২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:৫৭

বিলম্ব ভিড় গরমে কাহিল ট্রেনযাত্রা ॥ শিডিউল বিপর্যয়

পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঘরে ফিরছে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ছবিটি গতকাল রোববার বিমান বন্দর রেলস্টেশন থেকে তোলা -সংগ্রাম
* মহাসড়কে তীব্র যানজট * নৌপথে ভোগান্তি
ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসের আগেই ঢাকা ছেড়েছেন মানুষ। দেশের মহাসড়ক গুলোতে তীব্র যানজটের কারণে এবারের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে। শুধু মহাসড়ক নয় রেলস্টেশন ও ফেরিঘাটেও দুর্ভোগের শেষ নেই। ঘরমুখো মানুষের পথে পথেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতকিছুর পরও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি যাওয়া চাই। একে তীব্র গরম, উপচে পড়া ভিড়, তার ওপর ট্রেন কখন ছাড়বে তার নেই ঠিক- এই তিনে মিলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেনে উঠতে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে প্রায় প্রতিটি ট্রেনই দেরিতে ছাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্টেশনগুলোতে যাত্রী উঠানামায় দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না ট্রেনগুলো। এজন্য স্টেশন থেকে ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। ফলে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
ঈদযাত্রার প্রথম দিন থেকে গতকাল রোববার তৃতীয় দিন পর্যন্ত ট্রেনের এমন চিত্র দেখা গেছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌপথে প্রতিদিন বাড়ি যাচ্ছেন লাখো মানুষ। উপচে পড়া যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট ছেড়ে যাচ্ছে একেকটি নৌযান। ১০ আগস্ট থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাড়ি চলে গেছে। ২০, ২১ ও এমনকি ঈদের পরেরদিন ২৩ আগস্টও নৌপথে যাত্রীদের ঢাকা ছাড়ার ঢল থাকবে বলে মনে করছে নৌ-কর্তৃপক্ষ। এবার সরকারি ছয়টি স্টিমার আর দেড়শর বেশি বেসরকারি লঞ্চ ঈদের যাত্রী বহন করছে।

সড়কপথে প্রতিবছর ঈদ যাত্রায় রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষকে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবারও ঈদ যাত্রায় সড়ক পথে কোনো সুখবর নেই। তাই নানা সমস্যার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো এখন থেকেই দিচ্ছে বিপদ সংকেত। কোথাও চলছে সংস্কারকাজ, কোথাও রয়েছে খানাখন্দ। আবার বৃষ্টির পানির কারণে কোনো কোনো মহাসড়ক এরই মধ্যে বেহাল। ফলে সড়কপথে চলাচলকারীদের আশঙ্কা, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এবারও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা হবে না।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে উত্তরবঙ্গের চিলাহাটিগামী নীল সাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি সকাল ৮টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি স্টেশনে আসে ১০টা। বেলা ১১টায়ও স্টেশন ছেড়ে যায়নি। এই দুর্ভোগে পড়ে বড়দের সয়ে গেলেও স্টেশনে সহ্যসীমার বাইরে শিশুদের। বাড়ি যাওয়ার আনন্দের চেয়ে দুর্ভোগের অবসান কখন হবে সেটাই অপেক্ষা।

গতকাল রোববার ও আজ সোমবার কর্মদিবস থাকলেও যারা ছুটি নিতে পেরেছেন তাদের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকেই। তবে ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রোববার সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সকাল থেকে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বেশিরভাগ ট্রেনই স্টেশনে আসতে এবং ছেড়ে যেতে সময় নিচ্ছে ঘণ্টা খানেক। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেন দেরিতে স্টেশনে পৌঁছানো, যাত্রীদের অস্বাভাবিক চাপ বাড়ায় এবং স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার সময় লাগার কারণে শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এই বিলম্বগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। চারটা কন্ট্রোল এবং সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সব সময় কাজ করছে। স্টেশনে আমাদের কর্মকর্তারাও পুরোপুরি সজাগ আছেন। কমলাপুর থেকেই প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী বগি ভরে যাত্রী উঠেছে ছাদে। বিমানবন্দর স্টেশনেও উঠবে যাত্রী। আর তীব্র রোদ আর গরমে ঠাসাঠাসি অবস্থায় ট্রেনের ভেতরটাও হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত। প্লাটফর্মে ফ্যান চলছে বটে, কিন্তু সে বাতাসে কেউ শীতল হচ্ছে, এমনটা নয়। ঘামে নেয়ে যাচ্ছে মানুষ। ছোটরা কান্নাকাটি করছে। এর মধ্যে সঠিক সময়ে ট্রেন ছেড়ে না যাওয়ায় অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিড় করতে থাকেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। ঈদের ছুটির দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ছয়টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি একঘন্টা দেরিতে ছেড়ে যায়। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল নয়টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটিও প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। দিনাজপুর চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটিও প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ছয়টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল আটটায়। অন্যদিকে দিনের প্রথম ঈদ স্পেশাল ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেস সোয়া নয়টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এই ট্রেনটির সময় পরিবর্তন করে ১০টা ৫৫ মিনিটে করা হয়েছে। গাইবান্ধাগামী যাত্রী আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কে যানজটের ভোগান্তি এড়াতে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। এখন ট্রেনে উঠেই দেখছি ভিড় আর ভিড়। নিঃশ্বাস নেওয়ারও কায়দা নেই।’

লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী হিমেল বলেন, ‘সড়কের যে হাল, ঈদের ট্রেনেই মানুষের ভোগান্তিহীন যাত্রার একমাত্র পথ। কিন্তু দেরিতে ট্রেন ছাড়া কারো কাম্য নয়। ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিনেও যদি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয় তবে আগামী দিনগুলোতে কী হবে?’ ট্রেনের বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘দুই একটি ট্রেন দেরিতে আসায় ছেড়ে যেতে একটু দেরি হচ্ছে। এটা সিডিউল বিপর্যয় নয়।’
ধূমকেতু, সুন্দরবন, নীলসাগর, রংপুর এক্সপ্রেস দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে আসায় এই ট্রেনগুলি যাত্রায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোনও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়। আজ সোমবার মোট ৬৮টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা আছে। এর মধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর, চারটি ঈদ স্পেশাল, বাকি ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল সার্ভিস। ট্রেনটি স্টেশনে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠতে থাকে। মুহূর্তেই পুরো ট্রেন ভরে যায়। অনেকেই আসনের টিকিট কেটেও সিটে বসতে পারেনি। মানুষের ভিড়ে নির্ধারিত বগি পর্যন্তও পৌঁছতে পারেননি কেউ কেউ।

কমলাপুরে ট্রেনে উঠতে হুড়োহুড়ি: স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানসহ সকাল সাড়ে ৬টায় স্টেশনে আসেন আব্দুল্লাহ রাজিব। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও এখন ১১টা বাজে। কখন যে ট্রেন ছাড়বে এখনও নিশ্চিত নয়। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রোববারের ট্রেনের সূচি অনুযায়ী সকাল ৬টায় কমলাপুর থেকে দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এক ঘণ্টা পর সকাল ৭টায় ছেড়ে যায়।

লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়ার কথা বেলা ৯টা ১৫ মিনিটে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ট্রেনটি স্টেশনেই আসেনি। তবে এই ট্রেনটি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দিয়েছে রেলওয়ে। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রোববার কমলাপুর স্টেশনের চিত্র এটি। গত ১১ আগস্ট যারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অগ্রিম টিকিট পেয়েছিলেন তারাই আজ ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়ছেন। কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবার মোট ৬৮টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এরমধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর, ৪টি ঈদ স্পেশাল, বাকি ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল সার্ভিস।
নৌপথে ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ: রোববার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঘরমুখো যাত্রীরা সকাল থেকেই পরিবার নিয়ে লঞ্চ টার্মিনালে আসতে শুরু করেন। বিকেল থেকে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও অনেকেই আগে এসে সিট দখল করে বসেন। অনেকে আবার লঞ্চে বসেই দুপুরের খাবার সেরে নেন। সরকারি চাকরি করেন পিরোজপুর জেলার কামাল হোসেন। পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। রাজদূত-৭ লঞ্চটি বিকেল ৫টায় ছাড়লেও তিনি সকাল ১০টায় এসে নিচতলায় বিছানার চাদর বিছিয়ে জায়গা দখলে নেন। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি, সিট পাবো না বলে আমি একা সকালে আসি। দুপুরে আমার পরিবারের সদস্যরা আসে। আগামী ২৫ তারিখ ছুটি শেষে আবার ফিরে আসবো ঢাকায়। রাজদূত-৭ লঞ্চের এক কর্মচারী বলেন, এই লঞ্চে ৭৩৭ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে এক হাজারের বেশি যাত্রী নেয়া হবে। বরগুনাগামী যাত্রী মো. হাসান বলেন, ‘লঞ্চে ওঠার পর তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না যাত্রীর ভিড় ছাড়া। যেন ঠেলাঠেলি করতে না হয়, সে জন্য পরিবার নিয়ে আগেই এসেছি। আগেই কেবিন বুক করি। তাই তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। সুন্দরবন লঞ্চের কেবিনযাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, বহু কষ্টে কেবিনে উঠলেও ডেকের যাত্রীরা যেভাবে কেবিন বাইরে বসে আছে, তাতে কেবিন থেকে বের হওয়া, বাথরুমে যাওয়ারও উপায় থাকছে না। টিপু-৭ লঞ্চের ডেকের যাত্রী হাসান মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী যদি লঞ্চে উঠানো হতো তাহলে আরামেই যাতায়াত করা যেত। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে। এ সুবিধা পেতে তারা আগাম টিকিটে সায় দিচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (কন্ট্রোল রুম) আলমগীর কবির বলেন, ‘নৌপথে ঈদযাত্রা নিয়ে আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এবার সরকারি ছয়টি স্টিমার আর দেড়শোর বেশি বেসরকারি লঞ্চ ঈদের যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকরি প্রায় ৮০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছাড়া হচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট থেকে ঈদের বিশেষ লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। ১০ আগস্ট থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাড়ি চলে গেছে। আগামী দুই দিনে আরও প্রায় তিন থেকে চার লাখ মানুষ লঞ্চযোগে বাড়ি ফিরবে। অর্থাৎ প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছেড়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ আগামী তিন দিনে ঢাকা ছাড়বে।

তিনি আরও বলেন, কাল থেকে গার্মেন্ট ছুটি হওয়ায় শেষ দুই দিনে লঞ্চে যাত্রীর ঢল নামবে। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। এবার পাঁচদিন আগে থেকেই বিশেষ সার্ভিস চালু হয়, যাতে মানুষ আগে থেকেই ধীরে-সুস্থে ঘরে ফিরতে পারে। ঈদে মানুষের ঢল নামায় ধারণক্ষমতার চাইতে লঞ্চে ২০ শতাংশ যাত্রী বেশি উঠছে। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। লঞ্চ ছাড়ার আগে তা পরীক্ষা করার অনুমতি দেয়া হয়। এবার বরিশালসহ বেশ কয়েকটি রুটে উন্নত সেবাযুক্ত অত্যাধুনিক কয়েকটি লঞ্চ চালু করা হয়েছে। সেসব লঞ্চের কেবিনের টিকিট অনলাইনে ছাড়া হয়। ইতোমধ্যে সব কেবিন ভাড়া হয়ে গেছে। তিনি জানান, এবার ঈদযাত্রায় নৌপথ নির্বিঘœ রাখতে এরই মধ্যে পণ্যবাহী ও বালুবাহী নৌযানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নদীতে মাছ ধরার জালও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ঈদের কয়েক দিনের জন্য। অন্যদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় নৌবন্দরে র্যা ব, পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে মোবাইল কোর্ট। ঈদ যাত্রায় বাসে ও সড়ক পথে সীমাহীন ভোগান্তি।

ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মহাবিপদ: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গে ১৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে এখনো চলছে চার লেনের কাজ। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেনে গাড়ি চলাচল করলেও সড়কের ওই অংশের দুই পাশে এখনো পিচ ঢালাই হয়নি। ফলে আসন্ন ঈদ যাত্রা নিয়ে চরম ভোগান্তি নিয়ে ফিরছে মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেন সড়কে ২৩টি ব্রিজ খুলে দেয়ার কারণে এবার কোনো ভোগান্তি হবে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু টোল প্লাজার পশ্চিম পাশের সড়কটি খানাখন্দে ভরা। ফলে প্রতিবছরের মতো এবারও ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে এ পথে চলাচলকারীদের। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সেতুর নির্মাণকাজ চলার কারণে মহাসড়কের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে এখন থেকেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভোগান্তির জায়গা গাজীপুর অংশে। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীর তুরাগ সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে পানি জমে দুই পাশে তৈরি হয়ে আছে বিশাল নালা। এর সুরাহা না হলে ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা, কাসেমাবাদ, বামরাইল, অশোকাঠি, বাটাজোর, বার্থী, কটকস্থল, টরকী, কসবা, গৌরনদী, দক্ষিণ বিজয়পুর, মাহিলাড়া ও জয়শ্রী এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক এখন বেহাল। ঢাকা-আরিচা সড়কের সমস্যা অবৈধ পার্কিং আর হাট-বাজার।
সরেজমিন রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, বাসের সিডিউল লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস কাউন্টার ও সড়কের ওপর অবস্থান করছেন। কল্যাণপুরে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, রূপা এন্টারপ্রাইজ, নাহার এন্টারপ্রাইজ, ডিপজল, টিআর ট্রাভেলস, সাথী, এসবি, সুপার ডিলাক্স, সনি সুপার পরিবহনসহ দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোতে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গাবতলী বাস কাউন্টারে র্যা ব ও পুলিশের আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া বাস ও ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের প্রচারকেন্দ্র সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

http://www.dailysangram.com/post/342538