২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:৪৭

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী অস্বাভাবিক বাড়ছে

এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৯৯৫, মৃত্যু ৯ জনের * হাসপাতালে ভর্তি ১১২ জন

রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। এ সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১১২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. সাখাওয়াত হোসেন রোববার যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৯৯৫ জন।
এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। বর্তমানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালে রয়েছেন ১৮ জন, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০ জন এবং বারডেম হাসপাতালে ৮ জন। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৬ জন।

এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯৯৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও আরও বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, বাড়িতে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের কম নয়।
রাজধানীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গোনস্টিক সেন্টারগুলোয় খবর নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করাতে আসা রোগীদের একটা বড় অংশ ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন। বিশেষ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩ দিন অতিবাহিত হলেই অনেকে নিজ উদ্যোগে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে আসছেন।
এ বছর বর্ষা মৌসুম কিছুটা আগে শুরু হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ঢাকা শহরের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির ওপর সম্প্রতি পরামর্শমূলক কর্মশালা আয়োজন করে।

এতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনাও সেখানে ছিলেন।
কর্মশালায় বেশ কিছু পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এগুলো হল- জ্বর হলে চিকিৎসক অথবা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরামর্শ নেয়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া এবং পানি ও পানীয় জাতীয় খাবার গ্রহণ করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন না করা, বিশেষ করে ব্যথানাশক জাতীয় ওষুধ।
তারা বলেন, ডেঙ্গুজ্বর কমে যাওয়ার পরও রোগীর অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই হঠাৎ অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বা হেমোরেজিক ডেঙ্গু হওয়ার শঙ্কা থাকায় অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কোনো রোগীর রক্তক্ষরণ (যেমন : দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হওয়া, ত্বকের নিচে ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়া, বমির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি) দেখা দিলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। সম্প্রতি এক অভিযানে ১৮ বাড়ির মধ্যে ১১টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন তারা। তাদের হিসাব মতে, প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত একটি জরিপের ফল মে মাসে প্রকাশিত হয়। এতে রাজধানীর ১৯ এলাকা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) রয়েছে বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের একাংশ, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) রয়েছে ধানমণ্ডি-১, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও শান্তিনগর।
ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা যুগান্তরকে বলেন, এডিস মশাবাহিত রোগের প্রতিরোধ ও বৃদ্ধি রোধে সরকারিভাবে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীকে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙানোর পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে নজর দিতে গুরুত্বারোপ করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/82883