ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানী ঢাকায় ফিরছেন অনেকেই। ছবিটি গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
২৬ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৪

বাসের টিকিটের দাম দ্বিগুণ, ট্রেনের নেই

বিভাগীয় নগরী রংপুরে ঈদ করতে আসা বিভিন্ন পেশার হাজারো মানুষ বাস ও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে কর্মস্থলে ফিরে যেতে সমস্যায় পড়েছে। রংপুর-ঢাকা রুটে বাসের টিকিটের দামও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন বাস মালিকরা। তাঁরা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করায় যাত্রীরা বাসের কাউন্টারগুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ৫০০ টাকার টিকিট এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আন্ত নগর রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটও কাউন্টারে নেই, তবে চড়া দামে বিক্রি করছে কালোবাজারিরা।

ঈদের ছুটির সঙ্গে এবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে গতকাল শনিবার থেকে তা শেষ হয়েছে। আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে অফিস-আদালত। সে কারণে গতকাল রংপুর থেকে ঢাকায় ফিরতে বাস-ট্রেনের কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। যাত্রীরা জানায়, ঈদের ছুটির পর প্রথম অফিস করতেই হবে। এর ওপর সন্তানদের স্কুল-কলেজ খুলতে যাচ্ছে। তাই দুর্ভোগ মেনে নিয়েই ঢাকায় ফিরতে হবে। কিন্তু ঠিকমতো গাড়ি না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় রংপুরের প্রায় চার লাখ মানুষ লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। তাদের অর্ধেকই বিভিন্ন গার্মেন্টে নারী শ্রমিক। ঈদের সময় এই বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রংপুরে আসে। কিন্তু ঈদের পর কর্মস্থলে ফিরে যেতে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়।

যাত্রীরা অভিযোগ করে, প্রতিবছর ঈদের পর রংপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হলেও এবার ঈদের অনেক আগেই বাসের কাউন্টারগুলোতে কোনো টিকিট নেই বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ঢাকা থেকে কষ্ট করে বাড়িতে এসে ঈদ করলেও সময়মতো তাদের ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কাউন্টারগুলোতে টিকিট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে দ্বিগুণ দামে বাস-ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করে, সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীসহ এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সেই ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখিয়ে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। আব্দুর রহমান নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ঢাকা যাওয়ার জন্য সকাল ১১টায় কাউন্টারে এসেছেন। এসে দেখেন কোনো বাসেরই টিকিট নেই। তবে দ্বিগুণ দাম দিয়ে অনেকে টিকিট নিচ্ছে। এ বিষয়ে কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলে জানানো হয়, ‘এই দামে নিলে নেন, না হলে চলে যান।’ সাহেব আলী নামের অপর এক যাত্রী ঢাকায় যাওয়ার জন্য কাউন্টার থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছেন। অথচ ঈদের আগে রংপুর থেকে ঢাকায় যেতে বাসের টিকিটের মূল্য ছিল ৫০০ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, সারা দেশের মতো রংপুরেও ঈদ উপলক্ষে তিন-চার দিন অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হবে। এর কারণ ঢাকায় যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পর সেই গাড়ি বর্তমান সময়ে রংপুরে খালি আনতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ঢাকা থেকে ফেরত আসার জন্য গাড়ির তেল খরচটা নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে রংপুরের কামারপাড়ায় ঢাকা কোচস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। মহাসড়কে যানজটসহ নানা কারণে সময়মতো গাড়ি না আসায় যাত্রীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় রয়েছে। গার্মেন্ট কর্মকর্তা হাবিব বলেন, ‘ঈদ করতে এসে বিপাকে পড়েছি। গাড়ির টিকিট না পাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে রেখে যাচ্ছি। চাকরি বাঁচাতে যেভাবেই হোক আমাকে যেতেই হবে।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার বলেন, পরীক্ষা আছে, সারা রাত বসে থেকে হলেও গাড়ি পেতেই হবে। ঢাকায় প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করা বেলাল হোসেন জানান, বাস-ট্রেনের টিকিট মিলছে না। গাড়ি পেতে সকাল থেকে কোচস্ট্যান্ডে বসে আছেন তিনি।

এমন অবস্থা বিরাজ করছে রংপুর থেকে ঢাকাগামী এসআর ট্রাভেলস, টিআর ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, আগমনী এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহনসহ সব গাড়ির কাউন্টারে। বাস কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিচ্ছে, আগামী ৩১ আগস্টের আগে রংপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার কোনো টিকিট নেই। এসআর ট্রাভেলসের সুপারভাইজর স্বাধীন জানান, প্রতি ঈদে এমনিতে যাত্রী পরিবহনে হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর মহাসড়কে যানজটের কারণে বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। গাড়িগুলো সময়মতো আসতে না পারায় রংপুর থেকে যাত্রী নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে গতকাল সকালে গিয়ে দেখা যায় কোনো টিকিট নেই। অথচ প্রকাশ্যেই টিকিট বিক্রি করছে কালোবাজারিরা। এ ব্যাপারে রংপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ‘মূলত টিকিট নেই। কোনো যাত্রী যাত্রাবিরতি করে টিকিট বিক্রি করলে তার দায় আমাদের নেই।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2018/08/26/672938