২৫ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৩:৪৫

রহস্যঘেরা লুটের নায়ক একমাত্র অস্ত্রধারী!

মাত্র একজন অস্ত্রধারী অস্ত্রের মুখে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বাড্ডা লিংক রোডের শাখার ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে দাবি করা হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো ঘটনাটি রহস্যজনক। ব্যাংক কর্মকর্তারা পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার সময় ব্যাংকের ম্যানেজার ফজলুল হকসহ ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং একজন নিরাপত্তা কর্মী ভেতরে ছিলেন। অস্ত্রের ভয়ে তারা কেউ এগিয়ে আসার সাহস পাননি। ঘটনার সময় ব্যাংকে কোনো গ্রাহক ছিলেন না। তখন ব্যাংকের লেনদেন শেষ করে হিসাব মেলানোর কাজ চলছিল। ওই অস্ত্রধারী যাওয়ার সময় সিসি ক্যামেরার ডিভিআর খুলে নিয়ে গেছে। সেই অস্ত্রধারীকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, একজন অস্ত্রধারী সাতজনকে জিম্মি করে ২৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনাটি রহস্যজনক। আদৌ এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা এ নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এককভাবে এমন ঘটনা ঘটানো অনেক কঠিন। এ ঘটনায় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সময় উপস্থিত ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বক্তব্যেরও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত অস্ত্রধারীকে আসামি করে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাড্ডা থানায় মামলা করা হয়েছে।

ব্যাংক লুটের ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি)। ডিবি উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, একজন অস্ত্রধারী ব্যাংকের সবাইকে জিম্মি করে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে গেছে- বিষয়টি রহস্যজনক। এ ঘটনার কোনো সাক্ষীও নেই। কে করেছে তার বিষয়েও কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমরা তদন্ত করছি।
লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী প্রিমিয়ার ব্যাংকের জেনারেল সার্ভিস ডিভিশনের সিনিয়র অফিসার রাহাত আলম। শুক্রবার বিকালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি প্রিমিয়ার ব্যাংকের হেড অফিসে কর্মরত। ঘটনাস্থলে থাকা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনে মামলা করেছি। এখন পুলিশ তদন্ত করে শিগগিরই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে বলে আশা করছি। ব্যাংকের কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো সন্দেহ আমরা করছি না।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে। ওই সময় ব্যাংকে কোনো গ্রাহক ছিলেন না। সারা দিনের লেনদেন শেষে তখন হিসাব মেলানোর কাজ চলছিল। এ সময় একজন অস্ত্রধারী ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করেই ব্যাংক ম্যানেজারের কক্ষে চলে যায়। ম্যানেজারের কক্ষটি কাচঘেরা। অস্ত্রধারী ব্যাংকের ম্যানেজার ফজলুল হককে জিম্মি করে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভল্ট কক্ষে ঢুকতে বলে। তারপর সে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সিসি টিভির ডিভিআর খুলে নিয়ে যায় অস্ত্রধারী। মামলার এজাহারেও ঘটনার বর্ণনা এভাবেই দেয়া হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বাড্ডা শাখা থেকে লুট হওয়া ২৩ লাখ টাকার হদিস মেলেনি। লুটকারী সেই ব্যক্তিকেও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ওই শাখাটি ছিল নির্মাণাধীন ভবনে। ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল দুর্বল। লুটকারী যাওয়ার সময় সিসি ক্যামেরার ডিভিআর খুলে নিয়ে গেছে। এ কারণে আশপাশে বিভিন্ন ভবন ও দোকানপাটের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলোর একাধিক ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ থেকে সন্দেহভাজন কয়েকজন বক্তির ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেখানো হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে একেকজন একেক তথ্য দিচ্ছেন। ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একজন অস্ত্রধারীকে প্রতিহত করতে না পারার ঘটনা- তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বাড্ডা লিংক রোডের গ/৮২ ও ৯০/১ ভবনের নিচ তলায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখা। ব্যাংক ভবনের দুই পাশে আরও কয়েকটি ভবন রয়েছে। আশপাশের ভবনের লোকজন এবং দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এমন ঘটনার কথা বলতে পারেন না। এমনকি তারা সেদিন কোনো চিৎকার চেঁচামেচিও শুনেননি। এভাবে একজন ফিল্মি স্টাইলে লুট করার ঘটনা সত্যিই বিস্ময়কর। তাছাড়া ব্যাংকের ভেতর সব সময় অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মী থাকে। বিকাল ৪টায় লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই ব্যাংকের মূল দরজা বন্ধ করে দেয়ার কথা। এ সময়ে বাইরে থেকে অস্ত্রধারী কিভাবে ভেতরে প্রবেশ করল এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধারণা করছি, ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গোপনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। এর বাইরে সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে পুলিশের বাড্ডা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আশরাফুল করিম যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক লুটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত লুটকারীর বিষয়ে আমরা কোনো নিশ্চিত তথ্য পাইনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই আবু হানিফ যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সময় উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিরাপত্তা কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/83327