১১ জুলাই ২০১৮, বুধবার, ১০:১০

এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে  

পাঁচ মাসে ১৩ জেলায় আক্রান্ত ১৯৬৫ মৃত্যু এক

চলতি বছর প্রথম পাঁচ মাসে ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ায় একজন মারা গেলেও আক্রান্ত হয়েছে ১৯৬৫ জন। অন্য দিকে এই ১৩ জেলার মধ্যে আট জেলায় আক্রান্তের হার একেবারেই কম। তা সত্ত্বেও এসব জেলার এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আবার ১৩ জেলার মধ্যে চার জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি গত পাঁচ মাসে। এ জেলাগুলো হলোÑ শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া টেকনিক্যাল কমিটি অবশ্য এই চার জেলায় ম্যালেরিয়াকে নির্মূল অবস্থার সাথে তুলনা করতে চাচ্ছেন। অবশিষ্ট চার জেলা সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ২৫ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
অন্য দিকে ম্যালেরিয়াপ্রবণ পাঁচ জেলায় ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি এখনো শঙ্কাজনক। এসব জেলায় বছরে প্রচুর ম্যালেরিয়া আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে। এ জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বান্দরবান জেলায়। অবশিষ্ট চার জেলা হলো- রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া টেকনিক্যাল কমিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবল পার্বত্য বান্দরবান জেলাতেই এক হাজার ৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর পরেই রাঙ্গামাটির অবস্থান, এ জেলায় পাঁচ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৬৫৭ জন। এ ছাড়া কক্সাবাজারে ১৬৩ জন, খাগড়াছড়ি জেলায় ৭৩ জন এবং চট্টগ্রাম জেলায় মাত্র ১১ জন।

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা এর চেয়ে তিন গুণ বেশি ছিল। ২০১৭ সালে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৩। সেই বান্দরবান জেলাতেই ছিল সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সখ্যা তিন হাজার ৪১৪ জন। রাঙ্গামাটিতে ছিল ১৬২৭, খাগড়াছড়িতে ১৯৫, কক্সবাজারে ৩৫৯, চট্টগ্রামে ৩৩ জন। ২০১৭ সালে অবশিষ্ট আট জেলায় আক্রান্তের হার ছিল ৫৮ জন। সেখানে কোনো মৃত্যু ছিল না।
২০১৬ সালে ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৭৪ এবং মৃত্যু ছিল ২টি। ২০১৫ সালে উপরোল্লিখিত তিন বছরের চেয়ে অনেক বেশি আক্রান্ত হয় ম্যালেরিয়ায়। সে বছর ১৩ জেলায় মোট আট হাজার ১০২ জন আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় দুইজন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এপিডেমিওলজিস্ট ডা: মশিকুর রহমান বিটু বলছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে চার জেলায় কোনো আক্রান্ত পাওয়া যায়নি। এই চার জেলা ‘প্রি-এলিমিনেশন’ স্টেজে রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে অবশিষ্ট চার জেলায় গত পাঁচ মাসে ২৫ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এই ২৫ জনই চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন, কেউ মারা যায়নি। এ জন্য ম্যালেরিয়া টেকনিক্যাল কমিটি নির্মূল (এলিমিনেশন) শব্দটি ব্যবহার করেছে।
টেকনিক্যাল কমিটির একটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের মধ্যে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী। অন্য দিকে ১৬ থেকে ২০ বছর এবং ৫৭ বছরের বেশি বয়সী আক্রান্তের সংখ্যা সমান। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা। অন্য দিকে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সীদের চেয়ে সামান্য কম।

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য ২০২১ সালের মধ্যে ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ০.৪৬’র নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে কম আক্রান্ত আট জেলায় ম্যালেরিয়ার গতিকে বাধা দিতে চায়। অন্য দিকে অবশিষ্ট ৫১ জেলা ম্যালেরিয়ামুক্ত তা নিশ্চিত করতে চায়। অপর দিকে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর একটি প্রজাতি প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপেরামকে প্রতিরোধ করতে চায়। কারণ প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপেরাম প্রজাতি নিজের মধ্যে অ্যাটিমিসিনিন কম্বিনেশন থেরাপি (এসিটি) প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে। এর কারণে এসিটি দিয়ে প্লাজমোডিয়াম ফেরসিপেরামকে ধ্বংস করা যায় না।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/331973