২৫ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৩:৩৭

ঢাকায় ১০ হাজার টাকায় গরু বিক্রি!

ঢাকায় স্মরণকালের সস্তা দামে এবার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। এমনকি মাত্র ১০ হাজার টাকায়ও গরু বিক্রি হয়েছে আফতাবনগর কোরবানির পশুর হাটে। ঢাকার বিভিন্ন হাটে এত পরিমাণ গরু ছাগলের আমদানি হয় যে, বিভিন্ন হাটে লাখ লাখ গরু ছাগল অবিক্রীত থেকে যায়। দেশের দূরদূরান্ত থেকে আনা এসব পশু বিক্রি করতে না পেরে অঝোরে কেঁদেছেন অনেক পশু ব্যবসায়ী ও কৃষক। অনেকে অতিমাত্রায় দাম কমিয়েও বিক্রি করতে পারেননি তাদের পশুগুলো। এসব পশু আবার গ্রামে ফেরত নিতে তাদের অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

গত বছর ঢাকার বিভিন্ন হাটে ঈদের আগের দিন কোরবানির পশুর সঙ্কট দেখা দেয়। ফলে দ্বিগুণ এমনকি তিন গুণ দামেও অনেকে পশু কিনতে বাধ্য হন। এ সুযোগে বিপুল লাভ করেন অনেক ব্যবসায়ী। সে আশায় এবারো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকার হাটগুলোতে কোরবানির পশু নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। আফতাবনগরে বিপুল ছোট ও রুগ্ণ পশুও দেখা গেছে এবার যা সাধারণত দেখা যায় না।

ঢাকার আফতানগর পশুর হাটে সরেজমিন দেখা গেছে ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই দ্রুতগতিতে কমতে থাকে গরুর দাম। যেসব গরু অন্যান্য বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেসব গরু ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে থাকে। বিকেলের দিকে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রায় সব গরুর দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসে। বিকেলে দেখা যায় মাত্র ২০ হাজার টাকায় গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। ২০ হাজার টাকায় যেসব গরু বিক্রি হয়েছে তা অন্যান্য বছর সাধারণত ৩৫ হাজার টাকায় পাওয়া যেত। ২০ হাজার টাকায় গরু বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়ায় যারা ছাগল কেনার ইচ্ছা ছিল, তারাও গরু কিনতে শুরু করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত ঘুরে আফতাবনগরে গরু বিক্রির এ চিত্র দেখা গেছে। এরপর ভোর ৫টা পর্যন্ত হাটে থাকা কয়েকজন ক্রেতা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন রাতে ১০ হাজার টাকায়ও গরু বিক্রি হয়েছে। তবে সেগুলো খুবই ছোট এবং রুগ্ণ ছিল। ভোর ৫টা পর্যন্ত হাটে থাকা বনশ্রী এফ ব্লকের বাসিন্দা রাকিব ও ফারুক বলেন, আমরা ১০ হাজার টাকা, ১২ হাজার টকায় গরু বিক্রি হতে দেখেছি। রাকিব বলেন, আমি একজনকে জিজ্ঞেস করেছি এত ছোট আর ল্যাংড়া (হাড্ডিসার) গরু দিয়ে কী করবেন। সে বলেছে এটা সে পালবে। রাকিব বলেন, সকালে দেড় লাখের মতো গরু ফেরত গেছে আফতাবনগর হাট থেকে।
আফতাবনগর হাটে গরুর দাম কমে যাওয়ার পরও বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেখা গেছে একদিকে ট্রাকে করে গরু আনা হচ্ছে, আরেক দিকে ট্রাকে করে অনেকে গরু ফেরত নেয়া শুরু করেছেন।
আফতাবনগরে গরুর মতো ছাগলও আনা হয় অতিরিক্ত। ফলে ছাগলও বিক্রি হয়েছে কম দামে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই আফতাবনগরে দেখা গেছে কোনো ক্রেতা হাটে প্রবেশ করলেই কয়েকজন বিক্রেতা তাদের ঘিরে ধরে বলতে থাকেন ভাই আমার গরুটা একটু দেখেন, ভাই আমার খাসিটা একটু দেখেন। দাম কমে যাওয়ায় অনেক বিক্রেতা প্রথমবার দাম বলার সাথে সাথেই গরু বা ছাগল দিয়ে দিয়েছেন ক্রেতাকে। যারাই আরেকটু বেশি দামে বিক্রির আশায় ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের পরবর্তীতে হয় আরো কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে, অথবা তারা বিক্রিই করতে পারেননি।
দেশের দূরাঞ্চল থেকে ট্রাকে পশু আনতেই তীব্র গরম আর যানজটে অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেক পশু। এ ছাড়া তীব্র গরমে হাটে থাকতে থাকতেও অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেক সুস্থ পশু। অনেক পশু আবার গ্রামে ফিরিয়ে নেয়া কোনো অবস্থাতেই সম্ভব ছিল না। তাই পানির দামে অনেকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন গরু ছাগল।

নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকে আসা কৃষক হাতেম আলী কাঁদো কাঁদো চেহারায় এ প্রতিবেদককে বলেন, অনেক কষ্ট করে লাভের আশায় ছাগল নিয়ে এসেছিলাম। অর্ধেকও বিক্রি করতে পারিনি। সোমবার মাত্র তিনটি ছাগল লাভে বিক্রি করেছি। আজ আর কেউ দামও জিজ্ঞেস করে না। লস দিয়েও বিক্রি করতে পারছি না। এখন আমি আবার কিভাবে এগুলোকে বাড়ি নিয়ে যাবো।
অনেকের মতে গত কয়েক বছর ধরে দেশের সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট আফতাবনগরে এবার এত পরিমাণ পশু আমদানি হয়েছে যা অতীতে কেউ দেখেননি।
অনেককে বলাবলি করতে শোনা গেছে, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভের আশায় এবার গ্রাম থেকে ঢাকায় অতিরিক্ত পশু নিয়ে আসায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অধিক লোভের কারণে অতি রুগ্ণ এবং ছোট ছোট গরুও তারা সুদূর গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। অথচ দেশের অনেক অঞ্চলে কোরবানির পশুর হাটে পশুসঙ্কট ছিল।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/343291