: কুরবানির চামড়ার রাজশাহীর বাজার ছিল ফড়িয়াদের দখলে। একটি আড়তের দৃশ্য -সংগ্রাম
২৫ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৩:৩০

রাজশাহীতে সিন্ডিকেটের দখলে কুরবানির চামড়া ॥ মূল্য বঞ্চিত দুঃস্থ-এতিমরা

রাজশাহীতে এবারের কুরবানির চামড়ার বাজার চলে যায় বিশেষ সিন্ডিকেট ও ফড়িয়াদের দখলে। গরু-ছাগলের এসব চামড়ার দাম বেজায় কম থাকায় বঞ্চিত হয় দুঃস্থ-এতিমরা। এদিকে চামড়া নিয়ে বড় ধরনের লোকসান ও পাচারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজশাহীতে। এনিয়ে সরকারের নীতির সমালোচনা করেন অনেকেই।

ঈদের দিন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে এসব ফড়িয়া প্রায় পানির দরে চামড়া কিনে নেয়। কোথাও কোথাও গরুর চামড়া ৪-৫শ’ টাকায় এবং ছাগলের চামড়া ২-৩শ’ টাকায় কিনে নেয়। ফলে অনেক কুরবানি দাতা নিজেদের পছন্দের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও এতিমখানায় চামড়া পৌঁছে দেন। এসব প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা আড়তদারের কাছে সরকারি মূল্যে বিক্রি করেন। এসব পশুর চামড়া বিক্রির টাকা এতোদিন গরীব-দুঃস্থরা পেতো। এর একটা বড় অংশ পেয়ে থাকে এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলো। কিন্তু চামড়ার দাম নি¤œ পর্যায়ে চলে যাওয়ায় এসব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলো হতাশ হয়। অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষকে চামড়া বিক্রির টাকার বদলে নিজে থেকে দানের মাধ্যমে তাদেরকে পুষিয়ে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নওহাটা বাজারের এক ব্যক্তি ৭৫ হাজার টাকায় কেনা গরু কুরবানি দিয়েছিলেন। তিনি জানান, তার পশুর চামড়া বিক্রি করেন সাড়ে ৬শ’ টাকায়। এই টাকা কাকে দিবেন আর কাকে দিবেন না ভেবে পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় রেখেই এবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে চামড়া কিনছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। দিনব্যাপি ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে তারাও এ পথে পা বাড়িয়েছেন। ফলে এবার চামড়া নিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লাই ভারী হবে বলে আশঙ্কা তাদের। এ বছর সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০, খাসি ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু বর্গফুট নয়- আকারের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত দামের চেয়ে গড়ে চামড়া প্রতি ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বেশি দিয়ে চামড়া কিনেছেন তারা। চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা চামড়া রক্ষণাবেক্ষণ ও যাবতীয় খরচ বিষয়টিও নির্ধারিত দামের মধ্যেই। খরচ বাদ দিলে অর্ধেকে নেমে আসছে চামড়ার দাম। তারা জানায়, একটা গরুর চামড়ায় ১২ কেজি লবণ লাগে। যার দাম ১৫০ টাকা। প্রতি চামড়ায় শ্রমিক খরচ (মাঠে থেকে তুলে আড়তে আনা) ১০ টাকা, পরিবহন খরচ ১০-১৫ টাকা (আগে ও পরে), ৩৫ টাকা আড়ৎদারি, ১০ টাকা (নাটোর আড়তে) যাচাইবাছাই, নাটোর আড়তে শ্রমিক খরচ ১০ টাকা, কুলি ও খাজনা দিয়ে ১০ টাকা, লবণজাত করে নাটোর নিতে পরিবহণ খরচ ১৫ টাকা, চামড়া কিনে কোনো স্থানে রাখার খরচ বাবদ ৫ টাকা। এছাড়াও আরো কিছু অন্যান্য খরচ রয়েছে। সবমিলে প্রায় ৩শ’ টাকা খরচ হয় প্রতিটি চামড়ায়। তাহলে নির্ধারিত দাম ৮৫০ টাকার মধ্যে খরচ ৩শ’ টাকা বাদ দিলে থাকে ৫শ’ টাকা। আবার ১০০টি চামড়ার মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে বাদ যাবে, ৩০টি চামড়া বাদ পড়ে। তাহলে ৭০টি চামড়ার সরকার নির্ধারিত দাম পাবে ব্যবসায়ীরা। বাদ পড়া চামড়াগুলো আরো কম দামে বিক্রি করতে হয় অন্য উপায়ে। অন্যদিকে চামড়া বিক্রির হিসেব কষলে দাম উঠছে না খাশি ও বকরিতে। নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা-বেচা করলে খাসিতে থাকবে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। অপরদিকে রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রউফ বলেন, চামড়ার বাজার মন্দা। এবছর চামড়ায় খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হওয়ায় এমন দশা হয়েছে। এটার হকদার হলো প্রতিবেশী ফকির-মিসকিন, গরিব আত্মীয়-স্বজন ও মাদরাসা পড়ুয়া বাবা-মা হারা এতিমরা। এসব গরীবদের জন্যই চামড়ার দাম আবার নির্ধারণ করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের একজন নেতা জানান, অদৃশ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাড়া-মহাল্লা থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ঈদের প্রথম দিনে প্রায় ৮০ ভাগ চামড়াই কিনে নিয়েছেন। কিন্তু ওই চামড়ার একটি বড় অংশ এখনো তাদের হাতে রয়েছে। বেশি দাম চাওয়ায় লোকসানের ভয়ে তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনছে না আড়তগুলো। ফলে তারা চামড়া নিয়ে এখনই বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে চামড়া নিয়ে বড় ধরনের লোকসান ও পাচারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজশাহীতে।

http://www.dailysangram.com/post/342790