১ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ১১:০৩

টাকা চোর স্বর্ণ চোর কয়লা চোর মহাচোর

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী : বাংলাদেশে ব্যাংক লুটের ঘটনা সম্ভবত গিনেজ বুক অব রেকর্ডসে স্থান পাবার পর্যায়ে চলে গেছে। ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সে টাকা ব্যাংক থেকে বেরিয়ে কোথায় চলে গেছে কেউ তা বলতে পারে না। অর্থমন্ত্রী একটা ভাষাই জানেন, আর তা হলো, রাবিশ, স্টুপিড ও বোগাস। যখন আওলাইয়া যান, কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন না তখন শুধুই গালিগালাজ করতে থাকেন। এই যে ব্যাংকগুলো লুট হয়ে গেল, হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ হয়ে গেল, তারপরও অর্থমন্ত্রী বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরো লুটের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য নানা সুবিধা দিয়ে বসলেন। এতে আরো পোয়াবারো অবস্থা। সরকারি টাকা প্রাইভেট ব্যাংকে। কিন্তু সে টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর নেই। তাহলে কী করা যায়? ব্যাংকগুলোকে চালু রাখার জন্য সরকারের ফান্ড থেকে আরো টাকা দেয়া হোক। এই হলো সরকার বা অর্থমন্ত্রীর বিচার। ফলে যারা লুটেরা, তারা আছে বহাল তবিয়তে। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। ওই ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুটের দায় তার। কিন্তু এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হয় নাই। দুদক কয়েক দফা তাকে ডেকে নিয়ে রীতি অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু ফায়দা কিছুই হয়নি। বাচ্চু বহাল তবিয়তে আছেন। অথচ পৃথিবীর যে কোনো দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেখানকার অর্থমন্ত্রী কেন, প্রধানমন্ত্রীকেও পদত্যাগ করতে হয়। জাপান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলাদেশে এ সবের কিছুই ঘটে না। যে যত বড় চোর, সে তত বড় সম্মানিত লোক।

শুধু বেসিক ব্যাংক কি বা বলি কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে গেল ৮১ মিলিয়ন ডলার। তা নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করল। তারা চিহ্নিতও করলো যে এই টাকা চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন। তারা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থমন্ত্রীর কাছে জমাও দিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের মানুষকে হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়লেন। ইতিমধ্যে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখ ২০-২২ বার পিছিয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি । অর্থমন্ত্রী যুক্তি দেখালেন যে, প্রতিবেদন প্রকাশ করলে নাকি ফিলিপিন্স থেকে টাকা উদ্ধার করা যাবে না। এই যুক্তি অন্তঃসারশূন্য। ফিলিপিন্সে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে টাকা পাচার হয়ে গেছে, সেগুলো চলে গেছে জুয়ার বাজারে। সে টাকা জুয়াড়িদের হাতে হাতে উধাও হয়ে গেছে। এখন অর্থমন্ত্রীর আশা, সে টাকা উদ্ধার করবেন, মামলা করবেন। এই ধরনের কথার ফুলঝুরি চলছে। তদন্ত রিপোর্ট যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। ভারতীয় সংস্থা রাকেশ আস্তানার ফায়ার আইকে কেন যাবতীয় কাজ সুপারভাইজ করার দায়িত্ব দেয়া হলো? আর তার তিন দিনের মাথায় হাওয়া হয়ে গেল বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল অংকের টাকা। তদন্ত রিপোর্ট যেমন আলোর মুখ দেখেনি, তেমনি সে টাকা নিয়ে এখন আর কেউ উচ্চ-বাচ্যও করছে না। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচারের ঘটনার সঙ্গে কমপক্ষে ৫ জন কর্মকর্তা জড়িত আছে। সে সব কর্মকর্তাকে না আটক করা হয়েছে, না রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টাকা চুরি হয়েছে তো কি হয়েছে। তাদের ইজ্জত রক্ষা করার দায়িত্ব অর্থমন্ত্রী নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন। এভাবেই চলছে ব্যাংক লুটের ব্যবস্থা। ধারণা করি, এ টাকা আর কোনোদিন ফেরত পাওয়া যাবে না।

মনে করা হয়েছিল যে, রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এমন নিñিদ্র করা হবে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু গত ১৭ জুলাই থলের আরেক বিড়াল বেরিয়ে পড়ল। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে দেখা গেল, বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা সোনা মিশ্র ধাতুতে পরিণত হয়েছে। ২২ ক্যারেটের সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ ভয়ঙ্কর অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৩০ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ অনিয়ম ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। গত জানুয়ারিতে কমিটি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রতিবেদন জমা দেয়। গত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো হয়। পরিদর্শন দল ভল্টে রাখার সোনা যাচাই-বাছাই শেষে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে প্রথম পর্যবেক্ষণ ছিল একটি সোনার চাকতি ও আংটি নিয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টমস হাউজের গুদাম কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০% (১৯.২) ক্যারেট বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু ২ বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬.৬৬% (১১.২) সোনা পান। আংটিতে পায় ১৫.১২% সোনা (৩.৬৩ ক্যারেট) ধারণা করা হচ্ছে, ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষা করে দেখা গেল এগুলো সোনা নয়, মিশ্র ধাতুর তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিদর্শন দল প্রতিটি রসিদের অনুকূলে জমা হওয়া সোনা যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে সোনার অলঙ্কার এবং সোনার বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি সোনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট নথিভুক্ত করা হয়েছে। কম ক্যারেটে নথিভুক্ত থাকায় নিলাম বা অন্য উপায়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত ক্যারেটের বিপরীতে প্রাপ্ত টাকা থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। সোনার ক্যারেটের তারতম্য ঘটানোর কারণে সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
ক্যারেটের তারতম্য হলে সোনার দামের কী পার্থক্য হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নির্বাহী কমিটির সদস্য দেওয়ান আমিনুল ইসলাম জানান, ক্যারেটের মাধ্যমে সোনার মান নির্ধারিত হয়। আর মান অনুসারে সোনার দাম কমবেশি হয়। ২২ ক্যারেট বা ২১ ক্যারেটের সোনা এবং ১৮ ক্যারেটের সোনার দামে বড় অঙ্কের পার্থক্য আছে।

শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক সোনা নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন সোনা জমা রাখা হয়, তখন ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বর্ণকার দিয়ে পরীক্ষা করে সোনার মান নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংক, এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই সব সোনার মান নির্ধারণপূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রসিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি অকল্পনীয়। যারা কাস্টডিয়ান, তাদের হাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিস্মিতই হতে হয়। ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ব্যাংকে কাজ করার সূত্রে আমি জানি, এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকেন হাতে গোনা কয়েক জন। পরিদর্শন প্রতিবেদনে যে তথ্য এসেছে, সে তথ্য থেকে ঘটনার সময় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের হয়ে আসবে। ঘটনাটিকে ছোট ভাবার কারণ নেই। ভল্টের মতো উচ্চ গুরুত্বের জায়গায় এমন অনিয়মকে গুরুত্ব না দিলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আধা-সরকারি পত্র পাঠিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সামনাসামনি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন তিনি।

জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর মেইলে লিখিত প্রশ্ন পাঠালে নয় দিনেও তিনি জবাব দেননি। পরে তাঁর সঙ্গে আবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই অবহিত করার মতো সুস্পষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে নাই।’
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করবে এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেবে। কী কী প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়েছে, কারা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেটা বের করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা করতে না পারলে তাদের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হবে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সবাই মিলে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়লেন বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্গে সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই বললো, স্বর্ণ ঠিকই আছে। কোনো গোলমাল হয় নাই। শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা যে প্রক্রিয়ায় স্বর্ণ পরীক্ষা করেছে তার মধ্যে ত্রুটি থাকতে পারে। তারা পরীক্ষা করিয়েছিলেন স্বর্ণকার দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী কোনো তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই বলে বসলেন যে, স্বর্ণ ঠিকই আছে কোনো গোলমাল হয় নাই। তবু যদি কিছু ঘটে থাকে তা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। অর্থমন্ত্রী দেশে নাই, তিনি দেশে ফিরলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর মধ্যে হুট করে আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, স্বর্ণ ঠিকই আছে কোনো গোলমাল হয় নাই। সবাই মিলে যখন এক রা করে উঠলেন, তখন সংশয় আরো ঘনীভূত হয়ে উঠল। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা যা দেখি তা হলো তদন্ত কমিটি করার অর্থ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা। সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতোই বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনা চুরিও তদন্ত কমিটির আড়ালে হারিয়ে যাবে। চুরি, লুট অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা যেমন এক মাস লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তেমনি স্বর্ণ পরিবর্তনের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি এক বছর ধরে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সত্য শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট অনিরাপদ হওয়া রিজার্ভ চুরির চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা। তবে বিষয়টি নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। সঠিক বিষয়টি বের করে আনতে হলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এর তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি যাচাইয়ের সময় দু’পক্ষকে সামনে উপস্থিত থাকতে হবে। আর তৃতীয় পক্ষের তদন্তে যারা অপরাধী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী যথারীতি বরাবরের মতো বেতাল কথাই বললেন। নয় শ’ কেজি সোনার মধ্যে মাত্র ৩ কেজি সোনার গোলমাল। এ আর এমন কি? এটা তিনি বলতে পারেন। কারণ হলমার্ক যখন সোনালী ব্যাংক থেকে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার তদবিরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল, তখনও তিনি বলেছিলেন যে, সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়। সুতরাং তিন কেজি সোনার আর এমন কি?

ঠিক আছে বাদ দিলাম ৩ কেজি সোনা। কিন্তু ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা তো আর ৩ কেজি নয়। বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির মজুদ থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে গেছে। যার মূল্য ২৩২ কোটি টাকারও বেশি। এটি এক দিনে যায়নি, এ কথা সত্য। কারণ এই কয়লা সরিয়ে নিতে কমপক্ষে ১৪ হাজার ট্রাকের প্রয়োজন হয়েছে। ১৪ হাজার ট্রাক একদিনে সেখানে আনাগোনা করেনি। ধারাবাহিকভাবে সেখানকার কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে এই কয়লা চুরি হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের লোকেরা বলবার চেষ্টা করছে যে, কয়লা চুরি শুরু হয়েছে নাকি বিএনপির আমল থেকেই, ২০০৫ সাল থেকে। অর্থাৎ যা কিছু হারায় সরকার বলে বিএনপি-জামায়াতই চোর। বিএনপির তো এক বছর শাসনকাল ছিল। তো ১০ বছর ধরে বাকি চুরি কারা করল? এরও একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। ধারণা করি, এই তদন্ত কমিটির আড়ালে যথারীতি ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা হারিয়ে যাবে। ওখানকার এক বেয়াক্কেল মহাপরিচালক বলে বসেছেন যে, এই ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা নাকি বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেছে। গাঁজার নাও পাহাড় ঠেলে যায়। বাংলাদেশে তাই যাচ্ছে।
এখন সমাজে নানা ধরনের চোর, কেউ সড়ক চোর, কেউ সেতু চোর, কেউ ফ্লাই ওভার চোর, কেউ ভবন চোর, কেউ রড চোর। এভাবে বাংলাদেশ এখন এক মহাচোরের দেশে পরিণত হয়েছে। এ থেকে উদ্ধারের পথ কী, আমাদের জানা নেই।

http://www.dailysangram.com/post/340135