১০ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:৩৪

খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প

মেয়াদ পার করে নির্মাণ কাজ পিপিপিতে

সময়ক্ষেপণে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ১২৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি

নিজস্ব টাকায় প্রকল্প করার অনুমোদন দিয়ে তিন বছর পার করে দিয়ে এখন সরকার খানজাহান আলী বিমানবন্দরকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ খরচ ছাড়া তিন বছরে কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই। ১৯৯৬ সালে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর ৪১.৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের পর রাজনৈতিক কারণে কাজ বন্ধ করা হয়। ১৯ বছর পর আবার সেই প্রকল্প নতুন করে হাতে নেয়া হলেও তিন বছর পর পিপিপিতে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়। আর এই সময়ক্ষেপণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বেড়েছে ১২৬ কোটি ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের রামপালে খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প একনেক থেকে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। ২০১৮ সালের জুন নাগাদ এ নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল; কিন্তু এখন প্রকল্পটিই পরিবর্তন করা হলো। প্রকল্পটি অনুমোদনের দু’বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই বিমানবন্দর নির্মাণকে পিপিপির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে নীতিগত অনুমোদনের সুপারিশ করে। প্রধানমন্ত্রীও ওই সুপারিশকে একই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেন। ফলে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য লিঙ্ক প্রকল্প হিসেবে প্রকল্পের শিরোনাম সংশোধন করার প্রস্তাব দেয়া হয়। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করার প্রস্তাব একনেকে যাচ্ছে।
পর্যালোচনার তথ্যানুযায়ী, অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ১৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল, যার জন্য ৪৩ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়। এতে করে প্রতি হেক্টর জমির দর ২৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ধরা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর জেলা প্রশাসক বরাবর ওই অর্থও প্রদান করা হয়। পরে অনুমোদিত নকশা বা প্রস্তাব অনুযায়ী অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়। ফলে বর্ধিত ৫৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা মোট জমির পরিমাণ এখন ২১৭ হেক্টরে উন্নীত হয়। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ১২৬ কোটি ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খাতে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এতে করে প্রতি হেক্টর জমির দর পড়ছে ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। অন্য দিকে বাড়তি ৫৪ হেক্টর-প্রতি দর হচ্ছে দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা। গত তিন বছরে এই প্রকল্পে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, যশোরে অবস্থিত বিমানবন্দরটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ব্যবহার করে আসছে। যশোর বিমানবন্দর থেকে খুলনার দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার, যা সড়কপথে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। সরকার এখন ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। ফলে রামপাল থেকে খুলনার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব হবে ২০ কিলোমিটার। দেশের হিমায়িত চিংড়ি মাছের ৬০ শতাংশই উৎপাদন হয়ে থাকে এই খুলনা অঞ্চলে। আর এসব হিমায়িত মাছ রফতানি করা হয় বিমানের মাধ্যমে। ফলে যশোর থেকে বা ঢাকায় এনে তা বিদেশে রফতানি করতে হতো। এতে করে রফতানি খাতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। বাগেরহাটে বিমানবন্দর নির্মিত হলে এই রফতানির জন্য নির্ধারিত সময় ও ব্যয় কমে আসবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/331710