ফেরি এনায়েতপুরী আটকে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে সৃষ্ট ফেরিজট : নয়া দিগন্ত -
১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১২:১৩

ঈদে ২১ জেলার যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা

আটকে যাচ্ছে ফেরি; স্রোতে অস্বাভাবিক হারে জমছে পলি; ড্রেজিংয়ের পরও নাব্যতা সঙ্কট দূর হচ্ছে না

ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রী পারাপারের অন্যতম মাধ্যম মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি নাব্যতা সঙ্কট কাটছে না। গত শুক্রবারও এ পথে পদ্মা নদীর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে চলতে গিয়ে একাধিক ফেরি আটকে যায়। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে সকাল থেকে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়। উজান থেকে আসা পলি অস্বাভাবিকহারে এ নৌপথে জমায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাতটি ড্রেজার দিয়েও এ পলি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতও রয়েছে। এক দিকে নাব্যতা সঙ্কট, অন্য দিকে তীব্র স্রোত এ দুই কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের গরু পারাপারে বিঘœ ঘটছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গত শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ নৌপথে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের মধ্যে যাত্রীবাহী পরিবহন অগ্রাধিকারভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। সকাল ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, শিমুলিয়া ঘাটে সহস্রাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গাড়ির চাপও বাড়তে থাকে।
সকাল ৯টার দিকে লৌহজং পয়েন্টে গাড়ি ও যাত্রীবাহী ফেরি শাহ পরান আটকে যায়। ফলে এর পেছনে থাকা আরো পাঁচটি ফেরি থেমে যায়। এতে মাওয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি নৌপথের ফেরি চলাচল কার্যত কয়েক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিআইডব্লিউটিএর কয়েকটি টাগবোটের মাধ্যমে ওই সব ফেরি টেনে কোনো মতে পার করা হয়। এতে চলে যায় তিন ঘণ্টা। এ সময় মাওয়া ও কাঁঠালবাড়ি দুই ফেরিঘাটে শত শত বাস ও ট্রাকের দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
একই চিত্র দেখা যায় বেলা আড়াইটায়। গাড়ি ও যাত্রীবাহী ফেরি এনায়েতপুরী লৌহজং পয়েন্টে আটকে যাওয়ায় এর পেছনে থাকা আরো সাত-আটটি ফেরি ও লঞ্চ থেমে যায়। এতে মাওয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে বিআইডব্লিউটিএর কয়েকটি টাগবোটের মাধ্যমে ওই সব ফেরি টেনে পার করা হয়।

মাঝনদীতে যখন ফেরি এনায়েতপুরী আটকে ছিল তখন অপেক্ষায় থাকা ডাম্পফেরি ডিএফ লেংটিংয়ের স্টাফ ওহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফেরি আটকে যাচ্ছে। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছেন।
এনায়েতপুরীর যাত্রী আব্দুল আলিম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মাওয়া ঘাটে তিন ঘণ্টার বেশি অপেক্ষার পর এ ফেরিতে উঠেন তিনি। ফেরিটি আধঘণ্টা চলার পরই চরে আটকে গেলো। ঢাকা থেকে মাওয়া আসতে দুই ঘণ্টা ও ফেরি পারাপারে তিন ঘণ্টা সবমিলিয়ে এখানেই পাঁচ ঘণ্টা কেটে গেল।

সরেজমিন গত শুক্রবার মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে গিয়ে দেখা গেছে, এ নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে তীব্র নাব্যতা সঙ্কট রয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় ওই পয়েন্টে পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ছিল ৭ থেকে ৮ ফুট। কিন্তু বেলা ৩টায় তিন ঘণ্টার ব্যবধানে তা কমে দাঁড়ায় ৬ ফুটে। বিআইডব্লিউটিএর সাতটি ড্রেজার দিয়ে লৌহজং চ্যানেলের নাব্যতা সঙ্কট দূর করতে ড্রেজিং করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ও বিকল্প চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে গত এক সপ্তাহ ধরে ফেরি চলাচল বিঘœ হচ্ছে। পর্যাপ্ত গাড়ি না নিয়ে আন্ডারলোডে চলাচল করছে।
তারা আরো জানান, নদীতে স্রোতও বেড়েছে। অনেক ফেরি একেবারে পুরনো হওয়ায় সেগুলোর ইঞ্জিন সক্ষমতা কম। তীব্র স্রোত ও ডুবোচরে আটকে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় এসব ফেরি ধীরে চলছে। এতে পারাপারে বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। নদীর দুই পারে যানজট হচ্ছে।
নাব্যতা সঙ্কটের বিষয়ে জানতে চাওয়া বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক বলেন, মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি রুটের লৌহজং চ্যানেলে মূল সমস্যা হচ্ছে। লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দুই দিকের স্রোত এসে মিলছে। ওই স্রোতের তীব্রতায় পাড় ভেঙে নদীতে পলি পড়ছে। পাশাপাশি উজান থেকে আসা পলিও জমা হচ্ছে। গতকাল শনিবার আমি নিজেই ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমরা সাতটি ড্রেজার দিয়ে খনন করছি। চ্যানেলের একপাশ দিয়ে রো রো ছাড়া অন্য ফেরিগুলো চলছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি, বেশি দিন সমস্যা থাকবে না। তবু পলি জমার হার বেড়ে গেলে বিকল্প হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরামর্শ দেয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: ছাইদুর রহমান বলেন, এ নৌপথ সচল রাখতে ২০১৪-১৫ সালে ৮ থেকে ৯ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণের প্রয়োজন হতো। এখন তা বেড়ে ৩০ থেকে ৩২ লাখে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, নদীর পাড় ভেঙে পড়ায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। আমরা সাতটি ড্রেজার দিয়ে খনন করছি। আমাদের ১০০ জনবল কাজ করছে। প্রতিদিনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম মনিটর করছেন। গত ১ জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি সরাসরি নৌপথে ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। কিন্তু বিকল্প লৌহজং চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এতে দূরত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এ চ্যানেলে স্রোতের গতিবেগ ৭-৮ নটিক্যাল মাইল বা ১৫ কিলোমিটার। তীব্র স্রোতে ড্রেজার ও ড্রেজারের সাথে থাকা পাইপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের বড় আকারের (৩২ ইঞ্চি ডায়াগ্রামের) ড্রেজার মেশিন দিয়ে খননের উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। তবে খনন কাজের দর নিয়ে সমঝোতা না হওয়া বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ড্রেজার দিয়েই খননকাজ চলছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/340863