৭ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:৪৫

চালের সাথে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছে ডিম মরিচ পেঁয়াজের

এক মাস আগে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের পর থেকেই বাড়ছিল চালের দাম। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল, বাজেটে চাল আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। কিন্তু ডিমের ওপর তো বাজেটের আঁচড় লাগেনি! বাজেট তো কাঁচা মরিচকে ছোঁয়ওনি! হাত দেয়া হয়নি পেঁয়াজের ওপর! তবে কেন এসবের দাম বাড়ছে? জবাব একটাই, সরবরাহ কম। রমজানে বাড়তি চাহিদার সময় যে কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছিল, এখন কম চাহিদার সময়ে কেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা? ছয় টাকার ডিম কেন এক লাফে নয় টাকা হয়ে গেল? মুরগি কী ডিম পাড়া কমিয়ে দিয়েছে? এ ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের কাছে জবাবের অভাব নেই! মুরগির খাবারের দাম বেড়ে গেছে। আর মরিচের ক্ষেতে হানা দিয়েছে বৃষ্টির পানি। 

গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারভেদে ১২০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম রোজার মধ্যে ২২ থেকে ২৪ টাকা হালিদরে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। দেশী পেঁয়াজের দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। একই হারে বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪২ টাকা। তবে দাম অস্বাভাবিক বাড়তি থাকায় অনেক খুচরা দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রিই হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মালিবাগ সুপার মার্কেটের বিক্রেতা সোলায়মান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেতগুলো পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ফসল তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কম এবং দাম বাড়ছে স্বাভাবিক নিয়মে। তবে দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ চাহিদার তুলনায় অনেক কম জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে আমরা যে মরিচ বিক্রি করি এর বড় অংশ আসে ভারত থেকে। স্থলবন্দরগুলোয় কোনো সমস্যা হলে কিংবা ছুটি-ছাটা পড়ে গেলেও মরিচের মতো পচনশীল পণ্যের দাম বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।
অন্য দিকে ডিমের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদর জবাব, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে গেছে এ জন্য আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। তারা জানান, রোজার মধ্যে ডিমের চাহিদা বেশ কমে গিয়েছিল। ঈদের ছুটিতে রাজধানীর মানুষ ছুটিতে যাওয়ার কারণে ঢাকা বেশ কিছুদিন ফাঁকাই ছিল। বন্ধ ছিল হোটেল-রেস্টুরেন্ট। তবে ছুটি শেষে সবাই যখন আবার ঢাকায় ফিরেছে এবং হোটেলগুলো খুলতে শুরু করেছে তখনই একটু একটু করে বাড়তে শুরু করে চাহিদা। আবার চাহিদা কম থাকায় ঢাকায় সে সময় সরবরাহও ছিল কম। এখন চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি হওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পটোল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, বেগুন, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, করলাসহ প্রায় সব সবজিই বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে আছে। দাম রাখা হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। খুচরা দোকানে গতকাল জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কচুমুখী ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা এবং টমেটো ১০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা। গরুর গোশতের কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ এবং খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/330736/