২৭ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:১৬

জাহাজ জটে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা

ইয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনারের স্তূপ

কোরবানির ঈদের ছুটি শেষ হলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জীবনযাত্রা। শিল্পের চাকা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিপণ্য ডেলিভারিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে আমদানিপণ্য বোঝাই কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। আমদানি কনটেইনার রাখার ইয়ার্ডগুলো এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে আমদানিপণ্যবাহী কনটেইনার ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পৌনে ৭ হাজার টিইইউএস আমদানিপণ্য পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমনি পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল যেমন বেড়েছে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে জাহাজ জটের। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী গতকাল রোববার চট্টগ্রাম বন্দরে ৮৫টি কর্মক্ষম (ওয়ার্কেবল) জাহাজের মধ্যে ৪৮টিতে কাজ হলেও ৩৭টি জাহাজ অলস বসে ছিল। এর মধ্যে অলস বসে থাকা কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা ছিল ২৩টি এবং এসব জাহাজে প্রায় ১৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঈদের ছুটি শেষ হলেও বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানাসহ শিল্প কারখানার বেশির ভাগেরই এখনো ছুটি শেষ হয়নি। ফলে বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারিতে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দেয়। সূত্র মতে, দৈনিক যেখানে প্রায় ৪ হাজার টিইইউএসের (২০ ফুট সাইজের কনটেইনার হিসেবে) বেশি কনটেইনার ডেলিভারি হয় সেখানে গতকাল ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ১৩১৮ টিইইউএস কনটেইনার, যা এর আগের দিন ছিল ৯৪৪ টিইইউএস।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৯৮ টিইইউএস কনটেইনার জাহাজ থেকে খালাস হলেও ডেলিভারি হয়েছে ১৩১৮ টিইইউএস।
সূত্র জানায়, ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন গত ২০ আগস্ট বন্দর ইয়ার্ডে যেখানে আমদানিপণ্য বোঝাই ৩৪ হাজার ৮৪৩ টিইইউএস কনটেইনার ছিল, গতকাল রোববার তা ছিল ৪৪ হাজার ৩০৪ টিইইউএস। এ ছাড়া খালি কনটেইনার ছিল ১ হাজার ৫১৫ টিইইউএস। এর পাশাপাশি নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল ৬ হাজার ৩৩৩ টিইইউএস।

বন্দর ইয়ার্ডে আমদানিপণ্য বোঝাই কনটেইনার ধারণক্ষমতা রয়েছে ৩৭ হাজার ৬২০ টিইইউএস। সূত্র জানিয়েছে, বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার ক্যাপাসিটি হিসাব করা হয় সিক্সহাই হিসেবে (প্রতি ভাজে ৬টি কনটেইনার)। সে কারণে বাস্তবে বন্দর অভ্যন্তরে এখন কনটেইনার মুভমেন্টই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। সূত্র মতে, জেটিতে নোঙররত ৯টি কনটেইনার জাহাজ এবং বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ ২৩টি জাহাজ থেকে নামার অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ২০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার। এ ছাড়া বন্দরের জিসিবি (জেনারেল কার্গো বার্থ) এরিয়ায় কনটেইনারের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক আমদানিকৃত কাঠের রাউন্ডলগ, স্টিল বিলেট, স্টিল কয়েল, বিভিন্ন কৃষিজপণ্যসহ খোলা পণ্যের স্তূপ জমেছে বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টদের মতে, যথাযথভাবে হ্যান্ডেল করা না গেলে সৃষ্ট জট নিরসনে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট থেকে শুরু হয় কোরবানির ঈদের ছুটি। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ শিল্প কারখানায় ঈদের ছুটি শেষ না হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় ডেলিভারিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/343817