২৪ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১২:০৪

বিক্রির অপেক্ষায় কাঁচা চামড়া

কোরবানির পর আরও একদিন পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনও বিক্রি হয়নি অনেক কাঁচা চামড়া। বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারে স্তূপাকারে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এসব কাঁচা চামড়া। পাইকাররা কাঙ্ক্ষিত দাম না দেওয়ায় চামড়া বিক্রি করেননি বলে জানিয়েছেন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা। ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব ও আজিমপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতে রাখা চামড়ার স্তূপ বৃষ্টিতে ভিজে গেছে এবং তা বিক্রি জন্য অপেক্ষায় করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী।

এ প্রসঙ্গে ধানমন্ডির সাইন্সল্যাব এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আড়তদারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই চামড়া হাজারিবাগ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে লবণ লাগানো জন্য।’

জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাইয়ের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে চামড়াতে লবণ লাগাতে হয়। কিন্তু আড়তদারদের কাছে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে বেশ কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত চামড়া ছাড়েননি। ফলে পশু জবাইয়ের ৩৫ ঘণ্টা পার হলেও এই চামড়াগুলোতে এখন পর্যন্ত লবণ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পশু জবাইয়ের ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ লাগাতে হয়। তা না-হলে ওই চামড়ার ওপরের ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়।’
লালবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার ব্যাপারে আগ্রহ কম আড়তদারদের। এর আগে বুধবার ঈদের দিন মাঠপর্যায় থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন রাজধানীর অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী। বিশেষ করে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী সাতশ’ টাকার বেশি দামে চামড়া কিনেছেন, তারা পাইকারদের কাছে বেশি দামে তা বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া কিনে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখ দেখার আশঙ্কা করেছেন তাদের অনেকে।

এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় বাবুল মোল্লাহ নামের একজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি জানান, মিরপুর এলাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার পিস চামড়া কিনেছেন। এরপর তা বিক্রি করতে তিনি লালবাগের পোস্ত এলাকার পাইকারদের কাছে যান। কিন্তু পাইকাররা গড়ে সাতশ’ টাকার বেশি দাম বলছেন না। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা বেশ কিছু চামড়া আটশ’ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। অথচ পাইকাররা সাতশ’ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছে না।’
বুধবার (২২ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে লালবাগের পোস্ত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি চামড়ার ট্রাক কাঁচা চামড়া নিয়ে বসে আছে। জানা গেছে, সারা রাত লালবাগের পোস্ত এলাকায় চামড়ার ট্রাক ঢুকেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রফতানি পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণে ও আর্ন্তজাতিক বাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় চামড়ার বাজার এখন একেবারেই ভালো না। যে কারণে চামড়ার দাম এতোটা কমে গেছে।’ বিগত তিন দশকে এখন চামড়ার দাম সর্বনিম্ন বলেও জানান তিনি।

এর আগে অন্যান্য বছরে ঈদের সময় দেখা গেছে, সাধারণত ঈদের দিন দুপুর থেকেই পাইকাররা চামড়া কেনার জন্য তৎপর হন; তারা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে ঘুরে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন। কিন্তু এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ঈদের দিন কোরবানির পর, এমনকি বৃহস্পতিবারও দুপুর গড়িয়ে বিকাল এমনকি সন্ধ্যাতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়া নিয়ে পাইকারের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।

প্রসঙ্গত, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের যেহেতু কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের সুযোগ থাকে না, তাই তারা যতটা দ্রুত সম্ভব তা আড়তারদদের হাতে তুলে দিতে চান। মূলত আড়তদাররা কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সেই চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা।
রাজধানীর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ১২ থেকে ২৫ বর্গফুটের প্রতিটি চামড়া সাতশ’ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পরামর্শ দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। আর ঢাকার বাইরে একই সাইজের চামড়া তিনশ’ থেকে নয়শ’ টাকার মধ্যে কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা; ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

 

http://www.banglatribune.com/national/news/356927