রাজধানীর বিমানবন্দরে ট্রেনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ছবি-যুগান্তর
১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১১:০১

ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না ঘরমুখো যাত্রীদের

অনেকটা স্বস্তিতে নৌপথের যাত্রীরা * ফেরিঘাটগুলোতে গাড়ির জট * মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি চলাচলে উন্নতি

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। রাজধানী থেকে সড়কপথে বের হওয়া থেকে শুরু করে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে যাওয়ার সময় বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়।

মাওয়া (শিমুলিয়া)-কাঁঠালবাড়ি রুটে ফেরি চলাচল বেড়েছে। এ রুটে নাব্য সংকট দূর হওয়ায় এদিন ১৬টি ফেরি চলাচল করেছে। তবুও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে গাড়ির জট ছিল। এছাড়া রেলওয়েতে সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এতে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের জন্য রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ অন্যান্য স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ সময় যাত্রীদের বসে থাকতে হয়েছে।
যাত্রীরা জানান, প্রচণ্ড রোদে গরমের তীব্রতার মধ্যে সড়ক ও ফেরি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের। এ সময় অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে অনেকটা স্বস্তিতে গেছেন দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চের যাত্রীরা। এ পথে যাত্রী বাড়ার সঙ্গে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে ঈদযাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরগুলো। একই ভাবে স্থানীয় প্রশাসনও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুর নিচে বিকল্প হিসেবে ফেরি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পশুবাহী গাড়ি দ্রুত পারাপারের সুবিধার্থে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় পৃথক ফেরি চালু করা হয়েছে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি রুটের নাব্য সংকট সমাধানে ড্রেজিং অব্যাহত রয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রোড ও ফেরি ঘাটের যানবাহন চলাচলের পরিস্থিতি সম্পর্কে র্যা ব শনিবার বেলা ৩টার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজ, মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে তীব্র যানজট ছিল।

তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা-সিলেট রুটে সহনশীল যানজট ছিল। অপরদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, পশুবাহী গাড়ির কারণে সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল। সবগুলো সড়ক-মহাসড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করেছে। কোথাও বড় ধরনের যানজট সৃষ্টি হয়নি।

যাত্রার শুরুতেই ভোগান্তি : গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোতে শনিবার সকালে যাত্রীদের তেমন ভিড় না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে। ঈদের সরকারি ছুটি মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে। মাঝে রবি ও সোমবার অফিস-আদালত খোলা থাকবে।
তবে অনেকেই এ ২ দিন ছুটি নিয়ে আগেভাগে বাড়ির পথ ধরতে শুরু করেছেন। গাবতলীতে খুলনা-যশোরগামী কয়েকজন যাত্রী জানান, বাসের জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। এ বিষয়ে শৌখিন পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে বাস আটকা পড়েছে।

এজন্য রাতের বাসগুলো ঢাকায় ঢুকতে দেরি করেছে। যশোর-খুলনার পথে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক রবিন জানালেন, ফেরি পারাপারে তাদের ১৪-১৫টি বাস আটকে আছে। তবে পর্যাপ্ত বাস থাকায় আধা ঘণ্টা পরপর গাড়ি ছাড়ছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, শেরপুর ও সিলেট এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার বাস ছাড়ে। ময়মনসিংহের পথে কোনো বাসেই আগাম টিকিট দেয়া হয় না। এ টার্মিনালে যাত্রী ইমরান রুকসাদ বলেন, ভিড়ের মধ্যে পড়তে চাই না বলেই ছুটি নিয়ে আগেভাগে রওনা দিয়েছি।

টার্মিনালে এসেই টিকিট পেয়েছি, কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও পরিবহন মালিক সমিতির যৌথ উদ্যোগে ভিজিলেন্স টিমকে কাজ করতে দেখা গেছে।
ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় : ঈদ সামনে রেখে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখো মানুষ। স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে আসতে না পারায় দেরিতে কমলাপুর ছেড়েছে।
জানা যায়, ঈদ স্পেশাল ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি ছেড়েছে বেলা ১১টায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। রাজশাহীগামী যাত্রী আরমান হোসেন জানান, মহাসড়কের ভোগান্তি কমাতে ট্রেনে বাড়ি ফিরছি, সেই ট্রেনেও দেরি।
ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়টি স্বীকার করে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, শনিবার রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও এটি ছেড়ে যায় ৭টায়। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে সকাল ৮টায়।
দিনাজপুর চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ৯টা ৪৫ মিনিটেও স্টেশনে দাঁড়ানো ছিল। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্টেশনে অপেক্ষমাণ ছিল।

তিনি বলেন, ঈদের সময় ১-২ ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন চলাচল আমরা মাথায় নিচ্ছি না। আমরা নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে ট্রেন চালাচ্ছি। কারণ, ঈদের সময় কোনো অবস্থাতেই নির্ধারিত গতি নিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত যাত্রী চাপে ট্রেন নির্ধারিত গতির চেয়ে কম গতিতে চালাতে হচ্ছে। ফলে সিডিউল কিছুটা বিপর্যয় হচ্ছে।
বেড়েছে লঞ্চের সংখ্যা : ঢাকা নদীবন্দরে যাত্রী বাড়ার সঙ্গে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের রোটেশন প্রথা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্পেশাল লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
ঢাকা নদীবন্দরে কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) একেএম আরিফ জানান, ঈদ সামনে রেখে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বন্দরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যা ব মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি জানান, শুক্রবার ১৬টি স্পেশাল লঞ্চসহ ৯৬টি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মো. আলমগীর কবির বলেন, সদরঘাটে শতাধিক লঞ্চ অপেক্ষমাণ রয়েছে। যাত্রী উপস্থিতি বাড়লে অপেক্ষমাণ লঞ্চ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত শতাধিক লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জে ১২ কিলোমিটার যানজট : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোল চত্বর থেকে কোনাবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

ঢাকামুখী পশুবাহী গাড়ি ও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট : কুমিল্লা ব্যুরো ও দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, শনিবার ভোর থেকে দাউদকান্দি গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে গৌরিপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিমি. এলাকায় যানজট ছিল। এতে ঢাকাগামী যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন।
পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এদিকে ঈদ উপলক্ষে দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতু এলাকার যানজট মোকাবেলায় দুই সেতুর নিচ দিয়ে ফেরিতে যানবাহন পারাপারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ৫ দিন ধরে দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যানজটে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দেয়। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার-শনিবার ছুটির দিন হওয়ার কারণে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।
এদিকে দুপুরের দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঈদে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও সওজ কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা দেন।

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে চলছে ১৬টি ফেরি : শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ফেরি চলাচল বেড়েছে। শুক্রবার এ রুটে ১০টি ফেরি চললেও নাব্য সংকট দূর হওয়ায় শনিবার ১৬টি ফেরি চলাচল করেছে।
এতে দুই পারেই গাড়ির জট কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থা থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছে বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ঘাট সূত্রে জানা গেছে, এ নৌরুটে ৮৬টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করছে। শনিবার দুপুর থেকে কে টাইপের ১১টি, ডাম্প ফেরি ৫টিসহ ১৬টি ফেরি চলাচল শুরু করেছে। তবে নাব্য সংকটের কারণে এখনও রো রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/82167