২৬ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৩১

চামড়া বাজারে ধস

‘চামড়া নেবে গো চামড়া’-এমন হাকডাক শোনা গেছে ঈদের দিন প্রায় সবখানে। কোরবানির গরু ও ছাগলের চামড়া বিক্রির জন্য স্মরণকালে এবারের মতো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সাধারণত ক্ষুদে ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কোরবানির দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেন। এবার ঘটেছে উল্টোটা। চামড়া নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েন লোকজন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতিম-মিসকিন ও মাদরাসা। যারা প্রতিবছর কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করে বছরের একটা সময়ের খরচ নির্বাহ করে থাকে। চামড়া বাজারে ধস নেমেছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়া নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয়েছে। কোথাও সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হয়নি। ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে পারেননি ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। ধারদেনা করে যা চামড়া ক্রয় করেছেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা তাতে লাভ তো দুরের কথা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

যশোরের রাজারহাট ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে হাজির হয় এই হাটে। রাজারহাটের এই চামড়াহাটকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে এই মোকামে। প্রতি কোরবানীর ঈদে রাজারহাটে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। ঈদের পর শনিবারের প্রথম হাটে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে খুবই কম। ছোট গরুর চামড়া ২শ’ টাকা বড় গরু ৪শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা, আর ছাগলের চামড়া গড়ে ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গদকাল রাজারহাটে গরুর চামড়া প্রায় ৬০হাজার আর ছাগলের চামড়া প্রায় ৪০হাজার বাজারে ওঠে। কিন্তু বেচাকেনা হয়েছে একবারেই কম।

বৃহত্তর যশোরের চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এবার চামড়া বাজারে ধস নেমেছে। নগদ টাকার সঙ্কট। ট্যানারী মালিকরা ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকার যৎসামান্য পরিশোধ করেছেন। অন্যান্য ব্যসায়ীরা জানালেন, বাজারের ধস ঠেকানোর কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা থাকছেই। যদিও বিজিবি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে চামড়া পাচার হবে না। গোটা সীমান্তে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল চামড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাকাম ও আড়তে যা বেচাকেনা হয়েছে তাতে ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত উঠেছে। শুধু ক্ষুদে ব্যবসায়ী নয়, কোরবানির চামড়ায় সারা বছরের খরচের একটা বড় অংশ ওঠে মাদ্রাসা ও এতিমখানার। চামড়া বাজারে ধস নামায় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা।
আদমদীঘি (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘি ও সান্তাহারে কোরবানীর পশুর চামড়ার বাজারে মারাত্মক ধস নেমেছে। চামড়ার দাম নিয়ে আগে থেকেই চলছিল নানা গুঞ্জন। এবার লোকসানের ভয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ী কম থাকায় অসাধু ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখার কারনে এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যাবসায়ীদের মোটা অংকের লোকশান গুনতে হয়েছে। আবার অনেক ক্ষুদে ব্যাবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে অসাধু চামড়া ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট করার কারনে পুরো বাজার চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রনে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এবার সরকারের নির্ধারিত মূল্য হিসাবে চামড়া কিনেও তাদের লোকশান গুনতে হয়েছে। উপজেলার স্থানীয় পাইকারী আড়ৎদারেরা এবং মজুতকারীরা সরকারী নিয়মনীতি না মেনে তারা তাদের ইচ্ছেমত দামে চামড়া কিনেছেন। এ সুযোগে স্থানীয় ব্যবসায়রিা অল্পদামে চামড়া কিনে মজুদ করেছে। ধারনা করা হচ্ছে মজুদ চামড়াগুলো ভারতে পাচার করে মোট অংকের টাকা লাভ করার আশায় সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা ব্যাপক চামড়া ক্রয় করেছে বলে অনেকে ধারনা করেছে।

উপজেলার মৌসুমী চামড়া ব্যাবসায়ীদের ভাষ্যমতে, এখনকার আড়ৎদারেরা পরিকল্পিত ভাবে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রন করার কারনে তারা লোকশানের মুখে পড়েছেন। তারা বলেন যে চামড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য মোতাবেক গরুর চামড়া ৮০০ থেকে ১২শ’ টাকা এর চেয়ে বেশী দাম হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু চামড়া ব্যাবসায়াীরা সিন্ডিকেট করার কারনে পুরো বাজার চলে যায় সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীদের নিয়ন্ত্রনে। এ কারনে পনরো থেকে দুই হাজার টাকার বড় ষাড় গরুর চামড়া মাত্র ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়, গাভির চামড়া ১শ’ থেকে দুইশো টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। এছাড়া খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র বিশ টাকায়। ছোট খাট খাসির চামড়া বিক্রি না হওয়ায় ক্ষেভে অনেকে ফেলে দিয়েছে আবার অনেকে পুতে রেখেছে বলেও মৌসুমী চামড়া ব্যাবসায়ী ও ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন।

https://www.dailyinqilab.com/article/149407