১ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১৪

চট্টগ্রামে ভুল চিকিৎসায় শিশু রাইফার মৃত্যু

অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ * আটক চিকিৎসককে ছাড়িয়ে নিয়েছে বিএমএ

নগরীর মেহেদীবাগে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে সাংবাদিক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা মারা যায়। এতে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সংবাদিকরা। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসককে পুলিশ আটক করলেও থানা থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন বিএমএ নেতারা। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস।



গলায় ব্যথা অনুভব করায় রাইফাকে বৃহস্পতিবার ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাকে দুই দফায় এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় সে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়ে। এরপর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তাকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়। এর দুই ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে রাইফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই চট্টগ্রামের সাংবাদিক নেতারা ম্যাক্স হাসপাতালে ছুটে যান। অভিযোগ পেয়ে রাতেই অভিযুক্ত চিকিৎসকসহ তিনজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু বিএমএ নেতারা থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেন। এ সময় বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল সাংবাদিকদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন।

বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খান যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান রাইফার গলায় সামান্য ইনফেকশন আছে। ভর্তির পর রাতে তাকে স্যালাইনের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এতে সে প্রচণ্ড ঘেমে যায়। স্যালাইন টেনে খুলে ফেলতে চায় সে। সঙ্গে সঙ্গে জানানোর পরও চিকিৎসক কোনো গুরুত্ব দেননি। পরদিন দুপুরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিধান বড়–য়া আগের ওষুধগুলো বহাল রেখে নতুন ইনজেকশন দিয়ে চলে যান। শুক্রবার রাতে দ্বিতীয় দফা এন্টিবায়োটিক দেয়ার পর রাইফার প্রচণ্ড খিঁচুনি শুরু হয়। তীব্র ব্যথায় সে দাঁত ও ঠোঁট কামড়াতে থাকে। একপর্যায়ে দাঁত ভেঙে রক্ত বের হতে থাকে। ডা. বিধানকে ফোন করে পরামর্শ চাইলে তিনি সেডিল নামে ঘুমের ইনজেকশন দিতে বলেন। এই ইনজেকশন দেয়ার পরপরই রাইফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তিনি বলেন, ‘যারা আমার কোল থেকে মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই।’ শনিবার দুপুরে নগরীর গরীবুল্লাহ শাহ মাজার মসজিদ এলাকায় জানাজা শেষে সেখানে রাইফার লাশ দাফন করা হয়।

চিকিৎসকসহ তিনজনকে থানায় নেয়া হলে বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবালের নেতৃত্বে কয়েকজন চিকিৎসক সেখানে গিয়ে বলেন, ভুল হতেই পারে। তাই বলে চিকিৎসককে আটকে রাখা যাবে না। এ সময় চিকিৎসক বিধানসহ তিনজনকে তারা ছাড়িয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ সঠিক নয়। শিশুটি সুস্থই ছিল। কিন্তু হঠাৎ প্রচণ্ড খিঁচুনিতে তার দাঁত ভেঙে যায় এবং রক্ত বের হয়। এটা কেন হয়েছিল, তা বুঝতে পারছি না।



চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, ম্যাক্স হাসপাতালের ঘটনায় এক চিকিৎসকসহ তিনজনকে থানায় আনা হয়। পরে সাংবাদিক ও চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটিতে জেলা সিভিল সার্জন, সাংবাদিক ও পুলিশের প্রতিনিধি থাকবেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চিকিৎসায় কোনো অবহেলা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার কাগজটি পেলে কমিটি গঠন করব। ভুল চিকিৎসা বা অবহেলা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে।

ভুল চিকিৎসায় রাইফার মৃত্যুর প্রতিবাদে শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিউজের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাংবাদিক নেতা আবদুল জলিল ভূঁইয়া, জাকারিয়া কাজল, মধুসূদন মণ্ডল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সিউজে সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এবং রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান বক্তব্য রাখেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর শোক : সাংবাদিকের মেয়ে রাইফার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, শিশু রাইফার মৃত্যুতে আমি গভীর মর্মাহত, শোকাহত। এমন মৃত্যু সহজে মেনে নেয়া যায় না। তদন্তে কোনো অবহেলা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাইফার আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি গভীর সমবেদনা জানান।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/65024