৮ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৯:৩৮

চালের দামে কারসাজি

গত বছরের পুরোটা সময় উত্তাল ছিল চালের বাজার। চলতি বছরের শুরু থেকে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকেই আবারও উত্তাপ ছড়াচ্ছে চালের দামে। কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে আমদানি চালে ২ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। আর এ শুল্ক আরোপের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা আবারও চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। মাসের ব্যবধানে মোটাসহ সব ধরনের চালে দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছে নিুবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ।

শনিবার সরেজমিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৬ টাকা। যা এক মাস আগে ৪০-৪২। পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৪ টাকা। চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। যা এক মাস বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাজেটে চালের আমদানির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। অন্যদিকে চাল আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ বাংলাদেশ ব্যাংক। কথা ছিল, দেশি চালের বাম্পার ফলন দিয়েই চাহিদা মেটানো হবে। এতে আমদানি কমিয়ে দেশি চাল দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানো হবে। ফলে কৃষক চালের ন্যায্য দাম পাওয়ার সঙ্গে ক্রেতাদের হাতের নাগালেও চলে আসবে দাম। কিন্তু বাজারে বাস্তবতা হচ্ছে উল্টো। মিলাররা সব সময় চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ খোঁজে। বাজেটে চাল আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর অজুহাতে সব ধরনের চালে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই পাইকারি পর্যায়ে চাল বেশি দাম কিনে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর বৃহৎ পাইকারি চালের আড়ত বাদামতলী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি স্বর্ণ চাল পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৪৯ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৬ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৬ টাকা।
কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজেটের পর থেকে মিল মালিকরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। তাই চালের বাজারে একটু অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে খুচরা বিক্রিতাদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই খুচরা পর্যায়েও চালের দাম বাড়ছে। যা প্রভাব ফেলছে ভোক্তা পর্যায়ে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় শনিবার মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চালের দাম দেয়া আছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, যা এক মাস আগের দাম দেয়া আছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। সরু চালের মধ্যে উত্তম মানের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম দেয়া আছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। নাজিরশাইল চালের দাম দেয়া আছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন মিল মালিকরা তারা বলছেন, রাজধানী ছাড়া দেশের কোথাও চালের দাম বাড়েনি। দেশে চালের দাম বৃদ্ধির সংবাদটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। চালের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। যদি চালের দাম কোথাও বেড়ে থাকে তা বেড়েছে রাজধানীতে। আর এর জন্য দায়ী অসৎ ব্যবসায়ীরা। তারা সুযোগ বুঝেই চালের দাম বাড়িয়েছে অনৈতিক মুনাফার জন্য।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় লাভ করতে চায়। তারা যে কোনো কিছুর অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়। আর সরকারের আমদানি চালের ওপর শুল্ক আরোপ করার অজুহাতে আবারও ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছে। তবে দেশে এবার চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তাই ব্যবসায়ীরা শুল্ক আরোপের অজুহাতে চালে বেশি দিন বাড়তি দাম নিতে পারবে না। কিছু দিনের মধ্যে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে। তবে সরকারের ভুল থেকেই শিখতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, বাজার মনিটরিং এ দেখা গেছে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে বাজারে চালের দাম কমাতে মনিটরিং টিম নামানো হবে। সেখানে দেখা হবে ব্যবসায়ীরা অসৎ উপায়ে দাম বাড়াচ্ছে কিনা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/67596/