৩ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৪

বেপরোয়া কিশোর অপরাধীরা

রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে এ অপরাধীদের হাতে। বেশির ভাগ ঘটনায়ই দুর্বৃত্তরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনো কোনো ঘটনা প্রকাশ্যে শত শত লোকের চোখের সামনে ঘটলেও ধরা পড়ছে না খুনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিশোর অপরাধীরা বিভিন্ন পাড়ামহল্লাভিত্তিক তাদের গ্রæপ গড়ে তুলছে। এ গ্রæপগুলো আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

গত কয়েক দিনে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে কিশোর অপরাধীরা। এর মধ্যে দু’টিই খুনের। যার শিকার হয়েছে কলেজপড়–য়া অপর দুই কিশোর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে কনকর্ড কলেজের গলিতে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় এক কলেজছাত্রকে। রওনক (১৭) নামের ওই কলেজছাত্র আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার বাসা কামরাঙ্গীরচরে। হোলি উৎসবে অংশ নিতে বন্ধু-বান্ধবীসহ তারা মোট আটজন পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার এলাকায় যায়। হোলি খেলার পর তারা ভিক্টোরিয়া পার্কের গলি দিয়ে ফিরছিল। এ সময় ১৫-২০ জন ছেলে রওনককে মারতে মারতে ধরে নিয়ে যায়। কিছু দূর নেয়ার পর দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। দুর্বৃত্তরা চলে গেলে সঙ্গীরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বেশির ভাগই কিশোর। তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা। নিহত রওনকসহ তাদের গ্রæপে কয়েক কিশোরী থাকায় ঘাতক ওই কিশোর গ্রæপটি রওনকের ওপর এ আক্রমণ চালায়।

গত বুধবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর রাকিবুল নামে এক কিশোর তার সহপাঠী ইমরান হোসেন মুন্নাসহ সাত বন্ধু মিলে কাজলায় বেড়াতে যায়। তাদের একজনের বান্ধবীও সাথে ছিল। এ সময় স্থানীয় ১০-১২ জন যুবক তাদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে মুন্না ও রাকিবুলকে। এতে রাকিবুলের ডান পায়ে ও পেটে আর মুন্নার পিঠে ও চোখে ছুরিকাঘাত লাগে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে ভোরে রকিবুল মারা যায়। মুন্না চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, যারা এ খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা এলাকার কিশোর বখাটে হিসেবে পরিচিত। এলাকার অনেক অপরাধের সাথে তারা জড়িত বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

রাজধানীর মানিকনগর পুকুর পাড় এলাকার এক বাসিন্দা গতকাল বলেন, গলিতে গলিতে কিশোর অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ অপরাধীদের জন্য এখন মানুষ ওই এলাকার রাস্তায় নামতেও ভয় পান। পুকুর পাড়ের কয়েকটি স্থানে তাদের আড্ডা বলে স্থানীয় সূত্র বলেছে।
সেগুন বাগিচা এলাকার আশরাফ নামে এক বাসিন্দা বলেছেন, কয়েকটি স্থানে এ কিশোর অপরাধীদের আড্ডা। বিশেষ করে সেগুন বাগিচা স্কুলের গলি, কাঁচাবাজারের পাশের গলি এবং শিল্পকলা একাডেমির উল্টো পাশের গলিগুলোতে তাদের আড্ডা। সম্প্রতি এ এলাকায় এ কিশোর অপরাধীরা একটি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

কাঁঠালবাগান, রাজাবাজার, মহাখালী, নর্দা, শেওড়াবাজার ও কালাচাঁদপুর এলাকার গলিতে গলিতে কিশোর অপরাধীদের আড্ডা। দিন একটু বাড়ার সাথে সাথে এ আড্ডা শুরু হয়, আর চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার এলাকায় প্রায় দেখা যায় পুলিশ ভ্যানের পাশে তাদের আড্ডা চলছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় কিশোর অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে তাদের কাছে খবর আছে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন নামে তারা কর্মকাণ্ড করছে। একাধিক সূত্র বলেছে, এ অপরাধীরা এক সময় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। এ অপরাধীদের মধ্যে নামীদামি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছে বলে তথ্য রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, অপরাধীদের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/298511