১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১০:৫৯

অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ, ইজারায় নৈরাজ্য

রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাট ইজারার নামে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) চক্রের সাথে একাত্ম হয়ে আটটি হাট খাস কালেকশনের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। আর ইজারা দেয়া হাটগুলোও বিস্তৃত হয়েছে নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে।
হাটের আশপাশের খালি জায়গা, হাঁটাচলার পথ এবং প্রধান সড়কও দখল করে উঠানো হয়েছে পশু। এতে সড়কের যানজটে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ডিএসসিসির খাস কালেকশনে দেয়া একটি হাট ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এরিয়ায় পড়েছে বলে সংস্থাটি দাবি করেছে। ডিএসসিসি ওই হাটটি ‘মেরাদিয়া মৌজার দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগাপুর নগর লোহারপুলের পূর্ব অংশ এবং খোলা মাঠসংলগ্ন আশে পাশের খালি জায়গা’ উল্লেখ করলেও ডিএনসিসি বলছে ওটিই আফতাবনগর হাট।

প্রতি বছর ওই স্থানে ডিএনসিসি ইজারা দিলেও এবার নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল করেছে। সেই জায়গায় ডিএসসিসি খাস কালেকশনে হাট ইজারা দেয়ায় বিস্মিত ডিএনসিসি।
সরেজমিন দেখা গেছে, মোহাম্মদপুরের বছিলায় পুলিশ লাইনের খালি জায়গায় অস্থায়ী হাট ইজারা দিয়েছে ডিএনসিসি। এ হাটটি পুলিশ লাইনের খালি জায়গাসহ আশপাশের সব খালি জায়গায় বিস্তৃত হয়েছে। শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, সড়কের অংশ বিশেষ দখল করে গরু বাঁধছে হাট ইজারাদার।
এ ব্যাপারে হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. ইমরান হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গরু আসায় কিছু গরু সড়কের পাশে বাঁধা হচ্ছে। তবে আমরা চলাচল যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।
ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠে হাট ইজারা দিয়েছে ডিএসসিসি। এ হাটটি হাজারীবাগ বেড়িবাধসংলগ্ন এলাকার খালি জায়গা ও সড়কসহ বেড়িবাঁধের পাশের প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এসব মনিটরিংয়ে কোনো ভূমিকা নেই ডিএসসিসির। একই চিত্র দনিয়া, শ্যামপুর, গোলাপবাগ, কমলাপুর, পুরান ঢাকার ইসলামবাগ, মিরপুর ৬, ১২ ও খিলক্ষেতসহ অন্য হাটগুলোরও।
কয়েক দফা দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ দরপত্র জমা না দেয়ায় ডিএসসিসি আটটি হাট খাস কালেকশনের জন্য ইজারা দিয়েছে। এগুলো থেকে নামমাত্র কালেকশনের টার্গেট দেয়া হয়েছে। অভিযোগ মিলেছে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তুষ্ট করার লক্ষ্যে মেয়র এই অস্থায়ী বরাদ্দ দিয়েছেন।
এমন একটি যোগসাজশ আগে থেকে হয়েছিল বলেই ওই হাটগুলোতে আগ্রহী কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। এখন যে দামে খাস কালেকশনের ইজারা দিয়েছে ডিএসসিসি, তাতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সংস্থাটি।

খাস কালেকশনে বরাদ্দ দেয়া হাটগুলো হচ্ছে দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগাপুরনগর (মেরাদিয়া মৌজা) লোহারপুলের পূর্ব অংশ এবং খোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের খালি জায়গা, লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন বালুর মাঠ এবং সংলগ্ন এলাকা, কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গায়, শনিরআখড়া ও দনিয়া মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধুপখোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কাউয়ারটেক মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং খোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল যুগান্তরকে বলেন, সত্যি বলতে অস্থায়ী পশুর হাটগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। তবুও নগরবাসীর প্রয়োজনে প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশন এসব হাট ইজারা দিয়ে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএসসিসি এলাকার কয়েকটি হাটের বারবার টেন্ডার করা হলেও দরপত্র জমা পড়েনি। এজন্য এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র মহোদয় সেসব হাট খাস কালেকশনে বসানোর অনুমতি দিয়েছেন।

আরেক প্রশ্নে খান মো. বিলাল বলেন, বনশ্রীসংলগ্ন এলাকার একটি হাট বসানোকে কেন্দ্র করে ডিএনসিসি বলছে তাদের জায়গায় ওই হাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে ওটি সীমান্তবর্তী এলাকা। এ কারণে এমনটি মনে হতে পারে। তবে হাটের পরিধি হয়তো কিছুটা বেড়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ডিএসসিসি খাস কালেকশনে যে আটটি হাটের অনুমোদন দিয়েছে তার একটি ডিএনসিসির আফতাবনগর এলাকা। এ হাটটি যেন বসতে না পারে সে বিষয়ে আমরা ডিএনসিসিকে জানিয়েছি।
একই সাথে পুলিশ ও র্যা বকেও জানিয়েছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএনসিসির ইজারা দেয়া হাটগুলো যেন ইজারার শর্ত মেনে পরিচালনা করে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধে ডিএনসিসির মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/82166