ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
১ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১৩

অনির্দিষ্টকালের অবরোধ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

আজ ঢাবি ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কাল থেকে অবরোধ * গ্রন্থাগারে ঢুকে আন্দোলনকারীদের খুঁজে খুঁজে মারধর * শিক্ষককে লাঞ্ছনা * নেতাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শনিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া শাহবাগে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে হামলা হয়। দুই গ্রন্থাগারে ঢুকে আন্দোলনকারীদের খুঁজে খুঁজে এনে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় লাঞ্ছিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকও। এলোপাতাড়ি মারধরের কারণে আন্দোলনকারীদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩-৪ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও দলবল নিয়ে মহড়া দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।



আন্দোলনকারীরা বলছেন, ছাত্রলীগ এ হামলা চালিয়েছে। আন্দোলনকারীদের এক যুগ্ম আহ্বায়কে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ অজ্ঞাত স্থানে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ছাত্রলীগ বলছে, আন্দোলনকারীদের একটি গ্রুপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সাধারণ ছাত্ররা তাদের প্রতিহত করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সোমবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছেন। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালিত হবে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা এ হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বেলা ১১টায় সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। যেহেতু ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হবে না। সোমবার সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। পাশাপাশি সেদিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবরোধ তথা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালিত হবে।’

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বেলা ১১টায় কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আসেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ও কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে থেকেই আন্দোলনস্থলে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। তারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, কার্জন হল, সায়েন্স লাইব্রেরি, পাবলিক লাইব্রেরি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করে। আন্দোলনকারীরা লাইব্রেরির সামনে এলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কয়েকজনকে মারধর করতে করতে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংবাদ সম্মেলনের জন্য পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান ও নুরুল হক নূর গ্রন্থাগারের সামনে ছিলেন। ছাত্রলীগ শুরুতে তাদের ওপর হামলা করে। তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বড় অংশই নূরকে মারধরে ব্যস্ত ছিল। ফলে হাসান আল মামুন ও ফারুক হাসান ওই স্থান থেকে সরে পড়েন। এ সময় নুরুকে মাটিতে ফেলে বেদম পেটাতে দেখা যায়। শুরুতে ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী তাকে মারতে থাকেন। মারধরে নুরু কয়েকবার লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক এবং তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এসএম জাবেদ আহমেদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাবেদ আহমেদ যখন ঘটনাস্থলে আসেন তখন তিনি সবাইকে শান্ত হতে বলেন। নুরুর অবস্থা গুরুতর দেখে তার সঙ্গে লাইব্রেরির অন্য দুই কর্মচারীও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করতে যান। তখন নুরু জাবেদ আহমদের পা জড়িয়ে ধরেন। তখন কিছুটা শান্ত হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এ মারধরের ঘটনা। এরপর গুরুতর অবস্থায় নুরুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর লাইব্রেরির প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক জাবেদ বলেন, ‘আমার এখন পদত্যাগ করা উচিত।’ তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা মন্তব্য জানতে গেলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ফের গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে চাইলে অধ্যাপক জাভেদ আহমেদ বলেন, ‘প্লিজ, আপনারা এখন যান। লাইব্রেরি ছাত্রদের পড়াশোনার জায়গা। তাদের পড়াশোনার পরিবেশটা ঠিক রাখতে দিন।’



এদিকে নুরুকে মারধরের পরেও লাইব্রেরির সামনে থেকে সরে যাননি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে হইহুল্লোড় করে এবং সেলফি তোলে। একটি অংশ লাইব্রেরিতে ঢুকে আন্দোলনকারীদের খুঁজতে থাকে। পরে দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের আরেক নেতা সূর্যসেন হল শাখার আহ্বায়ক এবং বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরশ গ্রন্থাগার থেকে বের হলে তাকেও মারধর করা হয়। এতে অংশ নেন ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের বেশ কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। লাইব্রেরির মূল ফটকে থেকে মারতে মারতে তাকে লাইব্রেরির দক্ষিণ পাশে সাইকেল স্ট্যান্ডের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাকে উপর্যুপরি মারধর করা হয়। এ সময় তার চিৎকারে চারদিকে মানুষ জমে যায়। মারধরে তার শরীরে মারত্মক জখম হয়। ১০-১৫ মিনিট ধরে মারধরের পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে একটি রিকশায় তুলে দেন। পরে চিকিৎসার জন্য তাকেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগের গণগ্রন্থাগারের ভেতরে প্রবেশ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের খুঁজতে থাকে ছাত্রলীগ। এ সময় তারা গ্রন্থাগারের প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালায়। তালা লাগানোর চেষ্টা করে প্রধান ফটকগুলোয়। এতে গ্রন্থাগারে অধ্যয়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহজনক মনে হলেই বাইরে টেনে এনে মারধর করে ছাত্রলীগ। এমনকি গ্রন্থাগারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের খুঁজে দিতে বাধ্য করে ছাত্রলীগ। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলতে থাকা এ হামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৫-৬ জনকে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন আকাশ নামে একজনের অবস্থা গুরুতর। আহত অবস্থায় শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হলে পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, সহসভাপতি রুহুল আমিন, কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, ঢাবির এসএম হলের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, বিজয় একাত্তর হলের সাবেক সভাপতি শেখ ইনানসহ ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী।



অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের এক নেতাকে হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। তার বক্তব্য, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল থেকে পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমানকে ছাত্রলীগের কয়েকজন তুলে নিয়ে গেছেন। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় তাদের ১২-১৩ জন কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক, আতাউল্লাহ, আরিফ, মামুন ও জসিম রয়েছেন। হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর পিস্তল ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়। আমরা তাদের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি।’

এদিকে বিকাল সাড়ে ৩টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে অবরুদ্ধ আন্দোলনের আহ্বায়ক মামুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, শনিবার ১০টা ৪৫ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এ সময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের কয়েকশ নেতাকর্মী আমি, নূর ও ফারুকের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে আমি ও ফারুক সেখান থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছিলাম। নূরকে এত বেশি মারধর করা হয়েছে যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। নূরের অবস্থা সংকটাপন্ন। মারধরে গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলেও জানায় মামুন।

হাসপাতালে মহড়া : এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অন্য আন্দোলনকারীদের সেখানে খুঁজতে থাকেন তারা। তারা ইমার্জেন্সি বিভাগ ও তার আশপাশের বিভিন্ন কক্ষে মহড়া দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ ও ফারুককে খোঁজেন তারা। এদের মধ্যে ঢাবির জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ লিমন, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পিয়াল হাসানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মেডিকেলে নতুন ভবনের দিকে যায়। সর্বশেষ সেখানে কাউকে না পেয়ে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় সেখানে ছাত্রলীগের ৭-৮ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা গেছে।

মোটরসাইকেল ভাংচুর : এছাড়া বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। তবে মোটরসাইকেলটি কার, তা জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হতে দেখা গেছে।



এদিকে এক ফেসবুক লাইভে রাশেদ জানান, ঝিনাইদহে থাকা তার বাবাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া তার বাড়িতে গিয়ে ঝিনাইদাহ জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হুমকিধমকি দিয়ে এসেছেন। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আমাকে অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে বারবার বলা হচ্ছে, আমি আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, আন্দোলনকারী, আপনি কই? তারা আমাকে এভাবে খুঁজতেছে।’ বেলা ৩টার দিকে দেয়া আরেক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আমি অনলাইনে একটিভ না থাকলে বুঝবেন, আমি গুম হয়েছি। সবাই দোয়া করেন।’

ছাত্রলীগের বক্তব্য : এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ যুগান্তরকে বলেন, তাদের ওপর হামলা করার প্রশ্নই আসে না। নিজেরা নিজেরা মারামারি করে এখন ছাত্রলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে। আর রাশেদের বাবাকে ফোন দিয়ে হুমকি দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই গ্রুপের মারামারি। কিন্তু তাদের কী নিয়ে মারামারি হয়েছে, সেটা আমরা জানি না। তবে তাদের মারধর থামানোর জন্য, ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় একজন সচেতন ছাত্র হিসেবে যে কেউ সেখানে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট ঘোষণার পর যাতে কেউ জল ঘোলা না করে। সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী যুগান্তরকে বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত কিছু নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন বন্ধ, তখন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আমরা লাইব্রেরি খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু সেই সুযোগের অপব্যবহার কখনোই কাম্য নয়। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিতর্কিত করার জন্য করা হচ্ছে। যখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, তখন এ ধরনের আন্দোলন কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবুও আমরা প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়ি দিয়ে তাদের হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেছি।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে আবার ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। ৩ মার্চের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান দাবি করে। সমাধান না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নামেন তারা। এরপর থেকে আট এপ্রিল পর্যন্ত দফায় দফায় চলে আন্দোলন। মাঝে একদিন পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আন্দোলন চলে পরবর্তী কয়েকদিন। এ অবস্থায় ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের আশ্বাস দিলে বাড়ি ফেরেন তারা। এ আন্দোলনকে ঘিরে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পাঁচটি মামলা করেছে পুলিশ। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এখনও প্রজ্ঞাপন আকাড়ে জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছেন তারা। এ সময়ে সরকারকে কয়েক দফায় আলটিমেটামও দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধায়।

ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা ও বিচার দাবি ঢাবি সাদা দলের : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকরা। পাশাপাশি এ হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। শনিবার সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলা এবং অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। গণমাধ্যমে নিষ্ঠুরতার চিত্র দেখে আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা চাই এ হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

ছাত্র ফেডারেশনের বিক্ষোভ- হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের শাস্তি দাবি : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তারা। এরপর সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়।

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজনের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিক রেজা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/65012