মগবাজার–মৌচাক সড়কের দুই পাশে খুঁড়ে পাইপ বসানো হচ্ছে। গতকাল দুপুরে মগবাজার মোড়ে।
১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:০৬

মগবাজার–মৌচাক রাস্তা

খোঁড়াখুঁড়িতে ব্যাপক দুর্ভোগ

ভাঙা রাস্তা, যানজট, ধুলাবালু, ব্যবসায় মন্দা, ভোগান্তি—এই ছিল মগবাজার থেকে মৌচাক পর্যন্ত এলাকায় গত ছয় বছরের চিত্র। এই ব্যাপক ভোগান্তি হয়েছিল ঢিমেতালে চলা উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের জন্য। গত বছর উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ভোগান্তি কমে। স্বস্তি ফিরে আসে স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাসি ফোটে ব্যবসায়ীদের মুখে। কিন্তু সেই হাসিমুখ আবার মলিন হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রমে, ফিরে এসেছে সেই দুর্ভোগ।
ডিএসসিসির উদ্যোগে মগবাজার থেকে মৌচাক পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে বসানো হচ্ছে পানিনিষ্কাশনের পাইপলাইন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কচ্ছপগতিতে চলছে পাইপ বসানোর কাজ। ফুটপাতজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গত রোজার ঈদেও তাঁরা ঠিকভাবে তাঁরা ব্যবসা করতে পারেননি, আসছে ঈদেও করতে পারবেন না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মগবাজার মোড়ের পাশ থেকে মৌচাক যাওয়ার রাস্তার পুরো ফুটপাত কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে পানিনিষ্কাশনের পাইপ। পুরোনো পাইপ, ইট-সুরকি ও মাটি ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। এতে মৌচাকে যাওয়ার রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। বেশি সংকীর্ণ হয়েছে আড়ংয়ের পাশে। সেখানে উড়ালসড়কের একটি র্যাম্প নেমে যাওয়ায় এমনিতেই রাস্তার এই অংশ তুলনামূলকভাবে সরু। এই সরু রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাজুড়ে রাখা হয়েছে মাটি-ইট-সুরকি। ফলে এখানে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথের পাশে রাস্তার ওপর বালু ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। ফলে রাস্তার বড় একটি অংশ দিয়ে যান চলাচল করতে পারছে না। আবার মৌচাক থেকে মগবাজারে আসার পথে মৌচাক মোড়ের একটু সামনে থেকে মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের পাশ পর্যন্ত পাইপলাইন বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে।
রাস্তার দুই পাশের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, গত রমজানের আগে এই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে। এলাকার গুরুত্ব বুঝে যে গতিতে কাজ করার কথা ছিল, সেখানে কাজ হচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, রমজানের খোঁড়াখুঁড়ির পর অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল। আবার যখন কাজ চলে তখনো ১০-১৫ জনের বেশি লোক কাজ করে না। ধীরগতির কাজের কারণে ব্যাপক জনভোগান্তি হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, মগবাজারের পাশে, মৌচাক মোড়ের পাশে এবং মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জের পাশে তিন ভাগে ভাগ হয়ে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। তাঁদের সংখ্যা ১৫-১৬ জন।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘উড়ালসড়ক চালু হলে ভেবেছিলাম ভোগান্তির শেষ। এবার ছয় বছরের ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আবার ভোগান্তি শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় দুই ঈদের আগে। ডিএসসিসির কারণে দুই ঈদেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিটি করপোরেশন চাইলে দুই মাসের মধ্যেই এই কাজ শেষ করতে পারত। এতে আর সদিচ্ছা থাকলে এই পাইপলাইন বসানোর কাজ উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের সময়ই করা যেত।’
এই রাস্তায় যানজটও নিত্যদিনের ঘটনা। সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা কাউসার আহমেদ বলেন, ফুটপাত নষ্ট করে রাখায় সব মানুষ রাস্তায় হাঁটে। ফলে যানজট বাড়ে। তিনি বলেন, রিকশায় রাস্তার মৌচাক থেকে মগবাজার বা মগবাজার থেকে মৌচাক যেতে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ও লাগে। তাই বেশি যানজট দেখলে হেঁটেই চলে যাই। তবে বৃষ্টিতে আর হাঁটার উপায়ও থাকে না।’ খোঁড়াখুঁড়ির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কেইস প্রকল্পের আওতায় ডিএসসিসি এই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মফিজুর রহমান খান বলেন, মগবাজার-মৌচাকসহ আরও কয়েকটি রাস্তায় একসঙ্গে কাজ হচ্ছে। অন্য রাস্তার কাজগুলো শেষ হয়েছে। মগবাজারের কাজটিই একটু পিছিয়ে পড়েছে। আগামী অক্টোবর নাগাদ কাজ শেষ হবে। কাজটির কারণে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।

 

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1552861/