২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:৫৮

সংসদ নির্বাচনের জন্য চার গুণ দরে ইভিএম কিনছে ইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য দেড় লাখ ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মেশিনগুলো কেনার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি একটি প্রকল্প অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর বেশির ভাগই ব্যয় হবে ইভিএম কেনার খাতে। প্রতি ইউনিট ইভিএমের দাম পড়ছে প্রায় দুই লাখ টাকা যা আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি।

এর আগে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। প্রথমপর্যায়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১১ হাজার ৫৫৬ টাকা দরে ১৩০ ইউনিট ইভিএম সংগ্রহ করে ওই কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩২ হাজার ৫৪৭ টাকা দরে ৪০০টি ও তৃতীয়পর্যায়ে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৪৬ হাজার ৫০১ টাকা দরে ৭০০টি ইভিএম মেশিন কেনা হয়। সব মিলিয়ে এক হাজার ২৩০ ইউনিট কিনেছিল ড. হুদা কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করার চিন্তা রয়েছে। তবে ব্যবহার করা হবে কি হবে না এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির সংলাপে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগসহ সমমনা কয়েকটি দল মেশিনে ভোটগ্রহণের পক্ষে মত দেয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা একাধিকবার বলেছেন, সবাই না চাইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। তবে সম্প্রতি এক বক্তব্যে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভুক্তির ইঙ্গিত দেন।
এ ছাড়া আইন সংস্কার কমিটিও আরপিও সংশোধন প্রস্তাবে ইভিএম অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন না করে এ মেশিনে ভোট গ্রহণ করা ঠিক হবে না। পাশাপাশি এ মেশিন পরিচালনায় দক্ষ জনবলও তৈরি করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য কমিশন সভায় উপস্থাপিত হয়নি। কমিশনে এমন সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হলে তখন সংগ্রহকৃত ইভিএমের সংখ্যা, দক্ষ জনবল ও ব্যবহারকারীদের অবস্থাসহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা প্রশাসনিক বিষয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সচিব এসব বিষয় দেখভাল করেন। এটি মূলত ইসি সচিবালয়ের কাজ।
মানুষের আস্থা অর্জন না করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সঠিক হবে না বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি বলেন, ইভিএমে কারচুপি হবে না এমন বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে। এ মেশিন ব্যবহারের উপকারিতা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে তাদের। তারপরই ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, শুধু মেশিন কিনলেই হবে না, দক্ষ জনবল ও জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
জানা গেছে, ইসির এ প্রকল্পে ছয়টি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন ক্রয়, ভোটারদের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এসব মেশিন বিভিন্নপর্যায়ের নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে বলেও প্রকল্পের ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাঁচ বছর মেয়াদে (জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন) বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য দ্রুত সময়ে নির্বাচনের ফল প্রকাশ ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফেরানো।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতি ইউনিট ইভিএমের দর প্রথমে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সর্বশেষ কমিশন যে ১৯০ সেট ইভিএম সংগ্রহ করেছে তার দর পড়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৯৭৫ টাকা। যদিও প্রকল্পে প্রস্তাবিত ইভিএমের দর ড. হুদা কমিশনের কেনা ইভিএমের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/342820