১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১১:০৪

সড়কে ধীরগতি ট্রেনেও বিলম্ব

ঈদযাত্রা

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাড়িফেরা মানুষের দুর্ভোগ ততই বাড়ছে। এবারের ঈদযাত্রাতেও মহাসড়কে যানজট, ফেরিঘাটে নদী পারাপারে দীর্ঘ অপেক্ষা ও ট্রেনে বিলম্ব, ভিড়ে ভোগান্তি সইতে হচ্ছে যাত্রীদের। তার পরও দুর্ভোগ আর পথের বাধা তুচ্ছ করে লাখো মানুষ ঘরে ফিরছেন স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে।

এদিকে গতকাল বিভিন্ন মহাসড়কে গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে। ট্রেনও ছাড়ছে বিলম্বে। এ ছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর ভিড় ছিল লক্ষণীয়।

গতকাল শনিবার বিকেলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, সড়কপথে এবারের ঈদযাত্রা হবে নির্বিঘ্ন। কয়েকটি জেলায় নির্মাণাধীন রাস্তা বাদ দিয়ে মূল সড়ক পুরোপুরি যানজটমুক্ত থাকবে।

মন্ত্রী বলেন, আগে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা অংশে যানজট হতো। এ অংশ চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। সেখানে এরই মধ্যে ২৩টি ছোট-বড় সেতু চালু হয়েছে। যেসব রাস্তায় সমস্যা ছিল, সেগুলো দূর করা হয়েছে। তবে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো সড়কে ধীরগতিতে চলায় কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে। ঈদযাত্রা যেন এ কারণে ব্যাহত না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার

ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। আগামীকাল সোমবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। তাই কাল থেকে ঈদযাত্রার চিরচেনা উপচে পড়া ভিড়ের দেখা মিলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে গত শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে গেছে ঈদযাত্রা।

গতকাল দুপুরে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ হাজারো যাত্রী। প্রায় প্রতিটি ট্রেন ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বে। ট্রেনের ভেতরে যত, ছাদের যাত্রী তার চেয়ে বেশি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরাতেও উঠেছে আসন ছাড়া টিকিটের যাত্রী। বাধা দিয়েও ঠেকাতে পারেনি রেল পুলিশ।

গতকাল নীলসাগর এক্সপ্রেসের ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরিতে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ছাড়ে। সকাল ৬টার ধূমকেতু এক্সপ্রেস কমলাপুর ছাড়ে সকাল ৭টায়। রংপুর এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা, সুন্দরবন এক্সপ্রেস পৌনে দুই ঘণ্টা এবং লালমনি এক্সপ্রেসও দেড় ঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা করে।

দুপুর ২টা ২০ মিনিটের 'মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস' ছাড়ে এক ঘণ্টা দেরিতে। এ ট্রেনের যাত্রী মারজিয়া আলী ফিজ্জা জানান, তিনি পৌনে ২টায় স্টেশনে এসেছেন। প্রচণ্ড গরমে স্টেশনে বসাই যাচ্ছে না। এর মধ্যেই হাজারো মানুষ গাদাগাদি করে ট্রেনের অপেক্ষায়। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে শীতাতপ শ্রেণির আসন সংখ্যা ৫৮। ফিজ্জা টেলিফোনে সমকালকে জানান, অন্তত ৩০ জন যাত্রীকে দাঁড়িয়ে তুলেছে।

ট্রেন সময়সূচি মেনে না চলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সময় রক্ষায় রেল মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে বৈঠক করেন। সময়সূচি রক্ষা করতেই এ বৈঠক হয়। তবে এতে খুব একটা ফল হয়নি।

রেল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল তেজগাঁও স্টেশনে একটি ট্রেন বিকল হওয়ায় সময়সূচি এলোমেলো হয়ে যায়। ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন করায় ট্রেন পূর্ণ গতিতে চলতে পারছে না। এ কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি সময় লেগেছে। এর প্রভাব পড়েছে সময়সূচিতে।

ভিড় বেড়েছে ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোতেও। ঢাকা থেকে সকালে অধিকাংশ বাস ছেড়েছে সময়সূচি মেনেই। কিন্তু পদ্মা নদী পারাপারে ফেরি ঘাটে দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে বাসে বিলম্ব হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে যেসব বাস ফিরছে সেগুলোও দেরি করে এসেছে। এ কারণে সন্ধ্যার দিকে বাস ছাড়তে এক থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। গত শুক্রবারের মতো দীর্ঘ যানজট না হলেও গতকাল মহাসড়কে গাড়ি চলেছে ধীরে ধীরে।

র্যা বের তথ্যানুযায়ী, গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু এলাকায় গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে। একই অবস্থা ছিল দাউদকান্দি সেতু এলাকায়। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা অংশে যানজট না হলেও যমুনা নদীর ওপারে সিরাজগঞ্জে গাড়ির গতি ছিল ধীর।

নাব্য সংকটে গতকাল স্বাভাবিক ফেরি চলাচল করেনি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ পথে। বড় ফেরিগুলো বন্ধ থাকায় বিকেলে ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় ছিল অন্তত ৩০০ গাড়ি। নদী পারাপারে তিন থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ফেরি পেতে। তবে আগের দিনের চেয়ে কম যানজট ছিল আরিচা ঘাটে। কিন্তু শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি কম থাকায় দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ গাড়ি আরিচা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সেখানেও নদী পার হতে দীর্ঘ সময় লাগছে।

দুপুর থেকে গাবতলী, কল্যাণপুরে যাত্রী বাড়ছে বলে জানান হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক আসিফ।

নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক সৌখিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে বাস আটকা পড়েছে। আগের রাতে যেসব বাস ঢাকা ছেড়েছে সেগুলো বিলম্বে ফিরছে।

যশোর-খুলনার পথে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক রবিন আহমেদও জানান, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরি পারাপারে ১৪-১৫টি বাস আটকে আছে তাদের। তবে পর্যাপ্ত বাস থাকায় আধা ঘণ্টা পরপর ছাড়ছে।

http://samakal.com/bangladesh/article/18081050