২৬ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৬

৩৮০০ কোটি টাকার ইভিএম কিনতে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ ইসির

৩ হাজার ৮২১ কোটি টাকায় দেড় লাখ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার কমিশন সভায় আরপিও সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। যদিও গত ১৫ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের পরিপ্রেেিত ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কোনো ধরনের সংশোধনী আনা হচ্ছে না।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এজন্য দেড় লাখ ইভিএম কিনতে যাচ্ছে। মেশিনগুলো কেনার ল্েয নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। আজ রোববার এ প্রকল্পের ওপর পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির) সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইভিএম সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করতে শিগগিরই ‘ইভিএম মেলা’র আয়োজন করতে যাচ্ছে কমিশন। ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার ল্েয ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর বেশির ভাগই ব্যয় হবে ইভিএম কিনতে। তবে প্রকল্পে ছয়টি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় ছাড়াও ভোটারদের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, নির্বাচন কর্মকর্তাদেরপ্রশিণ ও দতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়ছে প্রায় দুই লাখ টাকা। যা আগের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি।
এর আগে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। প্রথম পর্যায়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১১ হাজার ৫৫৬ টাকা দরে ১৩০ ইউনিট ইভিএম সংগ্রহ করে ওই কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩২ হাজার ৫৪৭ টাকা দরে ৪০০টি ও তৃতীয় পর্যায়ে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৪৬ হাজার ৫০১ টাকা দরে ৭০০টিসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৩০ ইউনিট ইভিএম কিনেছিল ড. হুদা কমিশন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে ইসি গত বছরের জুলাইয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরপিওসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিল। সে অনুযায়ী কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে গঠিত ইসির আইন সংস্কার কমিটি আরপিও সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে তা গত ১২ এপ্রিল কমিশন সভায় উত্থাপন করে। পাশাপাশি সংশোধনী কার্যক্রমে সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম মোহাম্মদ হোসেনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি তিনি ইসির কাছে তার সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। তবে কমিশন তা অনুমোদন না করে কিছু পর্যবেণ দিয়ে ফেরত পাঠায়। এরপর আরপিও সংশোধনীর বিষয়টি আড়ালে চলে যায়।
আরপিও সংশোধন নিয়ে গত ১৫ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের পরিপ্রেেিত ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কোনো ধরনের সংশোধনী আনা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ইসির আইন সংস্কার কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আইন সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। আইন পরামর্শকও এ বিষয়ে কাজ করছেন। সংশোধনীতে ইভিএমের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। রোববারের বৈঠকে আলোচনার জন্য বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে কি না জানতে চাইলে কবিতা খানম বলেন, সংশোধনীর চিন্তা থেকেই বিষয়টি বৈঠকে তোলা হচ্ছে। আমি মনে করি, যে সময় হাতে আছে তাতে আরপিও সংস্কার করা সম্ভব। সংস্কার না হওয়ারও কোনো কারণ দেখছি না। তবে সব সিদ্ধান্ত ইসির ওপর নির্ভর করছে। কমিশন যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই বাস্তবায়ন হবে। ইভিএম থাকার বিষয়টি জানালেও অন্যান্য সংশোধনীর প্রস্তাবনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কমিশনার। তিনি বলেন, কমিশনের কিছু পরামর্শ ছিল। আমরা সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে এবং যুগের চাহিদার বিষয়টি চিন্তা করে সংশোধনী প্রস্তাব করেছি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা, জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজীকরণসহ অন্তত ৩৫টি প্রস্তাব নিয়ে বসেছিল ইসির আইন সংস্কার কমিটি। তবে কমিশন সভায় এসব প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ েেত্র স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা সহজীকরণের যে উদ্যোগ ছিল সেটা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এটির েেত্র বিদ্যমান ব্যবস্থাই বহাল রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করলেও ইসি সেখান থেকে সরে আসছে। তবে নির্বাচনী আচরণবিধিতে স্যোসাল মিডিয়ার েেত্র একটি গাইডলাইন থাকবে বলে জানা গেছে।

এ দিকে কমিশন সভার বিবিধ এজেন্ডায় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ১(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে’ তবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কিন্তু ৭২ এর আরপিওতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের েেত্র দুর্নীতিবাজদের রাখা না রাখার েেত্র স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। এ কারণে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি বা একাধিক দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি আসতে পারেন। আর নেতৃত্বে আসার পর সেই দল যদি নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন মনে করেছে, সংসদ সদস্য নির্বাচনের েেত্র সংবিধানের সঙ্গে আরপিওকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে হলে তাকে সংবিধান অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিত হতে হবে এমন সংশোধনী আনা হতে পারে আরপিওতে। এজন্য কোনো রাজনৈতিক দলে দণ্ডিত দুর্নীতিবাজ, যার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং যিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য, তিনি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। যদি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকেন তবে সেই নেতৃত্ব বাতিল বলে বিবেচিত হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/343576