২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১১:০০

ভল্টের স্বর্ণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি

নিষ্পত্তি করতে এনবিআরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের স্বর্ণের মান নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনের আপত্তিগুলো নিষ্পত্তিযোগ্য বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্র্ডকে (এনবিআর) বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এনবিআর এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ভল্টের স্বর্ণ নিয়ে অনিয়মসংক্রান্ত শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনটি আরও খতিয়ে দেখতে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটিও কাজ করছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ভল্টে স্বর্ণ রাখার ব্যাপারে আরও সর্তকতা হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান এক সঙ্গে কাজ করলে মাঝেমধ্যে ধারণাগত ফারাক হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের সোনা ঠিক আছে। স্বর্ণের বিশুদ্ধ হার ৪০ ও ৮০ সংখ্যা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। লেখার সময় ইংরেজি-বাংলা মিশ্রণ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এনবিআরকে দেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ভল্টের স্বর্ণ যথাযথ আছে। এর স্বর্ণ পরিবর্তনে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির তথ্য সঠিক নয়। পাশাপাশি ভল্টে বিশুদ্ধ স্বর্ণের হার গড়ে ৪০ শতাংশই আছে। ভুল করে তা ৮০ শতাংশ লেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি করণিক ভুল। এসব তথ্য তুলে ধরে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনের অনিয়ম নিষ্পত্তি করতে অনুরোধ জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকা কাস্টমস হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের বুনিয়ন ভল্টে গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং জমা রাখেন। কিন্তু পরবর্তী সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে এসব স্বর্ণ নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভল্টের স্বর্ণ সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে হারুন অর রশিদকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভল্ট পরিদর্শন শেষে তিনি প্রত্যয়নপত্র দেন। এতে তিনি বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে জমা রাখা (২৩/৮/২০১৫ইং) গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং যাচাই করেছি। এসব স্বর্ণ যথাযথ আছে বলে আমি নিশ্চিত হয়েছি।’ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে প্রত্যয়নপত্রটি দেয়া হয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনে স্বর্ণের পরিবর্তে অন্য ধাতু পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে সরকারের এক কোটি ১২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির কথাও বলা হয়। তবে এসব তথ্য যথার্থ নয় বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।
শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, স্বর্ণের চাকতি ও রিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষা ৫েয়েল পদ্ধতি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে স্বর্ণের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যয়নপত্র দিয়ে থাকে। উল্লিখিত স্বর্ণের চাকতি ও রিংয়ের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করে স্বর্ণকার বিশুদ্ধতার গড় হার উল্লেখ করে। তবে ৪০ শতাংশের জায়গায় ভুলবশত ৮০ শতাংশ লেখা হয়। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত স্বর্ণকার মেসার্স শখ জুয়েলার্স ৮ মে চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি একটি করণিক ভুল- যা নিষ্পত্তি হিসেবে গণ্য করা যায়।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। জমা দেয়ার সময় যা ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু দুই বছর পর তা পরীক্ষা করে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সোনা পাওয়া গেছে। আর ২২ ক্যারেটের সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গত মাসে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে টনক নড়ে। পরবর্তী সময়ে অধিকতর খতিয়ে দেখতে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। তবে কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট দাখিল করেনি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/82579