৭ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৫

বিমানের সিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা এবারও

হজ ফ্লাইট নিয়ে এবারও সিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো এখনও ফ্লাইট বুকিং নিশ্চিত না করায় সিডিউল করতে পারছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দু'বার জরুরি নোটিশ জারি করে এবং জরিমানা আদায়ের ঘোষণা দিয়েও লাভ হয়নি। এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালির কারণে এবারের হজ মৌসুমেও লোকসান এবং ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, হজ ফ্লাইট পরিচালনা বিমানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ও বিমান কর্তৃপক্ষ হজ ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও কিছু এজেন্সির কারণে হজ ফ্লাইট ও সিডিউল ঠিক রাখতে সমস্যা হয়।

দুই দফা জরুরি নোটিশ জারি করে এবং জরিমানার ঘোষণা দেওয়ার পরও এজেন্সিগুলো ফ্লাইট বুকিং নিশ্চিত করছে না।

অতি মুনাফালোভী কিছু এজেন্সির কারণে গত হজ মৌসুমে বিরাট ধকল গেছে বিমানের। নির্ধারিত সময়ে হজযাত্রী সংকটের কারণে ৩৪টি ফ্লাইট বাতিল এবং ১০টির সিডিউল পরিবর্তন করতে হয়েছে। অধিকাংশ ফ্লাইট ছেড়ে গেছে যাত্রী ছাড়াই। এ ছাড়া বিলম্বিত ফ্লাইটের কারণে ১০ লাখ রিয়াল জরিমানাও গুনতে হয়েছে।

সেই বাজে অভিজ্ঞতার আলোকে এবার হজ ফ্লাইট পরিচালনায় কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। এজেন্সিগুলোকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিকিট টাকার নির্দেশনা দিয়ে গত বুধবার জরুরি নোটিশ জারি করা হয়। এর আগে ২০ মে আরও একটি নোটিশ জারি করা হয়। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানকে অনুমতি দেয়নি সৌদি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই হজ ফ্লাইটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য ১০০ এবং বাতিলের জন্য ২০০ ডলার জরিমানা ঘোষণা করেছে বিমান। নোটিশ এবং ঘোষণার পরও হজ এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিমানের প্রায় ১৫ হাজার ২৫৩টি টিকিট বিক্রি হয়নি। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বরাদ্দ টিকিটের মধ্যে অবিক্রীত রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। এমন পরিস্থিতিতে বিমান ও সৌদিয়া হজ ফ্লাইটের সিডিউল চূড়ান্ত করতে পারছে না।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছর পবিত্র হজে যাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। তাদের মধ্যে ৬৩ হাজার ৬৫১ হজযাত্রী বিমানের ফ্লাইটে সৌদি আরব যাবেন। বাকিরা যাবেন সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে। নির্ধারিত ১৫৫টি হজ ফ্লাইট ও নিয়মিত ৩২টি ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান। হজ পালন শেষে ১৪৩টি ফ্লাইটে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, হজের সময় ফ্লাইট ও সিডিউল বাতিল কিংবা উড়োজাহাজ বিকল হলে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ফ্লাইটে কাটছাঁট করতে হবে। নির্বাচনের বছরে হজযাত্রী পরিবহনে সমস্যা হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বিমানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এবার কাজ করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইফতেখার আলম সমকালকে বলেন, কয়েক দফায় সৌদি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি (স্লট বরাদ্দ) চেয়ে আবেদন করেও নতুন করে স্লট বরাদ্দ পায়নি বিমান। ফলে এবারও গত বছরের মতো হজ ফ্লাইটের সিডিউল বিপর্যয় ঘটতে পারে। জরুরি কারণে হজ ফ্লাইট স্বাভাবিক রাখতে গেলে বিমানের নিয়মিত রুট কাটছাঁট করতে হবে। এতে বিমানের সামগ্রিক সিডিউল হযবরল হবে। সাধারণ ও হজযাত্রীরা ভোগান্তি পোহাবেন।

হজ এজেন্সিগুলো বলছে, অতি মুনাফালোভী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৌদিতে বাড়ি ভাড়া নেয়নি এবং সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করেনি। তাই তারা টিকিট কাটতে দেরি করছে। একইসঙ্গে দুদকের চলমান অভিযানের কারণে গা-ঢাকা দিয়েছে অনিয়মকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতিগ্রস্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত কয়েকটি এজেন্সি হজ ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের পর টিকিট নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

দুশ্চিন্তা থাকলেও হজ ফ্লাইট নির্বিঘ্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, হজযাত্রীরা বিনা দুর্ভোগে বিমানে আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

এবার বিমান নিজস্ব উড়োজাহাজে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। হজ মৌসুমে নিয়মিত ফ্লাইট সিডিউল ঠিক রাখতে তিনটি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশের হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৪ জুলাই এবং ফ্লাইট শেষ হবে ১৪ আগস্ট। হজ শেষে ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরব থেকে ফ্লাইট শুরু হবে ২৭ আগস্ট, হজ ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। 

http://samakal.com/bangladesh/article/1807371/