রাজধানীতে ছিল তীব্র যানজট। দৃশ্যটি প্রেসক্লাবের সামনের সড়কের -ইনকিলাব
৫ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৮

রাজধানীজুড়ে যানজট ভোগান্তি

রাজধানীতে যানজটের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে শুরু করে বিকাল পর্যন্ত ব্যস্ত এলাকাগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি আটকে ছিল। দিনের প্রথমভাগে প্রচÐ গরমে মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিকালে বৃষ্টির কারনে আবার শুরু হয় অন্যরকম ভোগান্তি। মিরপুর, আগারগাঁও, মালিবাগ, নিউমার্কেটসহ কিছু কিছু এলাকার রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর যানজট আবার ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীর প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, হাতিরপুল, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানজটের স্থায়িত্ব ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে দুপুরে শাহবাগ মোড়ে পরিচালিত হয় মোবাইল কোর্ট। সে কারনে শাহবাগ মোড়ে যানজটের ভয়াবহতা আরও বাড়ে। কমলাপুরের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, তিনি দুপুরের পর পান্থপথে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে ওঠেন। শাহবাগ থেকে বাংলামোটর হয়ে সোনারগাঁও মোড় হয়ে ফার্মগেইট পর্যন্ত তখন ভয়াবহ যানজট। গাড়িগুলো নড়তেই চায় না। পল্টন থেকে শাহবাগ মোড় পার হতেই কেটে যায় প্রায় এক ঘণ্টা। এক পর্যায়ে তিনি বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা করেন। কাজ শেষে বিকালে আবার একইভাবে পায়ে হেঁটে ফিরেছেন। মিরপুরের বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকার কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি থইথই করে। শহরে বিভিন্ন সংস্থার কাটাকাটিতে স্থানে স্থানে রাস্তাগুলো এমনিতেই সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। চলাচলের অংশ আরো সংর্কীর্ণ হয়ে যায় বৃষ্টির পানিতে। এসব কারনে যানজটের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই। সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটের বলাকা পরিবহন বাসের চালক মিলন বলেন, প্রতিদিনই ঢাকায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যানজটের কারনে গড়ে তিদন ট্রিপে এক ট্রিপ হয়। এতে করে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের পরিশ্রমও বেড়েছে কয়েক গুণ। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) এক কর্মকর্তা বলেন, হঠাৎ পানি জমে যাওয়ায় ঢাকা শহরে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের অংশ ৮০ শতাংশ কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো পানির মধ্যে চলতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। এসব কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই কর্মকর্তা জানান, ভিআইপি মুভমেন্টের জন্য বিমানবন্দর সড়কে একদিকের যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। একবার রাস্তার যানবাহন থমকে গেলে যে চাপ সৃষ্টি হয় তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে গতকাল বিকালের পর থেকে ভয়াবহ যানজট ছিল আগারগাঁও, উড়োজাহাজ মোড়, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, শান্তিনগর, মগবাজার, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, পুরান ঢাকার আলুপট্টি, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড়, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরী, এলিফ্যান্ট রোডসহ অধিকাংশ এলাকায়। কোনো কোনো এলাকায় ঘন্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় যাত্রীরা পায়ে হেঁটে চলতে বাধ্য হয়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, মতিঝিলে অফিস করে মিরপুরে ফিরতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। বৃষ্টির কারণে যানজট যেমন ছিল তেমনি যানবাহনের সঙ্কটও ছিল ভয়াবহ। বহু মানুষ গাড়ির অভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি জানান, মতিঝিল থেকে ছাড়ার পর তাকে বহনকারী বাসটি মোড়ে মোড়ে গড়ে ২০ মিনিট করে আটকে ছিল।
রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রণীত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা-এসটিপিতে ৫৪টি নতুন সড়ক, তিনটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি ও তিনটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি (মেট্রো রেল) চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একটি বিআরটি ও একটি এমআরটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেল স্থাপনের জন্য প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১৯ সালের মধ্যে মেট্রো রেলের একটি অংশ চালু করার কথা রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ত হলে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/139834/