২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১১:২৯

ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনই বলছে দাম বেশি

ঈদুল আজহার বাকি আর দুই দিন। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে এবার ২৫টি হাট বসেছে। সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীসহ প্রতিটি হাটেই বিকিকিনি শুরু হয়েছে। তবে ঈদের বাজার বলতে যা বোঝায় সে রকম চিত্র গতকাল রবিবার পর্যন্ত দেখা যায়নি। গরুবোঝাই ট্রাক ও ট্রলার আসছে। ক্রেতা হাটে ঘুরছে, পশু দেখছে আর দাম জানছে। তবে বিক্রিটা সেভাবে শুরু হয়নি। বরাবরের মতোই এবারও বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম একটু বেশি চাওয়া হচ্ছে। গত বছর যে গরু ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার তেমন গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮৫ হাজার টাকা। এক লাখের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় লাখ টাকা। ব্যাপারীদের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে—পশু পালনে খরচ বেশি পড়ছে। খাদ্য, ওষুধ, পরিবহন ও রাস্তার খরচ মিলে পশুর দাম বেশি পড়ছে। তাই তারা গতবারের চেয়ে বেশি দাম চাচ্ছে।

গতকাল রবিবার রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ভারত থেকে কয়েক বছর ধরে গরু আমদানি কমে যাওয়ায় গাবতলীসহ রাজধানীর প্রতিটি হাটই এখন দেশীয় খামারিদের পশুর দখলে বলা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পিকআপ ও ট্রাকে করে গরু আনা হচ্ছে এখানে।
গাবতলী পশুর হাটে ১ নম্বর হাসিল কাউন্টারের সামনে দেখা গেল বেশ জটলা। কাছে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন ক্রেতা গরুর দাম অনুযায়ী ৫ শতাংশ হারে হাসিল পরিশোধ করছে। কথা হলো দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালামের সঙ্গে। গরুর দাম কত জানতে চাইলে জানালেন, ৫৫ হাজার টাকা। সাভার থেকে আসা ক্রেতা গিয়াস উদ্দিন যে গরুটি কিনেছেন সেটির দাম ৬৫ হাজার টাকা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিরু ব্যাপারী ৫০টি বড় গরু নিয়ে এসেছেন গাবতলীর পশুর হাটে। প্রতিটি গরুর দাম সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকাচ্ছেন তিনি। তিনি বললেন, ‘আজ সোমবার থেকে বড় গরু বিক্রি হবে। তবে ছোট গরুর দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আবুল হায়াত বললেন, ‘ছোট আকারের সাতটি গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে পাঁচটি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিটি গরু গড়ে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’
নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার খামারিরা গরু-ছাগল নিয়ে এসে জড়ো হয়েছে গাবতলী পশুর হাটে। খামারিরা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিজের খামারের কথা জানান দিচ্ছে। এর মধ্যে নরসিংদীর গো-শালা খামার থেকে ২০টি বড় গরু আনা হয়েছে, যার প্রতিটির দাম গড়ে দুই লাখ টাকার ওপরে হাঁকা হচ্ছে।

দারুস সালাম, টেকনিক্যাল মোড়ে চোখে পড়ল গরুভর্তি অসংখ্য ট্রাক ও পিকআপ ঢুকছে গাবতলী পশুর হাটে। কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এসব গরু আনা হচ্ছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে। নরসিংদী থেকেও আনা হচ্ছে গরু। আর দূরের জেলাগুলো থেকে কয়েক দিন আগেই গরু-ছাগল আনা হয়েছে।
গাবতলী পশুর হাটে ছাগল বিক্রিও দেখা গেল বেশ জমজমাট। একেকটি ছাগল গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাবনার আবদুল আজিজ ১০০ ছাগল নিয়ে এসেছেন এই হাটে। গতকাল পর্যন্ত তাঁর ২০টি ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিটি ছাগল গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এবারের ছাগলের প্রতি ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ এবং ভালো চাহিদা দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

উত্তর শাহজাহানপুরে খিলগাঁও রেলগেট বাজারের পাশে মৈত্রী সংঘের মাঠ, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, হাজারীবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ ও কুড়িল ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন খালি জায়গাসহ কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দেশি গরুর উপস্থিতি বেশি। ক্রেতাদেরও দেশি গরুতে আগ্রহ বেশি। তবে দামের ব্যাপারে ক্রেতাদের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। মেরাদিয়া বাজার হাটে কথা হয় বনশ্রীর এইচ ব্লকের ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি গরু কিনেছি। গত বছর এই সাইজের একটি গরু ৬৫ হাজার টাকায় কিনতে পারলেও এবার এ ধরনের গরু কিনতে হয়েছে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে। তবে ভালো লাগছে যে এবার দেশি গরু বেশি উঠেছে হাটে।’
মেহেরপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী রবিউল মিয়া বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে দাম একটু বেশি। কারণ গরুর পালনে খরচ হয়েছে বেশি। খাদ্য ও অন্যান্য খাত মিলে প্রতিটি গরুতে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ পড়েছে।’ মেহেরপুরের গাংনী থেকে কমলাপুর ব্রাদার্স ইউনিয়নের হাটে ছয়টি গরু এনেছেন ইছব আলী মাঝি। তিনি জানান, এরই মধ্যে দুটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে গরুপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। অবশ্য পরে বিক্রি করলে আরো বেশি লাভ হতো বলে মনে করেন তিনি।
রহমতগঞ্জ খেলার মাঠের হাটে কথা হয় সরকারি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি গরু কিনেছি। দাম একটু বেশিই মনে হলো। গতবার শেষ দিনে এসে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।’ এই হাটের ইজারাদার হাজি শফি মাহমুদ জানান, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া থেকে প্রচুর গরু এই হাটে এসেছে। দুই দিন আগে থেকেই বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। ব্যাপক হারে বিক্রি হবে সোম ও মঙ্গলবার।

মোহাম্মদপুর বসিলা পুলিশ লাইন হাটে গরু কিনতে এসেছেন সোহরাব হোসেন। তিনি জানান, আগে কয়েক ঘণ্টা হাটে ঘুরেছি। গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। তবুও এখন একটা কিনে নেব। হাটে গরু পর্যাপ্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি। রাজধানীর শঙ্কর থেকে বসিলার এই বাজারে এসে ৮০ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন সহিদুল ইসলাম ও তাঁর ভাই আবু সাঈদ। তাঁরা জানান, হাটে গরু একটু আগেই বিক্রি শুরু হওয়ায় দাম বেড়েছে।
কুষ্টিয়ার আমলা থেকে সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন বিপুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘চারটি গরু এরই মধ্যে বিক্রি করেছি। বাকি তিনটিও দরদাম হচ্ছে। এবারের হাটে মোটামুটি ভালো লাভ হয়েছে।’

 

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/08/20/671650