জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ড্যাবরাইপ্যাচে বন্যার পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা :নয়া দিগন্ত -
৭ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:৪৩

কয়েক লাখ লোক পানিবন্দী দেখা দিয়েছে নদীভাঙন

টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে অনেক নদীতে আকস্মিকভাবে ব্যাপক পানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে করে কয়েক লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
নদীতীরবর্তী অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গো-খাদ্যের সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশুর মালিকেরা। এ ছাড়া বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ দিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থতিশীল থাকলেও এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। পানিবন্দী মানুষজনের কাছে সরকারি-বেসরকারি কোনো সামগ্রী না পৌঁছানোয় ওই সব মানুষ খেয়ে-না-খেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। ছাতকে বন্যাকবলিত এলাকায় চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ছাতকের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হওয়া লক্ষাধিক মানুষ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবি ত্রাণসামগ্রী এসে না পৌঁছায় বন্যাকবলিতদের দিন কাটছে অতি কষ্টে। খেয়ে-না-খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। সরকারি বা বেসরকারিভাবে দ্রুত তাদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোই এখন পানিবন্দী এসব মানুষের চাওয়া।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বন্যা প্লাবিত গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। খেয়ে-না-খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গো-খাদ্যের অভাবে গবাদিপশু নিয়েও চরম বিপাকে রয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষাকার্যক্রমে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ছাতক শহর, ছাতক সদর, কালারুকা, চরমহল্লা, দোলারবাজার, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। একাধিক স্টোন ক্রাশার মিল, পোলট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শাকসবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ ছাড়া ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক, পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, বোকারভাঙ্গা-মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার অনেক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যায় তলিয়ে গেছে। জামুরা, চানপুর, নোয়াগাঁও, ভাসখলা, করচা, গোয়ালগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস জানান, ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। যেসব বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকেছে সেখানে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদা আফসারি জানান, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে তা পৌঁছে দেয়া হবে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া নদীর তীরবর্তী নীলফামারী দু’টি উপজেলার অন্তত ২০টি চর ও গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের বন্যানিয়ন্ত্রণ পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ছয় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সর্বশেষ পানি কমে বেলা ২টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ছয় সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার, গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ২০টি চর ও গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আবদুল লতিফ খান জানান, গত দুই দিনের চেয়ে উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া চরগ্রামগুলোর ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে তার এলাকার এক হাজার ৪০ পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এলাকার ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর মৌজাটি তলিয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে সেখানকার মাটির রাস্তাগুলো।
এ ছাড়া ঝাড়সিংহেশ্বর মৌজার ছয়টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। পরিবারগুলো হলোÑ বাবুল ইসলাম (৩৫), সফিকুল ইসলাম, রহিমা বেওয়া (৭০), চাঁদ মিয়া (৫৫), হাফিজার রহমান (৫০) ও ফরিদুল ইসলাম (৪০)। পরিবারগুলোকে তিস্তার ডান তীর বাঁধে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ছাতুনামার চর, ফরেস্টের চর, সোনাখুলীর চর ও ভেন্ডাবাড়ি চরে দেড় হাজার পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে সাতটি পরিবারের বসতঘর হুমকিতে পড়ায় তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, তার এলাকার দক্ষিণ খড়িবাড়ি ও পূর্বখড়িবাড়ি মৌজায় তিস্তার বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে তা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাট জেলার ২০ হাজার মানুষ। বন্যার সাথে যুক্ত হয়েছে নদীভাঙন। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন নদী তীরবর্তী মানুষজন।
তিস্তা ব্যারাজের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানি পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটর। যা ছিল বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচে। কয়েক ঘণ্টা পর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে দুপুরে পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পরে ওই দিনই সন্ধ্যায় ৬টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১১সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে খুলে দেয়া হয়েছে ব্যারাজের সব গেট।
অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার রাজপুর, খনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকাসহ ২৫ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সঙ্কট দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এ দিকে তিস্তা গোবর্দ্ধনচর ঘেঁষা স্প্যার বাঁধের ভাটিতে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ১০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা মানুষ বাঁধের উঁচু স্থানে ভাঙা টিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছেন। এ ছাড়া বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের মানুষজন মাচায় চুলা বসিয়ে রান্না করে সেই খাবার খাচ্ছে। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে জেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় বালুর বাঁধের ২০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি রক্ষায় কাজ শুরু করেছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। জরুরি প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও বাঁশের পাইলিং দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করছে লালমনিরহাট পাউবো কর্তৃপক্ষ।
তিস্তা ঘেঁষা মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী জানান, চলতি সপ্তাহে এ ইউনিয়নে মোট ৪৫টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কুটিরপাড় বালুর বাঁধটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে আরো প্রায় ১০টি প্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়বেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি বেড়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় জরুরিভাবে কোথাও প্রয়োজন পড়লে প্রস্তুত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর মেরামতকাজ চলমান রয়েছে। প্রতিনিয়ত ইউএনও, পাউবো কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নদী পাড়ের খোঁজখবর নিয়ে ওই অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদী তীরবর্তী প্রায় ২৫টি ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই নি¤œাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি ওঠায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৩৫ সেন্টিমিটার ধরলায় ৪৬ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দিকে, গত রাত থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার হলো খানার সারোডোব এলাকায় মেরামত করা একটি বাঁধ ভেঙে চারটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি বাঁশের পাইলিংসহ ১০টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ দিকে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের কুমরপুর একটি বেলি সেতু তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নি¤œাঞ্চলে পানি ডুকে পরায় সবজিক্ষেত ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বন্যার পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁই-ছুঁই করছে। বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতে চিনাডুলী, ডেবরাইপেচ ব্রিজ ও সড়ক ভেঙে গেছে। একই সাথে ওই গ্রামের সিরাজ বেপারি, তোতা বেপারি, শাহাজাদা বেপারি, রেজাউল করিম ও লাল মিয়াসহ চারটি পরিবারের বসতভিটা পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। উপজেলা সদরের সাথে দেওয়ানপাড়ার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, চিনাডুলী এসএনসি উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওয়ানপাড়া বালিকা দাখিল মাদরাসায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় ওই তিন প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পাউবো সূত্র জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, গত কয়েক দিনে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এতে উপজেলার নদী বেষ্টিত চরগুলোর নি¤œাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার বসতবাড়ির লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে শত শত একর ফসলি জমি, পাট, পটোল, কাঁচামরিচ ও শাকসবজির ক্ষেতসহ সদ্য রোপণকৃত বীজতলা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-এক দিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে পাউবো ধারণা করছে। এ দিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, রতনপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, জিয়াডাঙ্গা, ফুলছড়ি ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, উজালডাঙ্গা, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী, সন্যাসীর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামাণিক জানান, নি¤œাঞ্চলের বেশ কিছু বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। পানি বৃদ্ধি সাথে সাথে গত এক সপ্তাহে ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ১০০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।