১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১২:৪১

অধিগ্রহণের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি ব্যয় ভূমি উন্নয়নে

এলএনজির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতি

দেশে এখনো কোনো এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। সরকার দেশীয় ও আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মাধ্যমে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। সে লক্ষে কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এখানে ভূমি অধিগ্রহণের চেয়ে ষোল গুণ বেশি ব্যয় হবে ভূমি উন্নয়নে। ভূমি উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর এলএনজি সরবরাহে লাইন নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৫ থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৭ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এই জমি অধিগ্রহণ ও অধিযাচন মহেশখালীতে হবে। সরকার আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এতে জ্বালানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে গ্যাসনির্ভরতার পরিবর্তে দেশীয় ও আমদানিকৃত কয়লার মাধ্যমে ৫০ শতাংশ, দেশীয় ও আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মাধ্যমে ২৫ শতাংশ এবং তেল, পারমাণবিক শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, স্থানীয় গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র যথার্থ নয়। দেশে এখনো কোনো এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়নি। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল স্থাপন ও গ্যাস পরিবহন সুবিধাজনক হওয়ায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নে জাপানের মিতসুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে ৫-৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ওই প্ল্যান্টটি স্থাপনের সহায়ক কার্যক্রম হিসেবে এই ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও মূল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। প্রকল্পের আওতায় এলএনজি সরবরাহের জন্য সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ, রিভার ক্রসিংসহ সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলএনজি পাইপলাইন নির্মাণ এবং প্রকল্পের অভ্যন্তরে টিবিএস স্থাপন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলা বা জিটিসিএলের বিদ্যমান মহেশখালী আনোয়ারা এলএনজি পাইপলাইনের উত্তর নলবিলা ভাল্ব স্টেশন থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত রিভার ক্রসিংসহ প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এখানে ১২.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ২৫.৬২৫ একর জমি অধিযাচনের সংস্থান রাখা হয়েছে। মোট ৩৮.২২৫ একর জমি অধিগ্রহণ ও অধিযাচনের জন্য প্রয়োজন ১৫ কোটি ৪৭ লাখ দুই হাজার টাকা। এই ভূমি উন্নয়নে পালি ভরাটে ১৩৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা এবং বাঁধ নির্মাণে ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হবে। সাড়ে ৮ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটার লাইনের জন্য ব্যয় হবে ১৩ কোটি ৩৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের বিদ্যুৎ উইং বলছে, মহেশখালী এলাকায় সরকার যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটি প্রকল্প এলাকা ভিন্ন ভিন্ন রঙে চিহ্নিত করে একটি রঙিন ম্যাপ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণের পর মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের মিতসুই কোম্পানির সাথে যৌথ মালিকানায় কোম্পানি গঠনের সময় অংশীদারিত্ব কিভাবে হবে তার ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/332685