১৮ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ১২:৫৪

ঘাটে ঘাটে দুর্ভোগ

ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফুলেফেঁপে ওঠেনি পদ্মা। উল্টো নাব্য সংকটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে স্বাভাবিকভাবে ফেরি চলাচল করতে পারছে না। ২০টি ফেরির মধ্যে ছোট পাঁচটি চলছে। বিপরীতচিত্র পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে। সেখানে তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুই ঘাটেই গতকাল শুক্রবার ছিল পারাপারের অপেক্ষায় থাকা গাড়ির দীর্ঘ সারি। ঘাটের চাপে মহাসড়কে ছিল যানজট।

ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলাগামী যানবাহন মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়। ঘাট বন্ধ থাকলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকে। নাব্য সংকটে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি পারাপার বন্ধের উপক্রম হওয়ায় এই ঘাটের গাড়ি যাচ্ছে পাটুরিয়ায়। গাড়ির চাপ বাড়ায় দুর্ভোগ হচ্ছে এ ঘাটেও। গতকাল ১১ কিলোমিটার যানজট ছিল ঘাটের প্রবেশপথে। এর প্রভাবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দিনভর ধীরগতিতে গাড়ি চলেছে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ও বাইপাস চ্যানেলে নয়টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণ কাজ চলছে। ঈদের আগেই সংকট দূর হবে।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, ১২ দিন ধরে ড্রেজিং চললেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। বরং ড্রেজিংয়ের পাইপ নৌপথের মুখে থাকায় ফেরি চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় বড় ফেরি চলতে পারছে না। 'কে-টাইপ' ও 'মিডিয়াম'সহ পাঁচটি ছোট ফেরি চলছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না।

ঘাট সূত্র জানিয়েছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার গাড়ি পারাপার হয়। ঈদের সময় এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। নাব্য সংকটের কারণে বর্তমানে দিনে এক হাজার গাড়িও পার করা যাচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার শিমুলিয়া প্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় প্রায় ৪০০ গাড়ি আটকে ছিল।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, সঠিকভাবে জরিপ না করেই ড্রেজিং করায় নাব্য সংকট দূর হচ্ছে না। সংস্থাটির শিমুলিয়া কার্যালয়ের এজিএম খালেদ নেওয়াজ জানিয়েছেন, চারটি রো রোসহ সাতটি ফেরি পাটুরিয়া ঘাটে পাঠানো হয়েছে। শিমুলিয়া ঘাট এড়িয়ে পাটুরিয়া দিয়ে পদ্মা পার হতে পরিবহন মালিক-চালকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, গত ১২ দিনে সাত লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেনি। বরিশালগামী ট্রাকের চালক মজনু মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘাটে আটকে আছেন। রোববার থেকে মহাসড়কে ট্রাক চলতে পারবে না। ঈদের আগে বরিশাল পৌঁছাতে পারবেন কি-না বুঝতে পারছেন না।

মাদারীপুরের কাঁকন আহমেদ জানান, তিনি যে বাসে ঢাকা থেকে এসেছিলেন তা তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ফেরিতে উঠতে পারেনি। তাই বাস ছেড়ে স্পিডবোটে নদী পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওপার থেকে অন্য বাসে গন্তব্যে যাবেন। তিনি জানান, ঢাকা থেকে বাসে শিমুলিয়া ঘাটে যেতে লাগে ঘণ্টাখানেক। কিন্তু ঘাটে চাপ থাকায় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা।

শিমুলিয়ার মতো দুর্ভোগ হচ্ছে পাটুরিয়াতেও। গত বৃহস্পতিবার আট কিলোমিটার যানজট ছিল ঘাটে। ঈদযাত্রার চাপ বাড়তে না বাড়তেই গতকাল যানজট তিন কিলোমিটার বাড়ে। ঘাটে চাপ বাড়ায় গাবতলী থেকে ঘাট পর্যন্ত ধীরগতিতে গাড়ি চলেছে। স্বাভাবিক সময়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছতে লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। গতকাল থেকে লাগছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

পাটুরিয়া ঘাটে ছোট-বড় মিলিয়ে ফেরির সংখ্যা ২১। কিন্তু যান্ত্রিক ক্রটিতে মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে মেরামতের জন্য ভাসমান কারখানা মধুমতিতে পড়ে থাকছে ফেরি। শিমুলিয়া ঘাটে রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় সেসব গাড়িও পার হচ্ছে পাটুরিয়া হয়ে। বাড়তি চাপ যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের প্রবেশমুখ থেকে আটপাড়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার যানজট। গাড়ি নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র রোদ ও গরমে কষ্ট পাচ্ছেন যাত্রীরা। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগছে নদী পারাপারে। গাবতলী টার্মিনাল থেকে পদ্মার ওপারের দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এখনই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে ঈদে কী হবে!

গাজীপুর থেকে আসা কুষ্টিয়াগামী ট্রাকের চালক মনির হোসেন জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছান তিনি। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ফেরি পার হতে পারেননি।

গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা মাদারীপুরগামী বাসচালক সুমন বেপারী জানান, গাবতলী থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বাস ছেড়ে দুপুর ১টায় পাটুরিয়া আসেন। কিন্তু দুই ঘণ্টায়ও ফেরি পার হওয়ার সিরিয়ালই পাননি।

ঢাকা থেকে যশোরগামী বাসের যাত্রী বিল্লাল শেখ, লিমা আক্তার ও নার্গিস বেগম জানান, যানজট এবং ফেরিঘাটে আটকে থাকার ভয়ে তারা অগ্রিম ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু সেই ভোগান্তিরই শিকার হতে হলো।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, ২১টি ফেরির ১৯টি সচল রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক অপু জানান, ফেরিগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো। তাই মাঝে মধ্যেই বিকল হয়। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ঈদে যেন দুর্ভোগ কম হয়।

 

http://samakal.com/bangladesh/article/1808996