এটি রাজধানীতে প্রবেশ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার পাশের দৃশ্
৩ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৪৪

আলোর নিচে অন্ধকার

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ও বঙ্গ ভবনের পাশের সড়ক দু’টির অবস্থা বেহাল। সংস্কারের অভাবে এ সড়কগুলো বহুদিন ধরে যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। বিশেষ করে বঙ্গ ভবনের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের সড়ক দুটি দিয়ে যাতায়াত না করলে বোঝা যাবে না যে কতটা বেহাল এ দু’টি সড়কের। কাপ্তানবাজারের কাঁচা বাজার ও মুরগী পট্টির ময়লা আবর্জনা ফ্লাইওভারের নিচে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। বঙ্গ ভবনের দক্ষিণ পাশে স্থাপন করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা সংরক্ষণের স্থান সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। এ ছাড়াও কাপ্তান বাজার থেকে রাজধানী সুপার মার্কেট পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের পুরাটাই ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে আছে। এ এক কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লার এসটিএসসহ অন্তত তিনটি ময়লার কন্টেইনার বসানো হয়েছে। যে কারণে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ বঙ্গ ভবন থেকেও। বঙ্গ ভবনের দক্ষিণ পাশে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়সহ মুরগী, ছাগল, কবুতর ও কাঁচা বাজার থাকায় এর দুর্গন্ধ দক্ষিণ হাওয়ায় মিশে বঙ্গ ভবনে যাচ্ছে। ময়লার দুর্গন্ধে বঙ্গ ভবনেও টেকা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত বর্জ্য প্রধান কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গ ভবনে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে এসেছেন বলে জানা গেছে। যে কারণে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কসহ বঙ্গ ভবনের পাশের দু’টি সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ জন্য প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ সড়ক দিয়ে যাতায়তকারী নগরবাসী ও যানবাহন চালকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বঙ্গ ভবনের দক্ষিণ পাশে মুরগী পট্টি, কবুতর, ছাগলের হাট ও কাঁচা বাজারের ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে বঙ্গ ভবনে যাচ্ছে। এ ছাড়াও বঙ্গ ভবনের পাশেই সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লা সংরক্ষণের স্থান (এসটিএস) রয়েছে। এ থেকেও দুর্গন্ধ বঙ্গ ভবনে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমরা গতকাল বঙ্গ ভবনের কর্মকর্তাদের সাথে বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই এলাকা থেকে এসটিএস দ্রæততম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়াও মুরগী পট্টি, কবুতর ও ছাগলের বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকান ও ফ্লাইওভারের আশপাশের দোকান উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মেয়রের পক্ষ থেকে ডিএসসিসি’র সম্পত্তি বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ ও বর্জ্য বিভাগকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হানিফ ফ্লাইওভার যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেই চানখারপুল থেকেই সড়কের বেহাল অবস্থ। এখানে ফ্লাইওভারের জন্য পৃথক লেন থাকলেও সেটা স্থানীয় যানবাহনই ব্যবহার করছে। চানখারপুল চৌরাস্তা থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে রয়েছে অবৈধ দখলদার। গুলিস্তান এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে মুরগির খাঁচা রাখা হয়। এ মুরগিপট্টির আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মরা হাস, মুরগি, কবুতর ও এদের বিষ্ঠা। কোথাও গরু ছাগলের নাড়ি-ভুড়ি, রক্ত ও হাস মুরগির লোমসহ নাড়ি-ভুড়ি ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কাপ্তানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী বেলাল বলেন, ফ্লাইওভারের নিচটা এমনিতেই নোংরা, অব্যবহৃত পড়ে থাকে। তাই আমরা সাময়িক সময়ের জন্য সেখানে মুরগির খাঁচা রাখি। এটি পরিষ্কার হয়ে গেলে কেউ আর এখানে ময়লা আবর্জনা ও মুরগির খাঁচা রাখবে না।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, চানখাঁরপুল থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের প্রায় ৬০ ভাগ অবৈধ দখলে চলে গেছে। এছাড়া অবৈধভাবে সড়কে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। রোড ডিভাইডারের সবুজায়ন করার কথা থাকলেও সেখানে দখলদাররা হোটেল, দোকানপাট গড়ে বাণিজ্য করছেন। ডিএসসিসি হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন অংশের এ বেহাল দশা হলেও সেদিকে কারও কোনো দৃষ্টি নেই। ফ্লাইওভারের চানখাঁরপুল অংশে সড়কে ঘোড়া বেঁধে রাখতেও দেখা গেছে। গুলিস্তান এলাকার হকার দখলমুক্ত করার জন্য ডিএসসিসি বাহবা নিলেও সেসব হকাররা পুনরায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কসহ আশপাশের সড়ক দখল করে নিয়েছে। এসব দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন ইনকিলাববে বলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের কোথায়ও এখন আর ভাঙ্গাচুরা নেই। শুধু মাত্র জয়কালি মন্দিরের সামনে ভুমি অফিসের পাশের সড়কের সামান্য অংশের কাজ বাকি রয়েছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে সে কাজাও শেষ করা হবে। তিনি বলেন, সড়কটির সংস্কারের কাজ আমরা গত প্রায় তিন মাস আগে শেষ করেছি। যেহেতু এখন বর্ষাকাল সেহেতু হয়তো কোথায় যদি বিটুমিন উঠে যায় তাহলে আমরা তা মেরামত করে দিব। তবে আমার জানা মতে সড়কটির কোথায়ও এখন আর ভাঙ্গা-চুরা নেই।

https://www.dailyinqilab.com/article/139484/