উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন যে আগে ‘চ’ সিরিয়ালের গাড়িগুলো বিআরটিসির ছিল।

বিআরটিসির একজন কর্মচারী বলেন, বাসটি দেড় লাখ টাকায় নিলামে কিনেছিলেন মঞ্জু সরকার। বাসটি একেবারেই অচল ছিল। পরে সেটি কিভাবে মেরামত করে মহাসড়কে নামানো হলো তা তাঁদের জানা নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) বগুড়ার ইন্সপেক্টর ফয়েজ আহম্মেদের কাছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি বগুড়ার। এটি কাগজপত্রে ‘ফেল’ ছিল। তবে স্ক্র্যাপ মাল হিসেবে সেটি কেনা হয়েছিল কি না তা তাঁর জানা নেই।
নাটোরের বনপাড়ায় ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পর বাসটির মালিককে আটক করেছে বগুড়ার পুলিশ। তবে চালক ও হেলপারকে আটক করতে পারেনি। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ বগুড়া শহরের মধ্যপালশা এলাকায় বাড়ি থেকে চ্যালেঞ্জার বাসের মালিক মঞ্জু সরকারকে আটক করে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। মঞ্জু সরকার পুলিশকে জানান, তাঁর বাসের চালক শামীমের বাড়ি শহরের মালগ্রামে এবং হেলপার কমলের বাড়ি সদরের গোকুল গ্রামে। তাঁর তথ্য অনুযায়ী পুলিশ চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালায়। গতকাল বিকেলে হেলপারকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও চালককে পাওয়া যায়নি।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর শনিবার রাত থেকে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন বাস ছাড়াও লেগুনা, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ‘ভটভটি’ চলাচল বন্ধ করতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত এ ধরনের ৫২টি যানবাহন আটক করা হয়েছে। এতে করে যানবাহন সংকট দেখা দিয়েছে। আটক হওয়ার ভয়ে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল কমে গেছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন ও ফিটনেসবিহীন সব ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/08/27/673234