রাজাপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বাসিন্দারা ;নয়া দিগন্ত
২৬ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৮:৪০

অনিয়মের অভিযোগ আশ্রয়ণ প্রকল্পে

ঝালকাঠীর রাজাপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ঘর নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ প্রকল্পে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে বলে এ অভিযোগ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রকল্পের অর্ধেক কাজও সম্পন্ন হয়নি। ফলে প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, প্রকল্পের অধীন রাজাপুর উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৮টি ঘরের জন্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলার ছয় ইউনিয়নের প্রতিটিতে ১৮টি করে ঘর নির্মাণ করার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর নীতিমালায় পিআইসির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজ করার কথা থাকলেও পিআইসির সভাপতি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) একক মতাবলে তার পছন্দের লোকজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। পিআইসির অন্য সদস্যরা হলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), সদস্যসচিব (উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী), উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না।

১৭৫ বর্গফুটের ঘর নির্মাণে কাঠের দরজা-জানালা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়াই, শিশু, আকাশমণি প্রভৃতি গাছের কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও নি¤œমানের কাঠ দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ফলে ঘরের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে সুবিধাভোগীসহ পিআইসি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ১৭৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ঘরে ১৭টি পিলার, মূলঘর ও বারান্দা এবং টয়লেটে চারটি করে পিলার দেয়ার কথা রয়েছে। ঘরের জন্য চার বর্গইঞ্চির পিলারের উচ্চতা ১২ ফুট, বারান্দা ও টয়লেটের পিলারের উচ্চতা ১০ ফুট। প্রতিটি খুঁটি তৈরিতে চারটি রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে নি¤œমানের ৩টি রড। প্রতি ফুটে একটি করে রিং দেয়ার কথা থাকলেও রিং লাগানো হয়েছে দুই ফিট পর। দুই হাজার ১০০ টাকা ব্যয়ে চারটি জানালায় লোহার গ্রিল দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ঘর নির্মাণের আগেই ঘরের পিলারে ইতোমধ্যেই ফাটল দেখা গেছে। ফোর নির্মাণে দেয়া হচ্ছে না ভিটবালু, মাটির ওপরে নি¤œমানের ইট দিয়ে তার ওপরেই ঢালাই দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প্ল্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রতি ঘরে এক লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের কথা থাকলেও তা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে তা সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ মিলেছে। ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও সুবিধাভোগীকে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা।
মঠবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী কোহিনূর বেগম জানান, এখন পর্যন্ত তার ঘরের চৌহদ্দি ছাড়া আর কিছুই হয়নি। তাও আবার মাটি না খুঁড়ে মাটির ওপরে হয়েছে। মঠবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী পারুল বেগম জানান, তার ঘরের মেঝে তৈরিতে ঠিকাদার পলিথিন ব্যবহার না করায় তিনি নিজে পুরনো পলিথিন কুড়িয়ে তার মেঝেতে বিছিয়ে দিয়েছেন। ঘর নির্মাণসামগ্রী ব্রিজের কাছ থেকে নির্মাণস্থানে নিতে ২৩৫০ টাকা দিতে হয়েছে পরিবহন খরচ। মঠবাড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী গোপাল শীল জানান, নির্মাণে ব্যবহৃত মালামাল সব কিছুই নি¤œমানের। বাড়িতে আনতে দুটি পিলার ভেঙে গেছে। পিলারে চারটি করে রড দেয়ার কথা থাকলেও তিনটি রড দিয়ে পিলার তৈরি করা হয়েছে। মঠবাড়ি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী অমলচন্দ্র শীল সাংবাদিকদের জানান, ঘর নির্মাণ করে দেয়ার কথা থাকলেও এখানে আমরা নিজেরাই ঘর তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি।

পিআইসির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। কয়েকটা পিলারে তিনটি করে রড দেয়া হয়েছিল। তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। আর মালামাল আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে কারো কাছ থেকে কোনো খরচ নেয়ার অভিযোগটি ঠিক নয়। কারো কাছ থেকে ওই বাবদ কোনো টাকা নেয়া হয়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/343594