১ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:০৪

জাতিসঙ্ঘ-মিয়ানমার গোপন চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা নেই

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। যেখানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও সে দেশে স্বধীনভাবে তাদের চলাফেরার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোনো নিশ্চয়তার কথা বলা হয়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স একে একটি গোপন চুক্তি উল্লেখ করে গতকাল খবর প্রকাশ করে। এ চুক্তির সমালোচনা করেছে মানবাধিকারবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন।
রয়টার্সের ওই রিপোর্টে বলা হয়, মে মাসের শেষের দিকে সম্পাদিত মিয়ানমার ও জাতিসঙ্ঘের ওই খসড়া চুক্তিটি আসলে একটি সমঝোতা স্মারক। কিন্তু এর বিস্তারিত প্রকাশ করা না হলেও অনলাইনে তা পাওয়া যায়। মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো নিয়ে এই সমঝোতা স্মারক হয়।
গত আগস্ট থেকে উচ্ছেদকবলিত রাখাইনে জাতিসঙ্ঘের এজেন্সি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখে মিয়ানমার। সমঝোতা প্রক্রিয়ায় মূল যেসব বিষয়ে দর কষাকষি হয়েছে তার মধ্যে ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও তাদের অধিকার। স্মারকে বলা হয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা ফিরে যাবেন তারা মিয়ানমারের রাখাইনে অন্যান্য জাতির মতো চলাচলের েেত্র একই স্বাধীনতা উপভোগ করবেন। তবে এ েেত্র তাদের সেখানে বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। ফলে ওই সমঝোতা স্মারকে রাখাইনের বাইরে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাচলের কোনো স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়নি। এমন বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের অধীনে রোহিঙ্গাদের অবাধে চলাচল বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তাই শরণার্থী নেতারা ও মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, এই সমঝোতা চুক্তি রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা জাতিগত নিধনের শিকার হয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিয়ানমারের গবেষক লরা হাই বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার অর্থ হলো তাদের বর্ণবাদী বা জাতিবিদ্বেষী একটি রাজ্যে ফেরানো। যেখানে তারা অবাধে চলাচল করতে পারবেন না। স্কুল, হাসপাতাল, কাজ করার েেত্র সুযোগ পাওয়া নিয়ে সংগ্রাম করতে হবে। ফলে এই সমঝোতা স্মারকে এমন কিছুই নেই যা কোনো পরিবর্তন আনতে পারে। এর আগে এই সমঝোতা স্মারককে মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার একটি কাঠামো হিসেবে প্রথম ও প্রয়োজনীয় পদপে হিসেবে আখ্যায়িত করে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর। এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাওয়া হতাই এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী উইন মায়াত আয়িকে অনেকবার ফোন করেন রয়টার্সের সাংবাদিকেরা। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর মেলেনি। তবে শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে উত্তর দেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপ নন।
ওদিকে রয়টার্সের হাতে যে স্মারকের কপি এসেছে তা নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। এ বিষয়ে তাদের সূত্র হিসেবে সহায়তা করেছে দু’টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন। ৩০ মে ওই সমঝোতা স্মারক স্বারিত হয়। রয়টার্স বলছে, এটি স্বারিত হওয়ার আগের দিন লেখা হয়েছে। এ নিয়ে ােভ প্রকাশ করেছে মানবাধিকারবিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপ ও দাতা এজেন্সিগুলো। তারা বলেছে, মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে বড় ধরনের কোনো সুবিধা আদায়ে সফল হয়নি ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি। বিশেষ করে নাগরিকত্ব ও অবাধ চলাচল তার মধ্যে মূল বিষয়। তারা এ চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় কয়েক মাস পার করেছে। এ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের বিষয়ে মন্তব্য করা তাদের উচিত নয়।

এ দিকে সমঝোতা স্মারকে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলোর উল্লেখ না থাকায় ুব্ধ হয়েছেন রোহিঙ্গারাও।
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ বলেন, এই সমঝোতা স্মারকে আমরা ুব্ধ। এখানে রোহিঙ্গা পরিচয়ও ব্যবহার করা হয়নি। বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে অবাধ চলাচলের কথা, যদিও আমাদের জন্য তা খুবই কঠিন। আমরা এই সমঝোতা স্মারক মেনে নিতে পারছি না।
প্রত্যাবাসনের েেত্র রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বেরও নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/329269