১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১২:১৯

ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত

অস্বাভাবিক হারে জমছে পলি, নদীতে তীব্র স্রোত * ৭টি ড্রেজার দিয়ে খননের পরও সংকটের সমাধান হচ্ছে না

পদ্মা নদী সংলগ্ন লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ডুবোচরের কারণে মাওয়া (শিমুলিয়া)-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে বড় ফেরি (রো রো ও ডাম্প) চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় এসব ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ছোট আকারের ৮টি কে-টাইপ ফেরি চলাচল করছে। ওই সময়ে মাওয়া ও কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে অপেক্ষমাণ বাস ও ট্রাক বিকল্প হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে পার হতে বলা হয়। এর আগে সীমিত আকারে ফেরিতে গাড়ি পারাপার করা হয়। এ অবস্থায় ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে ফেরিঘাটে গাড়ির দীর্ঘ সিরিয়াল পড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ ফেরিঘাটে আটকে থাকছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট এলাকায় অস্বাভাবিক হারে পলি জমছে। এ ছাড়া নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ড্রেজিং কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার গাড়ি সাধারণত মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হয়ে যাতায়াত করে। গত কয়েকদিন ধরে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছিল। শুক্রবারও লৌহজং চ্যানেলে সকালে শাহপরানসহ কয়েকটি ও বিকালে এনায়েতপুরীসহ ৫টি ফেরি ডুবোচরে আটকে ছিল। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ড্রেজিং কার্যক্রমেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তারা আরও জানান, গত কয়েকদিন ফেরি চালু থাকলেও নাব্য সংকটের কারণে পর্যাপ্ত গাড়ি না নিয়ে আন্ডারলোড অবস্থায় চলাচল করেছিল। নদীতে তীব্র স্রোতে পুরনো ইঞ্জিনের এসব ফেরি ধীরগতিতে চলেছে। কিন্তু শনিবার বিকাল ৪টার পর থেকে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়াসহ আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ নদীভাঙন হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে ড্রেজিং করছি। কিন্তু কিছু সময় পর চর ভেঙে তা আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া এলাকার এজিএম খালেদ নেওয়াজ যুগান্তরকে বলেন, গত সাত দিন ধরেই ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। সর্বশেষ শনিবার নাব্য সংকটের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, লৌহজং চ্যানেলের কোথাও কোথাও ৫ ফুট গভীরতা রয়েছে। ফেরি চলতে হলে অন্তত ৭ ফুট পানি দরকার। বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। বর্তমানে এ নদীতে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবল স্রোত রয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে যেমন ফেরি চলতে সমস্যা হয়, তেমনি ড্রেজিং কার্যক্রম চালাতেও হিমশিম খেতে হয়। তবুও সাতটি ড্রেজার দিয়ে এতদিন ফেরি চলাচলের পথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছিল। শনিবারও ড্রেজিং করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই চর ভেঙে চ্যানেলে জমে নাব্য সংকট সৃষ্টি করছে।

জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ওই পয়েন্টে পানির সর্বনিু গভীরতা ছিল ৭ থেকে ৮ ফুট। কিন্তু বেলা ৩টার দিকে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে তা কমে দাঁড়ায় ৬ ফুটে। হঠাৎ করে নাব্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বেলা ৩টার দিকে গাড়ি ও যাত্রীবাহী ফেরি এনায়েতপুরী লৌহজং পয়েন্টে আটকে যায়। একটি ফেরি আটকে যাওয়ায় এর পেছনে থাকা আরও পাঁচটি ফেরি থেমে যায়। এতে মাওয়া থেকে কাঁঠালবাড়ী রুটের ফেরি চলাচল কার্যত কয়েক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে সকাল ৯টার দিকে শাহপরান নামের আরেকটি ফেরি স্রোতের কারণে চরে আটকে গিয়েছিল। এসব ফেরিকে বিআইডব্লিউটিএর কয়েকটি টাগবোটের মাধ্যমে টেনে নামানো হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান বলেন, এ রুট সচল রাখতে ২০১৪-১৫ সালে ৮ থেকে ৯ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণের প্রয়োজন হতো। এখন তা বেড়ে ৩০ থেকে ৩২ লাখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, নদীর পাড় ভেঙে পড়ায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। আমরা ৭টি ড্রেজার দিয়ে খনন করছি। আমাদের একশ জনবল কাজ করছে। প্রতিদিনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। গত পহেলা জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দ্রুত ড্রেজিং করার জন্য সংস্থাটির ২৬ ইঞ্চি ব্যাসের বড় আকারের ড্রেজারও কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী সরাসরি রুটে ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। কিন্তু বিকল্প লৌহজং চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এতে দূরত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এ চ্যানেলে স্রোতের গতিবেগ ৭-৮ নটিক্যাল মাইল বা ১৫ কিলোমিটার। প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ড্রেজার ও ড্রেজারের সঙ্গে থাকা পাইপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের বড় আকারের (৩২ ইঞ্চি ব্যাস) ড্রেজার মেশিন দিয়ে খননের উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। তবে খনন কাজের দর নিয়ে সমঝোতায় না হওয়া বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ড্রেজার দিয়েই খনন কাজ চলছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/79627