৫ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১১

বিদায়ী অর্থবছরেও অর্জিত হয়নি রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা

সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে পোশাক খাতের ওপর ভর করে আয়ে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলে তা লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ দূরে। গত অর্থবছরে রফতানি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। আর আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম। আর অর্থের পরিমাণে দাঁড়ায় আট কোটি ৩১ লাখ ডলার। এদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে ধস নেমেছে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় ছিল মোট তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম। বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একক মাস হিসাবে জুনে রফতানি আয়ে ব্যাপকভাবে হোঁচট খেয়েছে। এ মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, কমেছে প্রবৃদ্ধিও। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, একক মাস হিসাবে জুনে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ৩৬২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ সময়ে রফতানি আয় হয়েছে ২৯৩ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ কম অর্জিত হয়েছে।
তৈরি পোশাক ছাড়া আর অন্য প্রায় সব খাতেই রফতানি আয়ে পিছিয়ে পড়েছে দেশ। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যান্য পণ্যের মধ্যে গত অর্থবছর হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ সময় আয় এসেছে ৮৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সার্বিক রফতানি আয় বাড়লেও তা মূলত পোশাক খাতনির্ভর। এ খাতে গত বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে ধস নেমেছে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কম হয়েছে ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ কম হয়েছে। আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে কৃষি পণ্য রপ্তানি ২২ শতাংশ বাড়লেও চা রফতানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। শাকসব্জি রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া গেল বছর প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে নয় কোটি ৮৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম।
এদিকে পোশাক রফতানি আয়ে দেখা গেছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তৈরি পোশাক রফতানি থেকে তিন হাজার ৬১ কোটি ৪৭ (৩০.৬১ বিলিয়ন) ডলারের আয় হয়েছে, যা মোট রফতানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে এক হাজার ৫১৯ কোটি ডলার এবং উভেন পোশাক রফতানিতে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ডলার।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানার দিকে হাঁটছি। ফলে রফতানিতে খুব সন্তোষজনক কিছু অর্জন করা যাচ্ছে না। রফতানি আয়ে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হলেও প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের চেয়েও এগিয়ে গেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। তিনি বলেন, গত দুই বছরে গ্যাস সংকটসহ নানাবিধ কারণে আমাদের পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থায় সরকারকে আরও সহযোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রফতানির নতুন নতুন বাজার উদ্ভাবন করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে একটি শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের দেশের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে রফতানি বাড়াতে হবে।

http://www.dailysangram.com/post/336607-