১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ৯:৪৮

দেখা অদেখা

যত গর্জে তত বর্ষে না

সালাহউদ্দিন বাবর

এমন আশা ছিল যে, এবার তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা সৃষ্টি হবে। তিন সিটির নির্বাচনের আগে কমিশনের হাঁকডাকে মনে হয়েছিল যে, তারা এবার দেখিয়ে দেবেনÑ কেমন করে ভালো নির্বাচন করতে হয়। কিন্তু নির্বাচনের দিন দেখা গেল, মেঘের গর্জন যত, বর্ষণ ততটা হয় না। তাই এখন ভাবতে হবে, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিভাবে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এর আগে কমিশনের ব্যর্থতার কারণে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছিল। সংবিধানে এই ব্যবস্থা থাকাকালে মোট তিন দফা জাতীয় নির্বাচন হয়েছে এবং সেসব নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে কোনো মহল থেকেই প্রশ্ন ওঠেনি। বেশ কিছু কাল আগে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হয়েছিল, তারা প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চান। এই বক্তব্য এবং বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে সারি সারি প্রশ্ন ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ভালো তথা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে, রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায় সব দলের দাবি অনুসারে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি অবিলম্বে সক্রিয় বিবেচনায় নেয়া উচিত। এ বিষয়ে যে দ্বিমত রয়েছে, তা নিষ্পত্তির জন্য একটি জাতীয় সংলাপ হওয়া ব্যতীত কোনো উপায় নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে না পারলে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এমন আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে সবার সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে। কেননা এই বিপর্যয় রুখতে না পারলে কেউ তা থেকে রেহাই পাবে না। দেশের প্রতি কারো ভালোবাসা এবং দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাই আশা করা যায়, দেশে যেকোনো দুর্যোগের সম্ভাবনা দেখা দিলে কেউ এর প্রতিরোধে পিছপা হবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মানুষ আশা করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য সবাই একযোগে কাজ করবেন এবং আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন।
এর আগে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবশ্য সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌজন্যবোধ এতটাই কম যে, অতীত থেকে এর কোনো নজির পেশ করা সম্ভব হবে না। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে মতবিনিময়ও সম্ভব নয়। সবাই এক অলঙ্ঘনীয় দেয়াল দিয়ে ঘেরা অবস্থানে থাকেন, ফলে কস্মিনকালেও তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাদের মিলিত হওয়ার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই পরস্পরের আনুষ্ঠানিক সংলাপ হওয়া কঠিন। তার পরও এবার মনে হয় কঠিন বরফ কিছু গলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের সাথে টেলিফোনে কথা হতে পারে।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, তিনি টেলিফোনের অপেক্ষায় থাকবেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অনেক সময়ই সৌজন্যমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে বড় ধরনের বহু আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে। এভাবে দেশের অনেক বড় সমস্যারও সুরাহা হয়ে যেতে পারে। তাই এটা আশা করা যেতে পারে, আলোচনার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তাকে আরো অর্থপূর্ণ করে তোলার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবেন না।
সংসদীয় সরকারের স্বরূপ কেমন হতে পারে, তার উদাহরণ রয়েছে ব্রিটেনে। সেখানে রানী বা রাজার সরকারি দল এবং বিরোধী দলও রানী বা রাজার। ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্র পরিচালনা করে আর বিরোধী দল সরকারের নীতি কার্যক্রম পরিচালনা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। ভারতেও এটাই দেখা যায়। সেখানে সরকার দেশ পরিচালনা করে, বিরোধী দল তাদের নীতি ও কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করে। বাংলাদেশের যেহেতু সংসদীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তাই ভারত ও ব্রিটেনের অনুরূপ চলা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছেÑ অতীত থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সঠিকভাবে সংসদীয় ব্যবস্থাকে অনুসরণ করে চলা হয়নি। আর এখন তো সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল চরিত্রই হারিয়ে গেছে। জাতীয় সংসদে কোনো বিরোধী দলই নেই, সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররাই সংসদে রয়েছে। অথচ আজ যদি সংসদে সত্যিকার অর্থে কোনো বিরোধী দল থাকত, দেশের যে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে আছে তা হতো কিনা সন্দেহ। আর হলেও সঙ্কট নিরসনে যে সংলাপের প্রয়োজন অনুভব করা হচ্ছে, তার আর প্রয়োজন হয়তো পড়ত না। সংসদে জাতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার বহু উপায় রয়েছে। তার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা যেত। কিন্তু আজ সংসদের যে অবস্থা, তাতে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা অর্থহীন।
সংসদের এই অকার্যকারিতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট সব মহল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত যে, সংসদকে অর্থপূর্ণ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানের রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে যে অন্তরায়গুলো রয়েছে, বিশেষ করে অর্থপূর্ণ সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য যে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দরকার, তাকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতাসীন সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা বলে আসছে। সরকারি দল অবশ্য এই দাবির বিপরীতে সংসদে অবস্থানকারী দলগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছে। এ কথা, আর সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ বর্তমান সংসদে কেবল আওয়ামী লীগ ও তার নির্বাচনী মিত্ররাই রয়েছে। তাই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের এই প্রস্তাবের ব্যাপারে বিরোধী দল রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই অদ্ভূূত সঙ্কট নিরসন করতে হলে উভয়পক্ষকে সমঝোতায় আসতে হবে। অতএব, এ নিয়ে আলোচনায় বসা ছাড়া বিকল্প নেই।
বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশে বহু মত থাকবে, আর তা নিয়েই সহাবস্থান করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এ দেশের যে হাল, তাতে সরকারের মনোভাব ও তাদের কার্যক্রম থেকে এটা বোঝার উপায় নেই যে, এখানে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। বিরোধী দলগুলোর পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের সভা-সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়া হয় না। প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অব্যাহতভাবে হামলা-মামলা-নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে তাদের গণতান্ত্রিক বা মৌলিক অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায় ঘটছে। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক সমাজ অবহিত। সরকারের সতর্ক থাকা উচিত, যাতে তাদের অসঙ্গত আচরণের কারণে গণতান্ত্রিক পরিবেশের আরো অবনতি না ঘটে। সে ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সমাজবিরোধী শক্তি এর সুযোগ নিয়ে পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তুলবে। নির্বাচন ও অন্যান্য ব্যাপারে দেশের পরিবেশ ও জননিরাপত্তা তখন হুমকির মুখে পড়বে। বিশেষ কারো অহমিকার কারণে যদি কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে তবে তার দায় নিতে হবে সরকারকেই।
বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। বাকি যে বিষয়গুলোর পথ উন্মুক্ত করলে কমিশন পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে, তার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কোনো সরকারই তা করেনি। সম্ভবত এ কারণেই করেনি যে, এতে কমিশনের ওপর থেকে সরকারের সব নিয়ন্ত্রণ উঠে যাবে, যা তাদের কেউ চায়নি। দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব লোকবলের অভাব। তাই নির্বাচনের সময় কমিশনকে সরকারি কর্মকর্তাদের মুখাপেক্ষী হতে হয়। নির্বাচন পরিচালনার সময় কমিশনকে জেলা প্রশাসকদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিন্তু দেশের আমলারা সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারেন না। তাই নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সরকার বহাল থাকলে তারা আমলাদের দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে নিজেদের দলীয় প্রার্থীর অনুকূলে তার ফলাফল নিয়ে যেতে সক্ষম হন। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লিপ্ত থাকেন। আর এসব কারণেই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানিয়েছে। নানা বিবেচনায় এই দাবি খুবই যৌক্তিক। তাই তা মেনে নেয়া উচিত। এই দাবি পূরণ এবং তার স্থায়ী ব্যবস্থা হলে দেশের সব দলই তা থেকে উপকৃত হবে। আর সরকারি আমলাদের নির্বাচনী দায়িত্ব যাতে দিতে না হয়, এ জন্য কমিশনের নিজস্ব পর্যাপ্ত লোকবল তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া উচিত।
বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক শিবির যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত তবে তারা তাদের দাবি আদায়, বিশেষ করে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পেত। কিন্তু দেশে আজ বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে ঐক্য নেই। ঐক্যের ক্ষীণ আওয়াজ কিছু শোনা যায় বটে, কিন্তু তা এতটা ক্ষীণ যে, আওয়াজ সবার কানে পৌঁছবেÑ এমন আশা করা যায় না। এটা শুধু বিরোধীদলগুলোর ব্যর্থতা নয়। এদিকে এ কারণে গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ভিন্ন সমাজ ও রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতে পারে না। ফলে প্রশাসন খেয়াল খুশি মতো চলার সুযোগ পায়। এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
আর সে কারণে অপশাসনের মুখে পড়ে জনজীবনে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে। দেশে এমন কোনো বেসরকারি সংগঠনও নেই যারা সুশাসনের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবে সমাজে বদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আছে। এ কারণে জাতিকে অনিয়ম অব্যবস্থা দুর্নীতি ইত্যাদি ঘিরে ফেলেছে। কোনো সমাজ এই পরিবেশে টিকে থাকতে পারে না সুস্থভাবে।
রাষ্ট্রচারে ত্রুটি ধরিয়ে দেয়াকে যেখানে সরকারের স্বাগত জানানো উচিত, তা না করে বর্তমান সরকার ত্রুটি ধরিয়ে দেয়াকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করে তা দমনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করেছে। সরকারি চাকরিতে মেধাকে মূল্যায়ন করার ন্যায্য দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল ছাত্রসমাজ। কিন্তু এই সৎ প্রয়াসকে বাঁকা চোখে দেখা হয়েছে। দীর্ঘকাল থেকে কোটার ভিত্তিতে এক বিপুল সংখ্যক প্রার্থীকে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় মেধার শূন্যতা সৃষ্টি হওয়া অনিবার্য। তাই ছাত্রছাত্রীরা কোটা ব্যবস্থাকে রহিত নয়, যৌক্তিকভাবে একে সংস্কার করার দাবি তুলে রাজপথে নেমে এসেছিল। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ছাত্রদের দাবিকে বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা থেকে সরকার হটে গেছে। এই মনোভাবের কারণে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যে বার্তা এলো, তা শুধু শিক্ষার্থীদের মনোবেদনার কারণ হয়নি, বরং একটি ভুল নীতিকে আঁকড়ে ধরে থাকার সরকারি একগুঁয়েমি প্রকাশ পেয়েছে।
জ্যেষ্ঠ ছাত্রদের শুদ্ধাচার আন্দোলনকে অনুসরণ করে শিশু-কিশোররা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল। তাদের ব্যাপক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের গ্লানি অনুভব করা উচিত। কিশোরদের এই আন্দোলন জাতির চোখ খুলে দিয়েছে যে, সড়কে কত অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতা প্রকট হয়ে রয়েছে। সমাজে যারা নেতৃস্থানীয় তারাও যে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কে চলাফেলা করেন, তা এবার লক্ষ করা গেছে। কিশোর ও শিশুশিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তা সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দেশে যে আইনের শাসন নেই, এ আন্দোলন তাও প্রমাণ করেছে। তবুও এই আন্দোলনকে কর্তৃপক্ষ সুনজরে দেখেনি। তাদের সাধারণ দাবিগুলো মেনে নিয়ে ছাত্রদের শিক্ষালয়ে ফিরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি না করে, তাদের আন্দোলনকে নানা রঙ ছড়িয়ে দমনের জন্য সরকার শক্তি প্রয়োগ করেছে।
কিশোর শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। আর প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয়ে সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং এতে বহু সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সমাজকে সচেতন করে তোলার এমন আন্দোলনকে শক্তি প্রয়োগ করে থামিয়ে দেয়া কখনোই ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে না। সরকারের এ বিষয়টি বোঝা উচিত ছিল। এদিকে ছাত্রদের ওপর এই শক্তি প্রয়োগ দেশবাসীকে হতাশ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলও তা ভালো চোখে দেখেনি।
জাতিসঙ্ঘ এবং মার্কিন প্রশাসন ছাত্রদের ওপর শক্তি প্রয়োগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বাধীন মতপ্রকাশ ও বিক্ষোভ প্রতিবাদ করার যে মৌলিক অধিকার নাগরিকের রয়েছে, সরকার শক্তি প্রয়োগ করে তা দমন করার বিষয়কে তার পরিপন্থী হিসেবেই দেখতে হবে।হ
ndigantababor@gmail.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/341001/