চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেও এরকম ভাঙাচোরা বাস নগরীতে চলছে : নূর হোসেন পিপুল
১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১১:৩০

ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেও রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরেনি

পুলিশের টার্গেট মোটরসাইকেল; ৭ দিনে এক লাখ ২৯ হাজার ৮৭১ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

টিকাটুলির ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত কয়েক শ’ বড় বড় অফিস রয়েছে। এমনকি, সরকারি দফতরও আছে। কিন্তু তাদের গাড়ি রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ওই সব অফিসের বড় কর্তাদের গাড়িগুলো রাখা হয় রাস্তার ওপরে। ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষেও রাস্তার ওপর অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে কোনো শৃঙ্খলা আসেনি। পরিবহন চলাচলেও কোনো শৃঙ্খলা লক্ষ করা যায়নি। উল্টো পথে এখনো গাড়ি চলছে। রংচটা ভাঙাচোরা গাড়িগুলোই দেখা যায় রাস্তায়। তবে অনেকেই বলেছেন, ট্রাফিক সপ্তাহে বড় এবং দামি যানবাহন অবাধে চলাচল করতে পারলেও পুলিশের টার্গেট মোটরসাইকেলের দিকে। প্রতিদিন যে মামলা হচ্ছে তার অর্ধেকের বেশি হচ্ছে কেবল মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। কোথাও কোথাও কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট দেশব্যাপী শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। অসংখ্য গাড়ি রয়েছে যেগুলোর লাইসেন্স নেই, ফিটনেস নেই, রুট পারমিট নেই। আবার কোনো কোনো গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চালকের লাইসেন্স নেই, অথবা ভুয়া লাইসেন্সে গাড়ি চালাচ্ছেন, রাস্তায় ট্রাফিক আইন অমান্য করছেন, অবৈধ পার্কিং করছেন। এসব যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্যই এ ট্রাফিক সপ্তাহ। কিন্তু ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করলেও রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে পারেনি পুলিশসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। রাস্তার এখানে সেখানে পার্কিং গতকালও চোখে পড়েছে। এমনকি, কোনো কোনো এলাকায় দিনভর রাস্তার ওপর গাড়ি রাখা হয়। কিন্তু পুলিশ কিছুই বলে না।
গতকাল দুপুরে দেখা যায়, টিকাটুলির ইত্তেফাক মোড় থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত রাস্তার উভয় দিকে থামিয়ে রাখা আছে কয়েক শ’ গাড়ি। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় রাস্তায় গাড়ি রাখার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এ এলাকায় গাড়ি রাখার কোনো অনুমতিও নেই। গত সপ্তাহজুড়েই লক্ষ করা গেছে এ এলাকায় রাস্তার পাশে গাড়ি রাখা আছে। এভাবে রাজধানীর অসংখ্য এলাকা রয়েছে, যেখানে পার্কিংয়ের অনুমতি না থাকলেও পার্কিং করা হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, এরসাথে গোপন আঁতাত রয়েছে। ওই সব গাড়ির মালিক ও চালক আইন অমান্য করে পার্কিং করলেও সেসবের বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেই।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে রংচটা, লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলোই রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মতিঝিলের আরামবাগ থেকে মোহাম্মদপুরগামী বেশ কয়েকটি পরিবহন গতকাল আরামবাগ টিঅ্যান্ডটি কলোনির পাশে পার্কিং করা দেখা যায় দুপুরের দিকে। তার মধ্যে একটি গাড়ির বাইরের আস্তর ঠিক নেই। ১১টি গাড়ির মধ্যে ৮টি গাড়ি দেখা গেছে যার কোনোটির গ্লাস ভাঙা, কোনটির দরজার হাতল নেই, লাইট নেই বেশির ভাগ গাড়ির। অথচ এ গাড়িগুলো ট্রাফিক সপ্তাহর মধ্যেও রাস্তায় চলছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর দৈনিক বাংলা এলাকায় দেখা যায়, চারটি লেগুনা অপেক্ষা করছে। এগুলোর কোনটিরই ব্যাক লাইট দেখা যায়নি। চারটি গাড়ির মধ্যে দুইটি গাড়ির চালককে দেখে মনে হয়েছে বয়স ১৮-এর নিচে। রাজধানীর টিকাটুলি মোড় থেকে মানিকনগর পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এসব গাড়ির বেশির ভাগেরই কোনো হেডলাইট বা ব্যাক লাইট নেই। গতিও বেপরোয়া। রাতের বেলায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এগুলো দুর্ঘটনা ঘটায়। অথচ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বহনকারী গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, চালকেরা বেপরোয়া বলেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রাফিক সপ্তাহ চললেও চালকদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা আসেনি।
এদিকে, ট্রাফিক সপ্তাহের গত সাত দিনে সারা দেশে এক লাখ ২৯ হাজার ৮৭১টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার ২২৩ টাকা। ৪৬ হাজার ৭২৩ জন চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৭৭৭টি যানবাহন আটক করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলেছেন, পুরো সপ্তাহজুড়েই ট্রাফিক পুলিশের মূল টার্গেট ছিল মোটরসাইকেল। পুলিশ দামি গাড়ির পেছনে যত সময় দিয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় দিয়েছে মোটরসাইকেলের পেছনে। দেখা গেছে, একই রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি বাস, অন্যান্য গাড়ি ও মোটরসাইকেল যাচ্ছে; পুলিশ মোটরসাইকেলকে সিগনাল দিচ্ছে। বাকিগুলো চলে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। গতকালও রাজধানীতে ৩ হাজার ৮ শ’ ২২টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে দুই হাজার ৩৪টি মোটরসাইকেল। ৬০টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।
উল্টো রাস্তায় চলাচল এখনো অব্যাহত রয়েছে। মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে অনেক গাড়িকেই গতকাল উল্টোপথে যেতে দেখা গেছে। নিষিদ্ধ এলাকায় পুলিশের চোখের সামনেই গাড়িগুলো বিকট শব্দে হর্ন বাজাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এদিকে, পুলিশ ঘোষণা দিয়ে গতকাল ট্রাফিক সপ্তাহ আরো তিন দিন বাড়িয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/340784