দৌলতদিয়ায় ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি ;নয়া দিগন্ত
২৭ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:১৪

দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

১০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা আদায়

দৌলতদিয়ায় প্রতিদিন দুপুর গড়ালেই ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। দুপুরের পর দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গাড়িগুলো এক সময় এসে পড়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ৮-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা লাইনে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও চালকেরা। দু-তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে ঘাটে পৌঁছাতে হয়। অথবা রিকশা ভ্যানে ১০ টাকার ভাড়া ৮০- ১০০ টাকা দিয়ে চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে কয়েকগুণ সময় ব্যয় করে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছতে হয়। নয়তো দালালের খপ্পরে পড়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি পার করার জন্য কাটতে হয় ফেরির টিকিট। তবে ফেরিঘাট অপেক্ষা লঞ্চঘাটেই যাত্রীর চাপ বেশি দেখা যায়।

প্রিয়জনের সাথে ঈদুল আজহার আনন্দ শেষে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। ঈদ-পরবর্তী কয়েকদিন দৌলতদিয়াঘাট ফাঁকা থাকলেও শনিবার বিকেলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে দৌলতদিয়ায় যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। দৌলতদিয়া ঘাটে দক্ষিণ বঙ্গের জেলাগুলো থেকে রাজধানী ঢাকায় ফেরা মানুষের উপচেপরা ভিড় দেখা যায়। জানা গেছে, প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার ৪০-৫০ হাজার যাত্রী কর্মস্থলে ফিরছেন। তবে ফেরিঘাট অপেক্ষা লঞ্চঘাট দিয়েই বেশি যাত্রীদের নদী পার হতে দেখা যায়।

জানা যায়, দিনের শুরুতে যানবাহনের সারি একটু ছোট থাকলেও বিকেলের পর থেকে পশু বোঝাই ট্রাকের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এতে বিকেল থেকে সারা রাত ৮-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ এলাকায় বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক স্থাপিত ওয়েট স্কেল (ট্রাক ওজন নির্ণয় যন্ত্র) এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ওই স্কেলে ট্রাক পরিমাপ করতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। আর এই পরিমাপ করতে গিয়েই সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে চরম সমস্যায় পড়ে পাশে থাকা গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরা। এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালে প্রবেশের একমাত্র পথ। সেই সাথে যানজটে আটকে থাকা যানবাহনের তীব্র হর্নের শব্দে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা।

গতকাল রোববার দুপুরের দিকে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাট জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ বাজার পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কে প্রায় এক হাজার যানবাহনের লম্বা লাইন। গোয়ালন্দ বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা, ভ্যান ও মাহেন্দ্র চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে হামেদ মৃধার হাট হয়ে যাত্রীদের দৌলতদিয়া ঘাট পৌঁছে দিচ্ছে। এতে করে যাত্রীদের কাছ থেকে মাথা পিছু আদায় করা হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। অথচ অই বাসস্ট্যান্ড থেকে দৌলতদিয়া ঘাটের ভাড়া মাত্র ৫-১০ টাকা।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাট অপেক্ষা লঞ্চঘাটে যাত্রী সমাগম বেশি। ফেরি পারাপার বাসের যাত্রীরাও এখন দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছার লক্ষ্যে লঞ্চে পার হচ্ছেন। দুর্বল ইঞ্জিন নিয়ে পদ্মার প্রচণ্ড স্রোত উপেক্ষা করে নদী পার হতে এ রুটের ফেরিগুলোর দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। ফলে নদী পার হতে যাত্রীদের অধিক সময় নদীতেই থাকতে হয়। যাত্রীরা দীর্ঘ্য সময় ফেরির অপেক্ষায় না থেকে লঞ্চে নদী পার হওয়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। যদিও নদী পথে লঞ্চ অপেক্ষা ফেরিই নিরাপদ বেশি। তবুও অনুকূল আবহাওয়া মনে করে দ্রুত নদী পার হওয়াসহ সব দিকেই পদ্মা নদী পার হতে লঞ্চেই এখন যাত্রীরা বেশি ভিড় করতে দেখা যায়। ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোহর ও খুলান থেকে আসা জাবেদ মিয়া, আফসার উদ্দিন মালথে ও করিমন বিবি বলেন, ফেরিতে সময় বেশি লাগায় তারা লঞ্চে নদী পার হবেন।
দৌলতদিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, ঈদ-পরবর্তী গত কয়েক দিন ঘাট এলাকায় যানজট তেমন একটা ছিল না। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় কর্মস্থল ফেরা মানুষের চাপ হঠাৎ বেড়ে গেছে। বর্তমান এ রুটে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। তবে সময় একটু বেশি লাগলেও নিয়মিত যানবাহন পার হচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/343818