৯ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৩:৪৪

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিন : জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার

কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার ইয়াংহি লি।
তিনি বলেন, রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ তারা এখনো শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশে দশ দিনের সফর শেষে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইয়াংহি লি এ সব কথা বলেন। এ সফরকালে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং সরকারি কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।
ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি। এ জন্য শিগগির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সাথে যা হয়েছে, তা মানবাধিকারের পরিষ্কার লঙ্ঘন। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কেননা বিশ্বের অন্য মানুষের মতো তাদেরও ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকার কোনো পদপে নেয়নি। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে এসেছে এমন কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গ্রামে ঢুকে তাদের ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড নিতে, অন্যথায় দেশ থেকে চলে যেতে বলেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করায় তারা এই কার্ড নিতে চায় না।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তের জিরো পয়েন্টে চার হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। সেখানেও গিয়েছিলেন ইয়াংহি লি। সেখানকার অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে কয়েকটি বাচ্চা ছেলে ফুটবল খেলে ফিরছিল। তাদের মধ্যে একজন থেকে গিয়েছিল। পরে মিয়ানমারের দিক থেকে আসা গুলিতে সে আহত হয়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন রোহিঙ্গা নারী বলেছেন, তার ১২ বছরের ছেলেকে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কেটে টুকরো টুকরো করেছে। ইয়াংহি লি এ ধরনের কাপুরুষোচিত কাজের তীব্র নিন্দা জানান।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘে জমা দেবেন। মিয়ানমার সরকার তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় তিনি রাখাইনে যেতে পারেননি। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতা তিনি প্রতিবেদনে তুলে ধরবেন।
রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে ভারতও যেতে চেয়েছিলেন ইয়াংহি লি। তবে ভারত সরকারও তার আবেদনে কোনো সাড়া দেয়নি। তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার আমাকে হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসঙ্ঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া চুক্তির বিষয়ে ইয়াংহি লি বলেন, ‘আমি জাতিসঙ্ঘের কাছে চুক্তির একটি কপি চেয়েছিলাম। কেউ আমাকে তা দেয়নি।’
জাতিসঙ্ঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে। এতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের ইস্যুটি যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/331441