২৫ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৩:২০

ভারতের শীর্ষ রেমিট্যান্স আয়ের তালিকায় এখনো পঞ্চম বাংলাদেশ

এক-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে বিদেশীরা

বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় করে তার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা । বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১৬ সালে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (মার্কিন) এবং ২০১৭ সালে ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে ।

অপর দিকে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্স হিসেবে। এর মধ্যে শুধু ভারতীয়রাই বছরে নিয়ে যায় ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
কোনো কোনো বছর বিদেশ থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাঠানো কষ্টার্জিত এ অর্থের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ে যায় শুধু বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়রা। যেমন বাংলাদেশ ২০১৬ সালে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে আর ভারতীয়রা ওই বছর বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে যায়।

ভারত যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করছে তার তালিকায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৬ সালে প্রতি বছর ভারত বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স আয় করেছে। ওই তিন বছর ভারত শীর্ষ যে ১০টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করে তার তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ছিল পঞ্চম।
গার্মেন্ট, টেক্সটাইল, ফ্যাশন হাউজসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই ভারত বাংলাদেশ থেকে এ বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স অর্জন করছে প্রতি বছর।

বাংলাদেশের মতো একটি দেশ থেকে ভারতের প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয়ের খবর বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও প্রচারিত হয়েছে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্যের আলোকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে ভারতের এ রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ বিস্ময়করভাবে কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। যেমন ২০১২ সালেও বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায় ভারত বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বা বর্তমান হিসাবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স আয় করেছে। অথচ ২০১৩ সালের তথ্যে দেখা যায় ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১১ দশমিক ৩ কোটি ডলার বা ৯৪৮ কোটি টাকা রেমিট্যান্স আয় করেছে।
বিশ্বব্যাংকের বাইল্যাটারাল রেমিট্যান্স মেট্রিক্সে দেখা যায় ভারত বাংলাদেশ থেকে ২০১০ সালে ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার, ২০১১ সালে ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, ২০১২ সালে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
২০১৩ সাল থেকেই বিশ্বব্যাংকের এ তথ্যে আমূল পরিবর্তন দেখা যায়, যা সম্পূর্ণ বাস্তবতাবিরোধী। এতে বলা হয় ২০১৩ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে ১১ দশমিক ৩ কোটি ডলার, ২০১৪ সালে ১১ দশমিক ৬ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১২ কোটি ডলার এবং ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৬ কোটি ডলার আয় করেছে।
বিশ্বব্যাংকের মেট্রিক্সে বলা হয়েছে ২০১৬ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে। অথচ উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে ভারত বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ সালে ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৩৩ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স হিসেবে নিয়ে গেছে।

অপর দিকে ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় বলা হয় ভারত ২০১৩ সালেও বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করেছে এবং ভারতের রেমিট্যান্স আয়ের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ওই বছরও ছিল পঞ্চম। অথচ বিশ্বব্যাংকের মেট্রিক্সে বলা হয় ২০১৩ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১১ দশমিক ৩ কোটি ডলার আয় করে অথচ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের দি ইকোনমিক্স টাইমস পত্রিকায় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে অথচ বিশ্বব্যাংকের তথ্যে বলা হয় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১১ দশমিক ৬ কোটি ডলার আয় করেছে ভারত।
২০১৭ সালে ভারত ৬৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে প্রবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে। ভারত কোন দেশ থেকে কত রেমিট্যান্স আয় করে তা তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের মেট্রিক্সে। তাতে দেখা যায় ২০১৭ সালে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে। এরপর পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ১১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব ১১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার, কুয়েত ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার, কাতার ৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্য ৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, ওমান ৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং নেপাল থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। আর বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১২ কোটি ডলার আয়ের কথা বলা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের এ তথ্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

গত বছর ৮ জুলাই আইডিইবি ভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় দেশে তিন লাখ বিদেশী কর্মরত রয়েছে।
২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে এবং এরা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লাখ বিদেশী কাজ করে। বেতনভাতা বাবদ এরা প্রতি বছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায়।
গত বছর ৫ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিকের খবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে শুধু ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/343307