ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে ফের ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন মানুষজন। ছবিটি গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে তোলা ; নাসিম সিকদার
২৭ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:১১

ভোগান্তি নিয়ে ফিরছে মানুষ : ঢাকায় নেমেই যানবাহন সঙ্কট

চরম ভোগান্তি সাথে নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন শেকড়ের টানে গ্রামে যাওয়া মানুষ। তবে বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। দৌলতদিয়া ও কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে তীব্র যানজটে সারা রাত বসে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। ভ্যাপসা গরম, মশার উপদ্রব ও রাস্তায় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকায় কষ্টের শেষ ছিল না যাত্রীদের। তবে অন্যান্য জেলা থেকে ট্রেন ও লঞ্চে করে ফেরা যাত্রীদের পথে খুব বেশি সমস্যা না থাকলেও ঢাকায় ফিরে যানবাহন সঙ্কটে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। তুলনামূলকভাবে যানবাহন কম থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সি ক্যাবগুলোর দৌরাত্ম্য আগের অবস্থানে ফিরে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। যাত্রীরা জানান, সিটিতে চালিত বিভিন্ন রুটের লোকাল ও সিটিং বাস এখন অনেক কম, যা পাওয়া যাচ্ছে বা আবার চার-পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে। অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন থাকলেও প্রয়োজনের চেয়ে তার সংখ্যাও অনেক কম। গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ঝিনাইদাহ থেকে আল মোবারাকা পরিবহনে ঢাকায় ফেরা খালিদ জানান, আগের রাত সাড়ে ১১টায় তিনি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে পারের অপেক্ষায় থাকা শত শত গাড়ির চাপে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ আট ঘণ্টা পর অর্থাৎ পরদিন সকাল সাড়ে ৭টায় তাদের বাস ফেরিতে উঠতে পারে। এর মধ্যে রাস্তায় বাসের মধ্যেই কাটাতে হয় সারারাত। ভ্যাপসা গরম ও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে হয়। এ ছাড়া রাস্তার পাশে কোনো টয়লেট না থাকায় নারী যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। সাতক্ষীরা থেকে একে ট্রাভেলসের একটি বাসে আসা ইব্রাহিম খলিল জানান, শনিবার বিকেল ৫টায় তাদের বাস দৌলদিয়া ঘাটে ফেরির জন্য লাইনে দাঁড়ায়। কিন্তু লাইন আর শেষ হচ্ছিল না। যতবার ভাবি আর ঘণ্টাখানেক পরেই হয়তো ফেরিতে উঠতে পারব, কিন্তু সেই সুযোগ আর হচ্ছিল না। অবশেষে রাত সাড়ে ৩টায় তাদের বাস ফেরিতে উঠতে পারে। তবে ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয়নি তাদের।

যশোর থেকে ঈগল পরিবহনে আসা মিলন জানান, ফেরিঘাটে চরম ভোগান্তির পর গাবতলী টার্মিনাল থেকে বাসায় ফিরতে আবারো ভোগান্তি পোহাতে। গাবতলী থেকে রামপুরাগামী বাস নেই বললেই চলে। অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন উবার কল করেও ভালো রেসপনস পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ধারণা করছেন, যাত্রীর চেয়ে উবারের গাড়ি অনেক কম। আর এই সুযোগে সিএনজি অটোরিকশাগুলোও আগের চরিত্রে ফিরে গেছে। দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি তাদের পছন্দমতো জায়গা ছাড়া কেউ যেতে চাইছে না।
গতকাল ভোরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বরিশাল পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ভোরে সদরঘাট পৌঁছে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এত ভোরে বাসায় ফিরতে যানবাহন না পেয়ে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। স্ত্রী সন্তান নিয়ে অনেককেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। দু-একটি বাস, সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশা পাওয়া গেলেও ভাড়া দাবি করা হয়েছে হিসাব ছাড়া। শামীম সিদ্দিকী নামে এক যাত্রী জানান, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য ৭ নম্বর পরিবহনের একটি বাসে ভাড়া চাওয়া হয়েছে ৮০ টাকা করে। অথচ অন্য সময় এ ভাড়া মাত্র ১০ টাকা। ৫০০ টাকার নিচে কোনো সিএনজি অটোরিকশা মুভ করতে চাইছে না।
এবারের ঈদুল আজহায় সরকারি ছুটি ছিলো ২১, ২২ ও ২৩ আগস্ট অর্থাৎ মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার। সাথে ২৪ ও ২৫ আগস্ট শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ছুটি আরো দুই দিন বেড়ে যায়। হিসাবে গতকাল রোববার ছিল অফিস আদালতের প্রথম কর্মদিবস। সে কারণে অনেকেই শনিবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন এই ভেবে যে, পর দিন ভোরে ঢাকায় পৌঁছে তারা অফিস করতে পারবেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/343802