৩ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৫৬

তিস্তা নদীতে পানিবৃদ্ধি ॥ ভাঙন ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

প্রবল বর্ষণ এবং সীমান্তের ওপার থেকে উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙনসহ অন্তঃত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে চরাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এতে উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহ, জয়রাম ওঝা, চর ইশোরকোল, চল্লিশশাল, গান্নারপাড়, বাঁধেরপাড়, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর, চিলাখাল, আলমবিদিতর ইউনিয়নের হাজীপাড়া, ব্যাংকপাড়া, নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চর নোহালী, মর্ণেয়া ইউনিয়নের ছোট রুপাই, কামদেব, রামদেব, নরসিংহ, গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক ও রমাকান্তসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। পানিবন্দী পরিবারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তাদের হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভেঙে গেছে ব্রিজ, রাস্তা ও জমি-জমা গাছপালা। এলাকাবাসী গাছ-বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। গত কয়েকদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির প্রবল স্রোতে উপজেলার লক্ষীটারী ও কোলকোন্দ ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়ার চরের আনোয়ার, গুটলু, ফুলু, দয়াল, বল্টু ও লক্ষীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইচলীর শত শত পরিবারের ৩০ হাজার মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়েছে। তাঁদের বাড়ি-ঘর, গাছপালা, জমি-জমা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বিনবিনায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল আনন্দলোক বিদ্যালয়, সাউদপাড়া ইসলামীয় আলীম মাদরাসা হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া পুরাতন শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ভাঙন লেগেছে। যেকোন সময় দ্বিতল ভবনের এ বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যেতে পারে। শংকরদহ বিদ্যালয়ের পাশের মসজিদটি তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। সাঊদপাড়া মাদরাসা, আনন্দোলোক বিদ্যালয়, শংকরদহ চরের, জোড়া ব্রিজ, মহিপুর থেকে কাকিনা সড়ক শংকরদহ বিদ্যালয়ের পাশে ব্রিজের দুই পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেকে ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ সব এলাকার লোকজন আতঙ্কে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। তারা ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে বাঁশ, গাছ ও বালুর বস্তা ফেলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ সব প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা যাবেনা বলে স্থানীয়রা জানান। লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানা, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি কর্তৃপক্ষেকে অবহিত করা হয়েছে। শংকরদহ বিদ্যালয় রক্ষার জন্য রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিত্বে কাজ শুরু করবে।
বন্যা কবলিত এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, চরের বাড়িগুলোর চারপাশে শুধু পানি আর পানি। আকস্মিক ভাবে আসা পানির স্রোতে বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পশ্চিম ইচলী গ্রামে রোকজন কলার ভেলায় করে যাতায়াত করছে। ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঝুঁকির মুখে পড়েছে মহিপুর -কাকিনা সংযোগ সড়ক।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু জানান, শুধু তাঁর ইউনিয়নেই ১ হাজার ৬শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বর্ন্যাত মানুষরা জানান, সাঊদ পাড়া এলাকায় একটি উপবাঁধ ভেঙে গেছে । নোহালী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম টিটু জানান, চর নোহালী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। তাঁর ইউনিয়নে ২৫০টি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে বলে তিনি জানান। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, ঐ এলাকায় ৩টি পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কোথাও কোথাও ভাঙ্গনও আছে। গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এনামুল কবির জানান, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণের মাধ্যমে চর অঞ্চলের পানি বন্দি পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যা কবলিতদের সরকারীভাবে সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ দেয়া হবে। রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব জানান, পানিবন্দি এসব পরিবারকে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

 

http://www.dailysangram.com/post/336359-